ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি ‘মদিনা সনদ’ ও হজরত মুহাম্মদ সা.
ইসহাক মাদানি
বিশিষ্ট স্কলার ও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য
হজরত মুহাম্মদ সা.-এর জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে, মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল মতান্তরে ৯ রবিউল আউয়াল সোমবার। মৃত্যু: ৮ জুন ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল ১১ হিজরি সোমবার মদিনায় ইহলৌকিক জীবনকে আলবিদা জানান। জীবনকাল: চন্দ্র বৎসর অনুযায়ী পৌনে ৬৩ বছর। সৌর বৎসর অনুযায়ী ৬১ বৎসর। হজরত মুহাম্মদ সা. যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন তখন পিতৃবিয়োগ ঘটে এবং যখন তাঁর বয়স ৬ বৎসর হয় তখন মাতৃবিয়োগ ঘটে। ফলে অনাথ হয়ে বড় হন তিনি। কাগজে কলমে লেখাপড়া শেখার কোনও সুযোগ ঘটেনি জীবনে।
একত্ববাদ আন্দোলনে মোট প্রাণহানি:
তিনি যে একাত্মবাদের আন্দোলন গড়ে তোলেন তাতে মুসলিম অমুসলিম মিলে মোট ১০০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ‘statistic- The total of all casualities on all sides in all battle of Mohammad might be more or less 1000 (Thousand) (www.wikipedia.org. Militery career of Mohammad- wikipedia).
কর্মজীবন: ৬১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেকে স্রষ্টার দূত (রাসূলুল্লাহ সা.) বলে জনসমক্ষে তুলে ধরে ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি বলেন, স্বর্গ ও মর্ত্যের স্রষ্টা বা মালিক একজন, তিনি একক তার কোনও অংশীদার নেই, তাঁর নাম আল্লাহ। দেবদেবীর মূর্তির পূজা অর্চনা এবং জড় পদার্থের পূজা অর্চনা মূল্যহীন। ফলে কাবাঘরে মূর্তি রেখে উহা অপবিত্র করা হয়েছে। এ কাবাঘর একমাত্র আল্লাহর উপাসনার জন্য ৩৭৪০ বৎসর পূর্বে ইবরাহিম নবী এবং ইসমাইল নবী পিতাপুত্র মিলে তৈরি করেন। (মতান্তরে আদম আলাইহিস সালাম তৈরি করেন)।
কে এই ইবরাহিম আ.?
Abraham (Ibrahim) was born in the house of idolaters in teh ancient city of ‘Ur’ of the chaldees, likely the place called ‘Ur’ in present day Iraq in which case the idolaters would have been practitioners of the hypotheized ancient messopotamian religion. His father Azar was a well known idol sculptor that his people worshiped (www. wikipedia.org / Abraham in Islam- wikipedia). In Ibrahims time people practised idolatry. Ibrahim refuse to worship idols and would only worship one God ‘Allah’ (www.bbc.co.uk) It (Quran) states that the kaba was the first house of worship for mankind, and that it was built by Ibrahim and Ismail on Allah’s instructions. (www. wikipedia.org /Kaba wikipedia) Ibrahim born in 1813 BCE (www. wikipedia.org.) Death in 1644 BCE. Life time- 169 yrs, Fathers name : Terah/Azar. God blessed Abraham: Muhammad came from the progery (off spring) of Abraham through Ishmael (promised by God). (www.ohio.edu (Moses, Jesus, Mohammad are descendant.
প্রায় ৩৮০০ বৎসর পূর্বে ইবরাহিম নবী ইরাকে মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে সেখান থেকে বিতাড়িত হন। আশ্রয় নেন ফিলিস্তিনে। অতঃপর মক্কায় এসে তিনি তাঁর পুত্র ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে এক স্রষ্টা আল্লাহর উপাসনার জন্য মুহাম্মদ সা. কাবাঘর তৈরি করেন। কয়েক বৎসর পর তাতে মূর্তি রেখে তা অপবিত্র করা হয়। মুহাম্মদ সা. এ কথা তাঁর স্বগোত্রীয় লোককে বললে মক্কাবাসীরা চরম মাত্রায় তাঁর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। যেহেতু তিনি ছিলেন কাবার পুরোহিত গোত্রের লোক, সেহেতু প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন না হলেও তাঁর মতাদর্শ গ্রহণকারীদের উপর চরম নির্যাতন নেমে আসে। বেত্রাঘাত, গলায় দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে বেড়ানো, তপ্ত বালির উপর ফেলে রাখা, কাঁচা চামড়ায় ও লৌহবর্মে জড়িয়ে রৌদ্রে ফেলে রাখা ইত্যাদি নির্যাতনের শিকার হন তাঁরা। যার ফলে অনেকে মারা যান। (sealed Nector, Ibne Hisham).
মুহাম্মদ সা.-এর মতাদর্শ গ্রহণ না করলেও যে কয়জন স্বগোত্রীয় তাঁর পক্ষে ছিলেন তাদের মৃত্যু ঘটলে, বিরোধী স্বগোত্রীয় ও ভিন গোত্রীয় লোকেরা মিলিতভাবে তাঁর উপর নতুনবাবে দৈহিক নির্যাতন শুরু করেন। মুখে থুতু দেওয়া, গারে চড় মারা, গলায় ফাঁস লাগিয়ে টানা, তাঁর দিকে উট ও ছাগলের পচা ভুঁড়ি নিক্ষেপ করা, গলা ধাক্কা দেওয়া— এ ছিল তাঁর উপর নিত্যদিনের দৈহিক নির্যাতন। মানসিক নির্যাতনের পদ্ধতিও ছিল অভিনব— কেউ বল মুহাম্মদ পাগল, কেউ বলত ওকে ভূতে ধরেছে, কেউ বলত লোকটা আস্ত জাদুগির, কেউ বলত ও তো কবি, ভালই কবিতা শোনাচ্ছে ইত্যাদি। মুহাম্মদ সা. তাঁর কথা কোথাও শোনাতে শুরু করা মাত্র হইচই শোরগোল আরম্ভ হত। মক্কাবাসী নিত্যদিন পাহারা দিত যেন কোনও বহিরাগত তাঁর কথা শেনার সুযোগ না পায়। উক্ত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তিনি মক্কায় তেরো বছর পর করেন। এই ছিল তাঁর কর্মজীবনের প্রথম অধ্যায়। এত কিছুর পরও নিত্যদিন তাঁর দল ভারী হচ্ছে দেখে মক্কার লোকেরা তাঁকে সম্মিলিতভাবে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। মুহাম্মদ সা. তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর সংগোপনে মক্কা ত্যাগ করে ২৩ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় গিয়ে পৌঁছান। শুরু হয় কর্মজীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে মুহাম্মদ সা.
তাঁর কর্মজীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়: মদিনা পৌঁছে তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে একটি সংবিধান তৈরি করেন যা মদিনা সনদ বা মদিনা সংবিধান বা Constitution of Medina বলে খ্যাত। The Constitution of Medina also known as the Charter of Medina was drawn up on behalf of the Islamic prophet Muhammad shortly after his arrival at Medina (then known as Yathrib) in 622 CE following the Hijra from Mecca. (wikipedia) ‘The constitution also established Muhammad as the mediating authority between groups and forbids the waging of war without his authorization. The constitution formed the basis of a multi-religious Islamic state in Medina. (wikipedia) The constitution formed the basis of a multi-religious Islamic state in Medina. The constitution was created to end the bitter intertribal fighting between the rival clans of Banu Aws and Banu Khazraj in Medina and to maintain peace and co-operation among all Medinan groups. “The so called “Constitution of Medina” (hencde forward, “The treaty of prophet Muhammad. It created a new umma or Community, not long after his arrival at Medina (yathrib) in Hijra (622 CE).
Constitution of Medina-বরে ধারা অনুযায়ী:
১. মদিনায় বসতি স্থাপনকারী সকল মুসলমান এবং অমুসলমান মিলে এক উম্মাহ বা জাতিতে পরিণত হবে।
২. মুসলমানদের মতোই অমুসলমানরাও পালন করবে নিজ নিজ ধর্ম।
৩. ইয়াহুদিদের আশ্রিত ও মিত্রগণ ভোগ করবে একই রকম নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা। তবে, অপরাধের শাস্তি দেওয়া হবে।
৪. মদিনার প্রতিরক্ষার শত্রুর বিরুদ্ধে ইয়াহুদি ও অন্যান্যরা মুসলমানদের সঙ্গে এক যোগে কাজ করবে।
উক্ত সনদ বা Constitution মূলে মদিনাবাসী আপন আপন সত্তা বজায় রেখে এক মহাজাতিতে পরিণত হল। ওদিকে মক্কার অধিবাসীরা মুহাম্মদ সা.-কে মক্কা থেকে তাড়িয়ে ক্ষান্ত থাকেননি। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রায় এক হাজার সৈন্য নিয়ে মুহাম্মদ সা.-কে শায়েস্তা করতে রওনা দিলে ‘বদর’ প্রান্তরে মুহাম্মদ সা.-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে ওদের মুকাবিলা হয়। তাতে মুসলিমরা সংখ্যায় কম থাকলেও জয়ী হন। মক্কাবাসী পরাজিত হন। ৭০জন মক্কাবাসী নিহত হন এবং ৭০জন বন্দি হন। মুসলমানদের ক্ষয়ক্ষতি খুব সামান্য হয়। বন্দিরা সকলেই ছিলেন মুখ চেনা নির্যাতনকারী। সে সময় যুদ্ধবন্দিদেরকে হত্যার আম রেওয়াজ থাকলেও মুহাম্মদ সা. সে পথে হাঁটেননি। বরং, বন্দিদের দুই পদ্ধতিতে মুক্তি দেন।
১. যে লেখাপড়া জানে সে দশজন মুসলিম ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখালেই মুক্ত হবে। লেখাপড়া শেখানোটাই তার মুক্তিপণ।
২. ধার্য অর্থ মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত হবে। এছাড়া, চারজন বন্দিকে তাদের আর্থিক দুরবস্থার কারণে বিনাপণে মুক্তি দেওয়া হয়। বন্দিদেরে ব্যাপারে মুহাম্মদ সা. তাঁর অনুগামীদের আল্লাহর উপদেশ বাণী শোনালেন (স্বর্গসুখ ওরাই ভোগ করবে)— ‘যারা নিঃস্বকে, অনাথকে এবং যুদ্ধবন্দিবে প্রেমপ্রীতির সহিত আহার করাবে।’
‘Islamic law holds that the prisoners must be fed and clothed, either by the Islamic government or by the individual who has custody of the prisoner. This position is supported by the verse [Quran 76:8] of the Quran. (wikipedia) (Note: এটা prisoner of war সম্বন্ধে Geneva Convention এর ১৩ শত বৎসর পূর্বে ইসলামি বিধান। Geneva Convention-এ বলা হয়েছে: ‘Prisoners of war must be at all times be humanely treated’ (wikipedia.org). বদর যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের ফলে মক্কাবাসী অধিক মাত্রায় প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠেন। পরের বৎসর ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে ৪৩০ কিমি পাড়ি দিয়ে মক্কাবাসী আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে তিন হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনার দ্বারগোড়ায় ওহুদ প্রান্তরে উপস্থিত হলে মুহাম্মদ সা. মাত্রা সাত শত সৈন্য নিয়ে ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। যুদ্ধে পরাজয় ঘটে এবং তাতে ৭০জন মুসলিম সৈন্য শহীদ হন। তিনি নিজেও চরমমাত্রায় আগত হয়ে এক সময় জ্ঞান হারান। শুশ্রুষার পর জ্ঞান ফিরলে তিনি অবগত হন, তাঁর বেশ কিছু সৈন্য নিহত হয়েছেন। (এমতাবস্থায় তাঁর অনুগামী সৈনিকেরা তাঁকে মক্কাবাসীর উপর অভিশাপ করার আবেদন জানান। মুহাম্মদ সা. তাঁর সৈনিকদের আবেদনের উত্তরে জানান— ‘আমি মানব সংহারের জন্য আসি নাই— ওরা আমাকে চিনতে পারেনি, তাই আঘাত করেছে।’) যুদ্ধ সমাপ্ত হলে যে যার ঘরে ফিরে গেলেন। আবু সুফিয়ান তাঁর সৈন্যসামন্ত নিয়ে মক্কায়ি ফিরে কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারেন ওহুদ প্রান্তরে যুদ্ধ জয় করেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। মুহাম্মদ সা. বহাল তবিয়তেই আছেন, নিজ দলবল নিয়ে যথাবিহিত কাজ করে চলেছেন। ফলে, মক্কাবাসীর অন্তরে ক্ষোভের আগুন জ্বলতে থাকল। ফলে, পুনরায় চরম মাত্রায় আক্রমণ করে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে আশপাশের বিভিন্ন গোত্র থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে প্রায় ১০ হাজারের বিরাট বাহিনী গড়ে তুললেন আবু সুফিয়ান ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে। মুহাম্মদ সা. মক্কাবাসীর সম্মিলিত আক্রমণের সংবাদ পেয়ে মদিনা শহর সংলগ্ন পশ্চিমে আবস্থিত সোলআ পাহাড়কে পশ্চাতে রেখে আত্মরক্ষার্থে সম্মুখবাগে পরিখা খনন করলেন— যার সম্মুখে বিস্তীর্ণ ময়দান। দেখতে দেখতে মক্কার ১০ হাজার সৈন্য রণ হুঙ্কারে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে পৌঁছলেন বটে, তবে পরিখা দেখে হতবাক হলেন। সেটা ছিল ৬২৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাস মোতাবেক পঞ্চম হিজরির শওয়াল মাস। তথায় কয়েকদিন দরে যুদ্ধাস্ফালন করতে থাকলেও পরিখা অতিক্রম করতে তাঁরা সক্ষম হলেন না। ইতিমধ্যে একদা রাত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-বৃষ্টির কবলে তাঁদের সাজ ও সামান লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলে ওরা রাতারাতি রণে ভঙ্গ দেন। দুর্যোগের কবলে ওদের রণহুঙ্কার ব্যর্থ হলে মুহাম্মদ সা. তাঁর অনুগামীদের নিয়ে অন্তরে স্বস্তি পান।
৬২৮ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ সা. তাঁর ১৪০০জন অনুগামীকে নিয়ে ধর্মীয় বিধি উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কার অনতি দূরে হোদাইবিয়া নামক স্থানে পৌঁছলে মক্কাবাসীরা তাঁকে এবং তাঁর দলবলকে মক্কার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয় যা হোদাইবিয়া িট্রটি (Treaty of Hudaibiya) নামে খ্যাত। এই চুক্তিপত্রে একদিকে মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মুহাম্মদ সা. স্বাক্ষর করেন। অপরদিকে কোরাইশ গোত্রের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ স্বাক্ষর করেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন আবু সুফিয়ান তনয় হজরত মোয়াবিয়া। এ ছিল ১০ বৎসরের জন্য একে অপরকে অনাক্রমণ চুক্তি। The Treaty of Hudaybiyyah was an event that took place during the time of the Islamic prophet Muhammad. It was a pivotal treaty between Muhammad, representing the state of Medina, and the Qurayshi tribe of Mecca in January 628. (wikipedia). কিছুকাল যেতে না যেতেই মক্কার কোরাইশ পক্ষ দ্বারা এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হয়: (কোরাইশ পক্ষের বনু বকর গোত্র মুসলিম পক্ষের বনু খোজা পক্ষকে আক্রমণ করে) ‘In 628, the Meccan tribe of Quraysh and the Muslim community in Medina signed a 10-year truce called the Treaty of Hudaybiyyah. In 630, this truce was broken when the Banu Bakr, an ally of the Quraysh, attacked the Banu Khuza’ah, who had recently become allies of the Muslims.’ (en.m.wikipedia.org)
৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় সামরিক অভিযান—
হোদাইবিয়ার সন্ধিশর্ত কোরাইশ পক্ষ দ্বারা ভঙ্গ হলে মুহাম্মদ সা. ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে মক্কায় সামরিক অভিযান চালান। মক্কা অভিযানে তথা মক্কা বিজয়ের সময় সর্বসাকুল্যে ২৮জন মক্কাবাসী নিহত হন। ‘28 meccans were killed and rest of the opposiing the muslim entry fled. The remaining Meccans Surrendered to Muhammad. Some of the Meccans even those who had been notable for their opposition to Islam were spared. (set free) (en.m.wikipedia.org / Militery career of Muhammad). মক্কা থেকে বিতাড়িত মুহাম্মদ সা. বিজয়ী বেশে প্রবেশ করলেন মক্কায়— (এই মক্কায় অধিবাসীরা তাঁর উপর এবং তাঁর অনুগামীদের উপর তেরো বৎসর যাবত অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছিলেন)।
মক্কার কাবা চত্বরে সমস্ত মক্কাবাসীদের একত্রিত করা হল—
জনতা নিজেদের ভাগ্যের ফায়সালা শুনতে উদগ্রীব, এরা ওইসব মক্কাবাসী জনতা- যাঁরা তার উপর এবং তার অনুগামীদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছিলেন। তাঁর মুখে থুতু দেওয়া, ঘাড় ধাক্কা দেওয়া, পাথরের আঘাতে মাথা ফাটানো থেকে প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র রচেছিলেন। সেদিন তাদের সকলের বুক যেন ভয়ে দুরু দুরু কাঁপছিল, অবনত মস্তকে তাঁরা প্রহর গুনছিলেন, এই বুঝি প্রতিশোধ নেওয়ার হুকুম জারি হল। চরম মাত্রায় নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল—
এমন সময় মুহাম্মদ দীপ্তকণ্ঠে ভাষণ শুরু করলেন...
‘সমস্ত প্রশংসা মহামহিম বিশ্বস্রষ্টা একক আল্লাহর।’ হে মক্কাবাসী কোরাইশ তোমাদের জাহেলিয়াত যুগের দেবদেবীর পূজা অর্চনা সহ যাবতীয় কুসংস্কার ও বংশীয় আভিজাত্যের সমস্ত দর্প আল্লাহ চূর্ণ করে দিয়েছেন। তোমরা জেনে রাখো সমস্ত মানুস আদমের সন্তান আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। এরপর তিনি আল্লাহর বাণী পাঠ করেন— ‘হে মানবজাতি আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তোমাদেরকে গোত্র ও জাতিতে বিভক্ত করেছি শুধু এ জন্য, যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো। কিন্তু আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই সম্মানিত যা অধিকতর সৎ ও সংযত। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী এবং সব বিষয়ে ওয়াকিবহাল।’ (আল কুরআন) তিনি বললে, ‘যা সত্য যা হক তা সমাগত হল, যা মিথ্যা যা বাতির তা দূরীভূত হল। এ বলে তিনি কাবায় স্থাপিত মূর্তিগুলি অপসারণের নির্দেশ দিলেন। সেগুলি অপসারিত হল। বেলালকে কাবার ছাদে উঠে আযান দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। আযান দেওয়া হল। ‘আল্লাহু আকবর’— আল্লাহ মহান। একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত হল।— কাবাঘর আদিরূপ ফিরে পেল। মুহাম্মদ সা. সমবেত মক্কাবাসীকে সম্বোধন করে বললেন— ‘হে. মক্কাবাসী কোরাইশ আজ তোমরা আমার কাছ থেকে কীরূপ ব্যবহার চাও’। সমবেত কণ্ঠে আবেদনের বিনম্র সুর ভেসে উঠল— ‘আপনি দয়ালু। একজন মহানুভব ভাই এবং একজন মহানুভব ভ্রাতুষ্পুত্রের মতো।’ মুহাম্মদ সা. দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করলেন— ‘লা তাসরিবা আলাইকুমুল ইয়াওমা। ওয়া আনতুমুৎ তোলাকা।’ অর্থ: আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিশোধ নয়, আজ তোমার সবাই মুক্ত। (Sealed Nector by Safiur Rahaman & Ibne Hisham). (পিতাপুত্র ইবরাহিম ও ইসমাইল-এর তৈরি একক আল্লাহর উপাসনা গৃহ কাবা মূর্তিমুক্ত হয়ে আপন মহিমায় আপন অবস্থায় ফিরে গেল— ধ্বনিত হতে লাগল আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর। — আল্লাহ মহান। মক্কা বিজয়ী মুহাম্মদ সা. সম্বন্ধে ফিলিপ কে হিট্টি লিখেছেন— ‘বিজয়ী মুসলিম বাহিনী মক্কা প্রবেশের সময় যে রূপ মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছিলেন প্রাচীন ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত দেখা যায় না।’ (আরব জাতির ইতিহাস, পৃ. ১১২)
কে এই ফিলিপ কে হিট্টি?
Philip Khuri Hitti was a Lebanese-American professor and scholar at Princeton and Harvard University, and authority on Arab and Middle Eastern history, Islam, and Semitic languages. Born- 22 June 1886 A.D. Death 24 Dec 1978 A.D) (wikipedia) তার লিখিত পুস্তক History of Arabs.
ওই সালেই ৬৩০ খ্রিস্টাব্দেই হোনাইনের যুদ্ধ হয়। হোনাইন যুদ্ধে শত্রুপক্ষ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। সে যুদ্ধে মহিলা, শিশু ও পুরুষ সব মিলিয়ে মুসলমানদের হাতে ৬ হাজার লোক বন্দি হন। এরা সকলেই মূর্তি পূজক ছিলেন। নবী মুহাম্মদ সা. এই ৬ হাজার বন্দিকে বিনাপণে মুক্তি দেন। শুধু মুক্তিই নয়, প্রত্যেক বন্দিকে তিনি (মুহাম্মদ সা.) একখানা করে ‘কিবতী চাদর’ উপহার সহ বিদায় দেন। (Sealed Nector by Safiur Rahaman & Ibne Hisham). এই মর্মে ফিলিপ কে হিট্টি লিখেছেন— ‘যে আরব এর আগে কখনো একজন মানুষের কাছে নতিস্বীকার করেনি, সে আরব মুহাম্মদ সা.-এর নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ার এবং তাঁর পরিকল্পনায় অঙ্গীভূত হওয়ার প্রবণতা প্রকাশ করল। মহান ধর্ম বিশ্বাস ও উন্নত নৈতিকতা সেখানকার বর্বরতার স্থান দখল করল।’ (আরব জাতির ইতিহাস— ১১৩ পৃ.)
জর্জ বার্নার্ড শ মুহাম্মদ সা. সম্বন্ধে মন্তব্য করেন:
George Bernard shaw said in his book ‘The genuine Islam’ Vol-I, No. 8, 1976. ‘I have always held the religion of Muhammad in high estimation because of its wonderful vitality. It is the only religion which appears to me to possess that assimilating capacity to the changing phase of existence which can make itself appeal to every age.’ ‘I believe that if a man like him were to assume the dictatorship of the modern world he would succeed in solving its problems in a way that would bring it the much needed peace and happiness: I have prophesied about the faith of Muhammad that it would be acceptable to the Europe of tomorrow as it is beginning to be acceptable to the Europe of today.’ ) The genuine Islam’ Vol-I).
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct