রাজ্যের আনএডেড মাদ্রাসার উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। সেই আন্দোলন এবার ছড়িয়ে পড়ল উত্তর দিনাজপুরে। মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার পরেই মুসলিম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা হিসেবে পরিচতি এই জেলার কর্ণজোড়ায় জেলাশাসকের অফিসে মঙ্গলবার ডেপুটেশন দিল পশ্চিমবঙ্গ আন্-এডেড্ মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটি। উল্লেখ্য, উত্তর দিনাজপুর জেলায় সরকার স্বীকৃত ৪৪াট আন্-এডেড্ মাদ্রাসা রয়েছে। যেখানে প্রায় পাঁচশোরও বেশি শিক্ষক, শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীবৃন্দ কর্মরত। আর এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রায় ১৪ হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করে। কিন্তু গত ৫ বছরে সরকারি সাহায্য না মেলায় সবাই এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে। এখনও পর্যন্ত শিক্ষক, শিক্ষিকাদের কোন বেতনের ব্যবস্থা ও ছাত্র - ছাত্রীদের কোন ধরনের পাওয়া যায়নি বর্তমান রাজ্য সরকার। যদিও এই সাহায্য দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৮ ই ফ্রেব্রুয়ারী মাইনোরিটি ও মাদ্রাসা দফতরের জয়েন্ট সেক্রেটারি পি বি সালিম সাহেব সাহেব এ ব্যাপারে একটা অর্ডার দিয়েছিলেন প্রত্যেক জেলার জেলাশাসককে। সেই অর্ডারে বলা ছিল অনুমোদিত আন এডেড মাদ্রাসাগুলিকে সরকারী সমস্ত সাহায্য ও সহোযোগিতা করবে দফতর। এখন পর্যন্ত মাত্রা ২৩৪ টি আন এডেড মাদ্রাসা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং পিবি সালিম সাহেবের অর্ডারটি আজও বাস্তবায়িত ও কার্যকর হয়নি। এর ফলে মাদ্রাসাগুলি একেবারে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বলে অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ আন্-এডেড্ মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব মোল্লা।
এদিন পশ্চিমবঙ্গ আন্-এডেড্ মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটির উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন,এই জেলার ৪৪টি আন্-এডেড্ মাদ্রাসা অনুমোদন দিয়েছেন রাজ্যের মা-মাটি-মানুষের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার সরকার । কিন্তু এখনো পর্যন্ত শুধু পাঠ্য বই ও খাতা ছাড়া কিছুই দেয়নি আমাদের । দীর্ঘ দিন ধরে বেতন না পাওয়ার কারণে শিক্ষক -শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীবৃন্দের অবস্থা আর্থিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত । ছাত্র-ছাত্রীরা মিড-ডে-মিল না পাওয়ার কারণে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সরকারী ভাবে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কোন আর্থিক সাহায্য আসছে না। এই চরম সঙ্কটের মধ্যে মাদ্রাসা গুলি উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়ে উঠেছে।
আন্-এডেড্ মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি মোঃ মোস্তফা জানান, উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনা স্মানের সঙ্গে ডেপুটেশন নিয়েছেন। তারপর আশ্বাস দিয়েছেন আনএডডে মাদ্রাসা যাাতে রাজ্য সরকারের সাহায্য পায় তার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরে তাদের দাবিদাওয়ার কথা পৌঁছে দেবেন।
সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক আবদুল ওহাব মোল্লা সাহেব বলেন, রাজ্য সরকারের বুনিয়াদী মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি প্রচণ্ড অনীহা, যার স্পষ্ট উদাহরণ সরকার স্বীকৃত রাজ্যের ২৩৪টি আন্ -এডেড্ মাদ্রাসা । তিনি বলেস, বাম জামানাতেও দেখেছি সেসময় রাজ্য সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার উপর অনীহা থাকলেও MSK ও SSK মাদ্রাসা গুলির শিক্ষক - শিক্ষিকাদের সামান্য হলেও কিছু অর্থ সাহায্য করেছিলো। কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার তার নিজেস্ব প্রকল্প স্বত্বেও শিক্ষক - শিক্ষিকাদের মাস মাহিনা দিচ্ছে না। এমন কি কেন্দ্রর প্রকল্প SPQEM এর টাকাটা রাজ্য সরকার নিচ্ছে না। গত মাসে যেখানে CGAIC এর মিটিংয়ের ফলে দেশের ১৮টি রাজ্যের শিক্ষক-শিক্ষিকারা SPQEM টাকা পেলেন, সেখানে পশ্চিম বাংলার শিক্ষক-শিক্ষিকারা বঞ্চিত রইলেন। কেন্দ্রের এই অর্থ সহায়তা থেকে রাজ্যের আনএডডে মাদ্রাসা বঞ্চিত হওয়ার পিছনে বার্তমান রাজ্য সরকারের অনীহাই সবচেয়ে বেশি দায়ী বলে তিনি মন্তব্য করেন। যদিও তিনি আশাপ্রকাশ করেন, আনএডেড মাদ্রাসার বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি যথাযথ দৃষ্টিগোচর হলে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের পূর্ণ মন্ত্রী মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নিশ্চয়ই হস্তক্ষেপ করবেন। সেইসঙ্গে আনএডডে মাদ্রাসাগুলি যাতে যথাযথ সাহায্য পায় তার বাস্তবায়ন করবেন।
আবদুল ওহাব মোল্লা আরও বলেন, প্রতিটি জেলায় ডেপুটেশন দেওয়ার কর্মসূচি চলছে, জেলাস্তর গুলি শেষ হয়ে গেলে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হবে ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct