মনোবিজ্ঞানীরা বলছে, প্রতিটি সুইসাইডের রক্তে তিনটি জিনিস মিশে থাকে- ১. অভিমান, ২. হতাশা, ৩. আত্মবিশ্বাসের অভাব। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, এ বছর শুধু বাংলাদেশ সুইসাইড করছে প্রায় দশ হাজার মানুষ! অর্থাত্ গড়ে প্রতিদিন ২৯ জন!! প্রতি ঘণ্টায় ১ জনের বেশি সুইসাইড করছে! দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করে ‘স্কুল ফর সোস্যাল এন্টারপ্রিনারস’। সংস্থাটির সভাপতি জানিয়েছেন, আত্মহত্যা রোধে সামাজিক বন্ধন ফিরিয়ে আনা দরকার। তিনি বলেন, ‘এখন সবাই ঘরমুখী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও জীবনমুখী নয়। ফলে লেখাপড়া শেষে অনেকে বিষয় অনুযায়ী কাজের সুযোগ পান না। আবার অনেক পরিবার সন্তানের পছন্দ কিংবা মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের পছন্দ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।আত্মহত্যার অনেক কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে একটি হলো— মানসিক চাপ। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু মানসিক চাপ থাকে। চাপটা বেশি হয়ে গেলে কারো কারো মনে হয়, তিনি আর সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। তখন জীবন থেকে পালানো বা আত্মহত্যার পথটাই তার কাছে সহজ মনে হয়।আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে আছেন অনেকে।সুইসাইডের কারণ হিসেবে অনেকে সংকট ও অভাবের কথা বলেন। সেগুলো পূরণের চেষ্টা হলে দেখা গেছে ঝুঁকিটা কমে আসে। তাদের কথা শুনতে হবে। তাদের সময় দিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যার সংখ্যা কমে আসবে।’
ফাতেমা নূর কাউন্সিলিং করেন তিনি জানান , ‘বিষন্নতায় যারা ভোগেন তাদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। কারণ জীবন নিয়ে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড নেতিবাচক ধারণা কাজ করে।ছেলেবেলা থেকে যাদের নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না তাদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা কাজ করে। কারো মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা গেলে দ্রুত তাকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে, সব ধরনের সংকট থেকেই বেরিয়ে আসা সম্ভব।জীবনটা নিজের হলেও আত্মহত্যার মাধ্যমে এ জীবন নষ্ট করার অধিকার কারো নেই।' মাঝে মাঝে মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। আত্মহত্যার পেছনে লিঙ্গ, বিবাহ, ধর্ম, বসবাসের অবস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থা, সামাজিক নৈরাজ্যকে তিনি সামনে আনেন। অপরাধ বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিকোণ থেকে ‘আত্মহত্যা’ কার্যক্রমটি এক ধরনের অপরাধ। এও সত্য কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করে না বরং বিভিন্ন সামাজিক ঘটনা ব্যক্তির আত্মহত্যা করার প্রবণতাকে প্রভাবিত করে। ফরাসি সমাজ বিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম তার বিখ্যাত ‘ঞযব ঝঁরপরফব’ গ্রন্থে আত্মহত্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, আধুনিক সমাজে বিভিন্ন সামাজিক সংহতির ভিত্তিতে আত্মহত্যা লক্ষ্য করা যায়। তার মতে, আত্মহত্যা কোনো ব্যক্তিগত, মানসিক, বংশগত, ভৌগোলিক বা দৈহিক কারণে ঘটে না বরং সামাজিক সংহতির মধ্যে নিহিত থাকে। তিনি মনে করেন, আত্মহত্যা হচ্ছে যান্ত্রিক সংহতির নেতিবাচক ফলশ্রুতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চাপ, হতাশা, অবসাদ ও হেনস্থার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আবার আর্থ-সামাজিক সমস্যা ও পারিবারিক সংকটের কারণেও অনেকে আত্মহত্যা করে। জানা গিয়েছে, যারা আত্মহত্যা করেন তাদের তিনজনের মধ্যে একজন মাদকাসক্তের কারণে এই পথ বেছে নেন। আর ৭৫ শতাংশ মাদকাসক্তই আত্মহত্যার চিন্তা করেন। যারা আত্নহনের পথ বেছে নেন তাদের উদ্দেশ্যে বিশেষজ্ঞরা জানান, এ পৃথিবীতে আপনার উপস্থিতি, আপনার মস্তিষ্ক ও মানসিক শক্তির ব্যবহার অনেক বেশি প্রয়োজন। সেটা ব্যবহার করুন। আত্মহত্যার আগে একবার ভাবুন, এটা সব সমস্যার সমাধান নয়। মাঝে মধ্যে আপনাকে অন্যের জন্যও বেঁচে থাকতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct