উত্তরপ্রদেশের বুলন্দ শহরে পুলিশ অফিসার সুবোধ কুমার খুনে প্রধান অভিযোগের তীর বজরং দলের নেতা যোগেশ রাজের দিকে। এক হিন্দু পরিবারের জায়গায় গরুর দেহাংশ পাওয়ায় ক্ষেপে ওঠে গোরক্ষকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাজির হয়েছিলেন আখলাক খুনের তদন্তকারী পুলিশ অফিসার সুবোধ কুমার সিং। যোগেশ রাজের নেতৃত্বাধীন গোরক্ষকরা গুলি করে হত্যা করে সুবোধ সিংকে। এর পর বজরং দলের নেতা যোগেশ রাজ সংবাদের শিরোনামে চলে আসে। এই যোগেশ রাজের উত্থান অবশ্য যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে। যদিও যোগেশের নিজের গ্রামে হিন্দু মুসলিম সবারই বাস।
বুলন্দ শহরের নয়াবংশ গ্রামের বাসিন্দা যোগেশ। সেইগ্রামে এখন হিন্দু মুসলিমের মধ্য কথাবার্তা প্রায় বন্ধ। এমনকি ছোট্ট শিশুরাও হিন্দু মুসলিম বিভেদের আতঙ্কে কথা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। বছর খানেক আগে কিন্তু এই পরিস্থিতি ছিলনা। সেখানে হিন্দু মুসলিমের মধ্য ছিল এক নিবিড় ভালবাসার বন্ধন। যোগী আদিত্যানাথ ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিন্দু মুসলিমের মধ্যে বিভেদের প্রাচীর। আর তা হয়েছে যোগেশ রাজের মতো বজরং দলের নেতাদের সাম্প্রদায়িক আস্ফালনে।
যোগেশের গ্রাম নয়াবংশে প্রায় ২৫০০ ভোটার। তার মধ্যে মুসলিম ৭৫০জন। এই গ্রামে মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। হিন্দুরা মূলত জমির মালিক। জমি চাষ করেই তাদের সংসার চলে। আর মুসলিমরা মূলত শ্রমিক। হিন্দুদের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে তারা সংসার চলে। এখন সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে সুবোধ সিং হত্যার পর। যে ছোট্ট শিশু ফাহাদ তার বন্ধু রানার সঙ্গে এখন আর কোনও কথা বলে না। কথা পুরোপুরি বন্ধ। অথচ রানা আর ফাহাদ ছিল প্রাণের বন্ধু।
যোগেশের গ্রামের বাসিন্দা কল্যাণ মালিক বলছেন, গ্রামের বিয়ে বাড়িতে সবাই হাজির থাকতেন। হিন্দুদের বাড়িতে মুসলিমরা যেতেন। আর মুসলিমদের বাড়িতে হিন্দুরা যেতেন। এমনকি কে কি খেত তা নিয়ে কোনও মাথাব্যথা ছিল না। এখন সেসব বন্ধ। কোনও হাই, হ্যালো ছাড়া কোনও বাড়তি কথা নেই।
মুসকান ক্লাস নাইনের ছাত্র। তার বহু হিন্দু ছাত্রী বান্ধবী। কিন্তু এখন তাদেরকে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। এখই শ্রেণির ছাত্রী সুমনা জানিয়েছে, কথাটা সত্যি। মাস কয়েক আগে থেকেই তারা মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে কতা বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রামের কৃষক রাকেশ সিং বলেছেন, তারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার। মুসলিমদের সঙ্গে শুধু কৃষিকাজ ও শ্রমিক বিষয় নিয়ে কথা হয়। এর বেশি নয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গেছে মুসলিমরা মুসলিম দোকানদারদের কাছে যাচ্ছে আর হিন্দুরা হিন্দু দোকারদারদের কাছে। বাদ যাচ্ছে না শিশুরা। ক্লাস ফাইভের পড়ুয়া ফাহাদ বলছে, তারা প্রিয় হিন্দু বন্ধু রানার সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে ভালবাসত। এখন তা করতে পারে না। মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গেই তাকে খেলতে হয়। অপরদিকে রানা বলছে, সে মুখিয়ে রয়েছে কমে তার মুসলিম বন্ধু ফাহাদের সঙ্গে ফের খেলায় মেতে উঠবে। আক্ষেপের সুরে তাই স্থানীয় চা বিক্রেতা অশোক বললেন, তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশে বাস করতেন। কিন্তু এখন একেবারে অন্য সম্প্রদায়ের থেকে দূরে যা তাকে ব্যথিত করে তুলছে।
কৃতজ্ঞতা: দ্য টেলিগ্রাফ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct