পরিবেশ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। বিভিন্ন জীবজ ও অজীবজ উপাদানের সমন্বয়ে সার্বিক এবং আদর্শ , প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরী হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সুস্থায়ী ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সকলেরই সমান ও গুরুত্বপূর্ণ যোগদান রয়েছে। পরিবেশের মধ্যেই মজুদ রয়েছে চিরাচরিত ও অচিরাচরিত শক্তির বিভিন্ন উৎস। যদিও চিরাচরিত বা প্রচলিত শক্তি থেকেই বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শক্তি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ নিয়ে লিখেছেন সজল মজুমদার।
‘পরিবেশ’ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। বিভিন্ন জীবজ ও অজীবজ উপাদানের সমন্বয়ে সার্বিক এবং আদর্শ , প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরী হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সুস্থায়ী ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সকলেরই সমান ও গুরুত্বপূর্ণ যোগদান রয়েছে। পরিবেশের মধ্যেই মজুদ রয়েছে চিরাচরিত ও অচিরাচরিত শক্তির বিভিন্ন উৎস। যদিও চিরাচরিত বা প্রচলিত শক্তি থেকেই বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শক্তি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রচলিত শক্তি গুলো ক্ষয়িষ্ণু ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপুনর্ভব সীমাবদ্ধ। পরোক্ষে এই শক্তিগুলো পরিবেশ দূষণ এবং বিশ্বব্যাপী উষ্ণ করনের অন্যতম কারণও বলা চলে। তাই স্থিতিশীল ও বিকল্প পরিবেশ ভাবনার লক্ষ্যে গ্রীন টেকনোলজি বা সবুজ প্রযুক্তির বর্তমানে সাহায্য নেওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। মূলত ‘সবুজ প্রযুক্তি ‘বলতে এমন প্রযুক্তিতে বোঝায় যা পরিবেশ মিত্র প্রকৃতির এবং এই প্রযুক্তির বিকাশ ও ব্যবহার পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে না, বরং প্রাকৃতিক সম্পদকে সংরক্ষণ করে। সবুজ প্রযুক্তিকে ‘ পরিবেশগত প্রযুক্তি’ এবং ‘ পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি’ বা ‘ ক্লিন টেকনোলজি’ নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগ অত্যন্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বাঞ্ছনীয় ভাবে শীঘ্রই এই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সকলের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এখন মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, সবুজ প্রযুক্তির সাথে কোন কোন অচিরাচরিত বা অপ্রচলিত শক্তি গুলো জড়িত। এই প্রসঙ্গে বলতেই হয়, অচিরাচরিত শক্তি সম্পর্কে কমবেশি ধারনা আমাদের সকলেরই রয়েছে। বিদ্যালয় পড়ুয়া থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পাঠরত পড়ুয়া তথা পরিবেশ সচেতন সকল নাগরিকেরাও এই শক্তি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু শক্তিগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ বর্তমানে অত্যন্ত সীমিত। মুখ্যত বায়ু শক্তি, জৈব জ্বালানি, বায়োগ্যাস, সৌরশক্তি, ভূতাপ শক্তি, সামুদ্রিক জোয়ার ভাটা শক্তি, জলবিদ্যুৎ শক্তি এগুলোর অন্তর্গত। সবুজ প্রযুক্তির মাধ্যমেই উপরিউক্ত শক্তিগুলোর সীমাবদ্ধ, পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই জন্য অনুকূল পরিবেশে এসব শক্তির উৎপাদন কেন্দ্রও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে তোলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ চীন, আমেরিকা, জার্মানি, স্পেন এবং বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। অপরদিকে আইসল্যান্ড, ইটালি, নিউজিল্যান্ডে ভূতাপ শক্তি কে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়েছে। তবে গ্রীন টেকনোলজি কে সর্বাধিক কাজে লাগানো হয়েছে সৌরশক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে। সৌরশক্তি আহরণের সবচেয়ে পরিচিত উপায় টির নাম ‘ সৌরা লোক তড়িৎ কোষ’ বা ‘ সোলার ফটোভোল্টিক সেল’ এর ব্যাবহার। এই শক্তি উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে সর্ব প্রথম স্থানে রয়েছে। ভারতের ভাদলা সোলার পার্কে সর্বাধিক ২৭০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
এছাড়াও চীন, মিশর, আরব আমিরশাহি, স্পেন, মেক্সিকো, আমেরিকাতেও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। ঠিক একই রকমভাবে গ্রীন টেকনোলজি কে কাজে লাগিয়ে গোবর, পোল্ট্রি বর্জ্য, পুনর্নবীকরণযোগ্য পয় প্রনালী বর্জ্য পদার্থ থেকে তৈরি করা হচ্ছে বায়োগ্যাস। মেক্সিকো, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইউক্রেইন, ইংল্যান্ড এবং ভারতে ও বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে স্বল্প পরিমাণে শক্তি উৎপাদিত হচ্ছে। পেট্রোল, ডিজেল থেকে যানবাহনের পরিবেশ দূষণ রোধ এবং জ্বালানি খরচ সাশ্রয় করবার জন্য বিকল্প হিসেবে ব্যাটারি চালিত ই স্কুটার, ই বাইক, ই সাইকেলের ব্যবহার বর্তমানে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অধিক পরিমাণে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে কৃষি শস্যের অবশিষ্টাংশ এবং কৃষি বর্জ্য কে গ্রিন টেকনোলজির বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন combustion, gasification, cogeneration এর মাধ্যমে রূপান্তরিত করে বিদ্যুৎ ও তাপ শক্তি উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে জলবিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার এক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে। সুতরাং এক কথায় বলা যায়, ভবিষ্যৎ সহনশীল উন্নয়ন ভাবনার বিকল্প হিসেবে সচেতনভাবে সবুজ প্রযুক্তির ধারণাকে প্রয়োগ করলে পৃথিবীকে পরিবেশ দূষণের কবল থেকে অনেকাংশেই রক্ষা করা সম্ভব হবে।
লেখক শিক্ষক ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct