ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে জঙ্গি হামলায় ৫০জনের মৃত্যুর পর নিউজিল্যান্ডের মুসলিমদের প্রতি নজিরবিহীনভাবে সংহতি দেখিয়েছিলেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডান। শুধু তাই নয়, সেদেশের সংসদে চিরকালীন প্রথার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন শরিফের বাণী পাঠ করে অধিবেশন শুরু করেছিলেন। সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে আসসালামু আলাইকুম বলে মুসলিমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।
এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। যাতে সাধারণ মানুষের হাতে স্বয়ংক্রিয অস্ত্র না থাকে, তার জন্য সেদেশের অস্ত্র আইনে সংশোধনও এনেছেন। কারণ, ক্রাইস্টচার্চের মুসজিদে হামলাকারী ব্রেন্টন অটোমেটিক মেশিনগান ব্যবহার করে হত্যালীলা চালিয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডান চান না সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক।একের পর এক নানা সংহতি দেখিয়ে জাসিন্ডা সারা পৃথিবীতে নজর কেড়েছেন। সরবশেষ গত শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের মসজিদের জুম্মার নামায সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে সেদেশের টেলিভিশন ও রেডিওতে। ওইদিনটিতে রাষ্ট্রীয় শোক পালনও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মুসলিমদের পরতি সংহতি জানাতে নিজে হাজির হয়েছিলেন ক্রাইস্টচার্চে। সেখানে মুসলিমদের সঙ্গে হিজাব পরে শান্তির আহ্বান জানিয়ে ভাষণ দেন। ওই ভাষণে তিনি মুসলিমদের পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ সা.-এর বাণী তুলে ধরে সেদেশে শান্তি, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের ডাক দেন।
একের পর এক এভাবে নজিরবিহীনভাবে অন্র সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি দেখানোয় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডানকে শান্তি নোবেল পুরস্কার দেওয়ার দাবি উঠেছে। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেই আবেদনে হাজার হাজার মানুষ সাড়া দিচ্ছেন। সবাই বলছেন, এমন একজন ধর্মনিরপেক্ষ দেশনেতার শান্তিতে নোবলে প্রাইজ পাওয়া উচিত।
জাসিন্ডা আরডানকে যাতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন করার হয় তার জন্য ইতিমধ্যে ইন্টারনেটে দুটি পিটিশন করা হয়েছে। একটি পিটিশন করা হয়েছে চেঞ্জ ডট অর্গ (www.change.org)-এ। আরেকটি করা হয়েছে ফরাসি ওয়েবসাইট আভাজ ডট অর্গ (www.avaaz.org)-এ। অনলাইনে এ দুটি পিটিশনে এরই মধ্যে স্বাক্ষর করেছেন হাজার হাজার মানুষ।
দিনচারেক আগে জাসিন্ডাকে নোবেল দেওয়অর আবেদন জানিয়ে পিটিশন নেওয়া শুরু করে চেঞ্জ ডট অর্গ।একদিনে কমপক্ষে ৩০০০ মানুষ স্বাক্ষর করেছেন অনলাইনে। অন্যদিকে ফরাসি সাইট আভাজ ডট অর্গে স্বাক্ষর করেছেন কমপক্ষে ১০০০ মানুষ।
ফরাসি ওয়েবসাইট আভাজ ডট অর্গে লেখা হয়েছে, ক্রাইস্টচার্চে মর্মান্তি ঘটনার পর, উপযুক্ত, উন্মুক্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডানতাতে আগামী শান্তিতে নোবেল পুরস্কার তার হাতেই তুলে দেওয়া দরকার।
ওদিকে শুক্রবার রাতে জাসিনদার প্রশংসা করে নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। এর শিরোনাম ‘আমেরিকা ডিজার্ভস এ লিডার অ্যাজ গুড অ্যাজ জাসিনদা আরডেন’। অর্থাৎ জাসিনদা আরডেনের মতো একজন উত্তম নেতা দাবি করে আমেরিকা। এতে বলা হয়, সন্ত্রাসের বিষয়ে যেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিনদা আরডেন তার কাছ থেকে বিশ্বের শিক্ষা নেয়া উচিত। আরো বলা হয়েছে, আরডেন তার দেশের ওই এলাকার মানুষদের ক্ষোভের কথা শুনেছেন। মাত্র কয়েক দিনের মাথায় তিনি সামরিক ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, এ অস্ত্র নিষিদ্ধ করা হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct