নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৫০ যান নিহত হয়েছে। তা নিয়ে নিন্দা বা দুঃখ জানাবার পরিবর্তে উল্টে মুসলমানদেরকে ‘কুকর্মকারী’ বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ইসলামবিদ্বেষী সিনেটর ফ্রাজার অ্যানিং। তা দেখে সহ্য করতে পারেনি ১৭ বছরের কিশোর উইল কনোলি। সে রাগে ওই সেনেটরের মাথায় এক হাতে ডিম ভেঙে অন্য হাতে মোবাইলে ভিডিও করে। তারপর তা আপলোড করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর পর এখন সে শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, গোটা বিশ্বের ‘হিরো’ হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। তাকে নিয়ে চলছে ব্যাপক হৈচৈ। প্রথম সারির গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ফেসবুক-টুইটারে তাকে ‘হিরো’ বলে সম্বোধন করা হচ্ছে। ইন্টারনেট দুনিয়ায় রীতিমত ভাইরাল উইল কনোলি। তাকে আদর করে এগ বয় বা ‘ডিম বালক’ নামেই ডাকা হচ্ছে। তার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিশ্বের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব ও সেলিব্রেটিরা।
টুইটার ব্যবহারকারী ডেফিলিব্রাটর টুইট করেছেন, ডিম বালক বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, যখন আপনি দমন, ঘৃণা বা অশুভের বিরুদ্ধে দাঁডাবেন, তখন ধর্ম, বয়স বা গোত্র কোন বিষয় নয়। আপনার শুধুমাত্র একটি পবিত্র মন দরকার এবং ডিম বালকের স্বর্ণের তৈরি হৃদয় রয়েছে। কল্যাণ হোক তোমার।
হলিউড অভিনেত্রী চেলসি পেরেত্তি লিখেছেন, কেন ডিম বালক আমাকে এভাবে কাঁদালো? নিউজিল্যান্ডের রক ব্যান্ড আননোন মর্টাল অর্কেস্ট্রা সংক্ষেপে লিখেছে, ডিম বালক আমাদের কাছে প্রেরণা।
ডিম বালক হিসেবে রাতারাতি খ্যাত উইল কনোলি সেনেটরের মাথায় ডিম ভাঙা নিয়ে লিখেছে, ওই মুহূর্তে মানুষ হিসেবে আমি গর্বিত। আপনাদের বলতে চাই, মুসলমানরা সন্ত্রাসী নয়। সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম নেই। যারা মুসলমানদের সন্ত্রাসী সম্প্রদায় মনে করে, তাদের মাথা অ্যানিংয়ের মতোই শূন্য।
তবে কানোলির সমর্থনে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু সংস্থা। সে গ্রেফতার হওয়ায় তার আইনি সহায়তার জন্য এই অর্থ সংগ্রহে নেমেছে চার্জ ডট অর্গ। তারা ইতিমধ্যে অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার অন্তত ৫ লক্ষাধিক মানুষ আবেদন পেয়েছেন ফ্রাজার অ্যানিংকে পার্লামেন্ট থেকে বহিষ্কার করার। প্রায় ১৯ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১৩৫০০ মার্কিন ডলার) জমা পড়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই অর্থ কিশোরের আইনি ব্যয় মেটানো আর ‘আরো বেশি ডিম কেনার’ জন্য ব্যবহৃত হবে।
পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, অনলাইনে নিজেকে ‘এগ বয়’ (ডিম বালক) পরিচয়দানকারী কিশোর সিনেটরের মাথায় ডিম নিক্ষেপের পর সিনেটর তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পরবর্তীতে সিনেটরের অনুসারীরা বালকটিকে ধরে ফেলে। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে সরিয়ে নিয়ে যায় ও মাটিতে ফেলে ধরে রাখে। ডিম নিক্ষেপকারী বালককে চড়-থাপ্পর দেয়ার কারণে মুসলিম বিদ্বেষী সিনেটরকে অভিযুক্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। উইল কনোলি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের বাসিন্দা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct