২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মূলত দুটি নাম উঠে আসছে। একটি রাহুল গান্ধী অপরটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টি লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের জয়ের পর ভাবা যাবে। এখন সে সময় নয়। মমতার এই মন্তব্যে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে।
দিন কয়েক আগে চেন্নাইয়ে এম কারুনানিধির মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে তার পুত্র তথা ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন বিরোধী দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে স্ট্যালিন বড়ো গলা করে বলেছিলেন আগামী ২০১৯ ভোটে বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। সম্প্রতি তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ের মুখ দেখেছে। বিজেপি সরকারের পতনে বড় ভূমিকা নিয়েছেন রাহুল গান্ধী। তাই কংগ্রেস আবার জয়ের মুখ দেখতে শুরু করেছে। সেজন্য স্ট্যালিন রাহুলকেই ২০১৯ লোকসভা ভোটের প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চান। তার মতে অন্যান্য অঞ্চলিক দলগুলির কংগ্রেসের চেয়ে বেশি আসন পাওয়া সম্ভব নয়। আর বিরোধীদের মধ্যে রাহুল বিজেপির এখন খুবই সরব। এভাবে রাহুল সক্রিয় থাকলে আখেরে বিরোধী জোটের লাভ হবে বলে ধারণা স্ট্যালিনের। এছাড়া রাহুল যেভাবে মোদির বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন তাতে মোদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রাহুলকেই বেছে নিতে চান স্ট্যালিন। সেটা মানতে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর কারণ হিসেবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে বিরোধী দলগুলির মধ্যে থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মমতার নামও সামনে আসছে। আগেভাগে সেই সুযোগ নষ্ট করতে চান না মমতা। এর দুটি কারণ থাকতে পারে। একটি হল, যদি মমতা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পান তাহলে তা তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। আবার এখন যদি মমতা রাহুলের বিরোধিতায় সরব হন তাহলে বিরোধী জোট ধাক্কা খেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিরোধী জোটের ফল খারাপ হলে মমতাকে দায়ী করা হতে পারে। আবার মমতা যদি এখন নিজে প্রধানমন্ত্রীর দাবি করেন তাহলে বিরোধী জোটে ফাটল দেখা দিতে পারে। তাই সাবধানে এগোতে চান মমতা। অনেকে বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হতে চান। তা প্রকাশ্যে বলছেন না। ভোটের পর এ নিয়ে মতপ্রকাশ করবেন। এখন যদি রাহুলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব সমর্থন করেন তাহলে ভোটের পারে মমতার প্রধানমন্ত্রী হাওয়ারকোনো সম্ভাবনা থাকবে না। তাই কোনো রিস্ক নিতে চাইছেন না মমতা। বরং কংগ্রেসের শরিক দলগুলি যদি ভোটের পর মমতাকে সমর্থন করেন তখন পিছু হটতে পারেন রাহুল। মমতা তাই সেই সুযোগ হারাতে চাইছেন না। একবার সিপিএম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতি বসুর সুযোগ হারিয়েছে। তৃণমূল সেই ভুল করতে চায় না। ফের বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সামান্য সুযোগ থাকলে তাকে কাজে লাগাতে চায়। তৃণমূলের প্রবীণ নেতাদের অনেকে নাকি ঘনিষ্ঠমাহলেবলেছেন, মমতার প্রবল ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। তা মুখে বলতে পারছেন না। সেজন্য ঘুরিয়ে রাহুলের বিরোধিতা করে চলেছেন সুপ্তভাবে যাতে মমতার প্রধানমন্ত্রীর পথ সুগম হয়। যদিও মমতা ঘনিষ্ঠরা বলছেন, মমতার ক্ষমতার লোভ নেই। তার ইচ্ছা যে কোনোভাবে কেন্দ্রে বিজেপিকে সরানো। এর জন্য মমতা ত্যাগ করতে প্রস্তুত। আর বিরোধী জোট যাতে অটুট থাকে তাই ভোটের পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের কথা বলছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct