উচ্চমাধ্যমিক ও হাই মাদ্রাসা পরীক্ষা ২০২২ ( ভূগোল )
অধ্যায়-বায়ুর কার্য
__________________________________
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর প্রশ্নমান -৩
১. মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজ প্রাধান্যর কারণ কি?
উত্তর :-
ক . যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রভাব- মরু অঞ্চলে জলবায়ু চরমভাবাপন্ন। এখানে দিন ও রাত্রি এবং শীত ও গরম কালের মধ্যে উষ্ণতার তারতম্য দেখা যায়। তাই মরু অঞ্চলে উষ্ণতার পার্থক্য চোখে পড়ে।
খ . বৃষ্টির অভাব :- মরু অঞ্চলে টানা কয়েক বছর বৃষ্টিহীন অবস্থায় থাকে। তাই শিলাস্তর সহজে আলগা ও শিথিল হয়ে পড়ে এবং বায়ুপ্রবাহের কারণে শিলাখন্ড সহজে সুক্ষ্ কনায় পরিণত হয়।
গ . গাছপালার অভাব :- বৃষ্টির অভাবে মরু অঞ্চল প্রায় বৃক্ষহীন। এই অঞ্চলের মাটি তাই দৃঢ় সংঘবদ্ধ নয়, গাছের অভাবে বায়ু প্রবাহ পথে বাধা পায় না।
ঘ . বাধাহীন বায়ুপ্রবাহ :- মরু অঞ্চলে পাহাড়, পর্বত ঘরবাড়ি, শিল্প না থাকায় বায়ু তার প্রবাহপথে কোনো বাধা পায়না। তাই মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রভাব বেশি দেখা যায়।
২. সব উপকুল অঞ্চলে বালিয়াড়ি গঠিত হয় না কেন?
উত্তর :- বালিয়াড়ি গঠিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন -
১. প্রচুর পরিমানে বালির যোগান।
২. সারা বছর প্রবল বেগ সম্পন্ন বায়ুপ্রবাহ।
কিন্তু সমস্ত উপকূল অঞ্চলে বালিয়ারি গঠিত হয়নি কারণ -
ক. যে সকল উপকূল অঞ্চলে বিস্তৃত সমভূমি রয়েছে, সেখানে ভূমির ঢাল কম থাকায় প্রশস্ত এবং সুবিস্তীত সমুদ্র সৈকত গড়ে ওঠে।
খ. উন্মুক্ত সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্রবল বেগ সম্পন্ন সমুদ্র বায়ু বিনা বাঁধায় স্থলে প্রবাহিত হয়। ফলে সমুদ্র সৈকত এর সকল অঙ্গের বালুকারাশি শুকনো থাকে, সে সব জায়গা থেকে বালুকারাশি উড়ে আসে। এই বায়ুর প্রবাহওঠে কোনো বাধার সম্মুখীন হলে সেখানে বালিয়ারি জমা ধর বালিয়ারি গঠন করে।
3. বারখান টিকা লেখো।
অর্থ - BARKHAN শব্দ টি তুর্কি শব্দ BARKAN থেকে এসেছে। যার অর্থ বালির পাহাড়।
সংজ্ঞা - বায়ুর প্রবাহপথের সঙ্গে আড়াআড়ি ভাবে গড়ে ওঠা অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়াড়ি কে বলে বারখান।
উৎপত্তি :- বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে ও তির্যক বালিয়াড়ির পার্শদেশ বরাবর কোনো কারণে যদি ছোট ছোট ঘূর্ণির সৃষ্টি হয় তাহলে তির্যক বালিয়াড়ি প্রান্তভাগ গুলি বেঁকে বারখান সৃষ্টি হয়।
বৈশিষ্ট:- 1ঢাল :-. বারখানের বায়ুমুখী উত্তোল ঢাল মৃদু (১০-১৫°) ও বিপরীত ঢাল খাড়া (৩৫°).
২. শিং :- দুই প্রান্তে শিং এর মতো শিরা দেখা যায়।
৩. উচ্চতা :- উচ্চতা ১০-৩০ মিটার হয়ে থাকে।
৪. প্রস্থ :- প্রস্থ তে ৪০-৭০ মিটার চওড়া হয়।
৫. স্থায়ীত্ব :- এগুলি এক জায়গায় স্থায়ী ভাবে থাকে না।
উদাহরণ - সাহারা মরুভূমি।
৪. লোয়েস সমভূমি।
অর্থ - জার্মান ভু বিজ্ঞানী ভন রিকটফোন সর্বপ্রথম লোয়েস কথাটি ব্যবহার করেন। এটি জার্মান শব্দ LOSS থেকে আগত যার অর্থ সুক্ষ পলি।
সংজ্ঞা - বায়ুবাহিত অতি সুক্ষ বালিকনা উৎস অঞ্চল থেকে দূরে কোথাও অবক্ষিপ্ত হয়ে যে সমভূমি সৃষ্টি হয় তাকে লোয়েস সমভূমি বলে।
উৎপত্তি :- ০.০৫ মিমি কম ব্যসযুক্ত বলুকনা সহজেই প্রবল বায়ু প্রবাহের সঙ্গে ভাসমান অবস্থায় বাহিত হয়। এই বায়ুর গতি কমলে বা এই বায়ু কোনো আদ্রবায়ু বা বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হলে বায়ুর বালিকণা অবক্ষিপ্ত হয়ে লোয়েস সৃষ্টি করে।
বৈশিষ্ট :- ১.গভীরতা :- গভীরতা কয়েক মিটার থেকে কয়েকশো কিমি।
২. উর্বর :- লোয়েস অঞ্চল প্রবেশ্য ও উর্বর হয়।
৩. স্তর :- সমভুমিতে স্তর বিন্যাস দেখা যায় না.
উদাহরণ - গোবি মরুভূমি থেকে চীনের হোযাঙ হো নদী অববাহিকায় জমা হয়ে সমভূমি গঠন করেছে।
৫. সিফ বালিয়াড়ি টিকা লেখো।
উত্তর :-
অর্থ - seif একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ তরবারি।
সংজ্ঞা - বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে সমান্তরালে গঠিত দীর্ঘ ও সংকীর্ণ বালির শৈলশিরা কে বলে সিফ বালিয়াড়ি।
উৎপত্তি :- বাগনোল্ড এর মতে, বারখান থেকে সিফ বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়। মরু অঞ্চলে প্রধান বায়ু প্রবাহের সঙ্গে ঋতুভেদে তির্যক বায়ু প্রবাহিত হলে বারখানের শিং প্রসারিত হয়ে সিফ বালিয়াড়ি পরিণত হয়।
বৈশিষ্ট :- ১. দৈর্ঘ্য :- দৈর্ঘ্য হয় ১০০-১৫০কিমি।
২. উচ্চতা:- উচ্চতা ১০০মিটারের হয়ে থাকে।
৩. আকৃতি:- আকৃতি তড়বারির ন্যায়, গোড়ার দিকটা উচ্চবো গোল হয় ও ক্রমশ নিচু হয়ে ছুঁচাল হয়।
৪. করিডর :- দুটি সিফের মধ্যবর্তী নিচু অংশ কে করিডোর বলে।
উদাহরণ - সাহারা, কালাহারি মরুভূমি।
৬. বায়ু কোন কোন পদ্ধতিতে ক্ষয়কার্য করে???
উত্তর-- মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে বায়ু তিন ভাবে কাজ করে থাকে। যথা - ১. অবঘর্ষ, ২. ঘর্ষণ, ৩. অপসারণ। বায়ুর এই খয়কাজ নির্ভর করে বায়ুর গতি, বালুকনার পরিমান, শিলার গঠন, উদ্ভিদের বিস্তারের ওপর।
১. অবঘর্ষ - মরু অঞ্চলে বায়ুবাহিত বালুকনা, ক্ষুদ্র প্রস্তরখন্ড দ্বারা শিলাস্তরের ওপর ঘর্ষণ ক্রিয়া চলে। ফলে শিলার ওপর আঁচড়, কাটার দাগ, গর্ত, মৌচাকের মতো দাগ তৈরি হয়। একে অবঘর্ষ বলে।
২. ঘর্ষণ - ভূ পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে বাহিত বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তুরখন্ড ও নুড়ি পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং ক্ষুদ্র বালিকনায় পরিণত হয়। একে ঘর্ষণ পক্রিয়া বলে।
৩. অপসারণ :- প্রবল বায়ুপ্রবাহে বালি ও পলিকনা মরুভূমির একস্থান থেকে অন্যত্র অপসারিত হয়।
৭. মরু সম্প্রসারণ রোধের উপায় গুলি কি কি?
উত্তর :- মরুভূমি অঞ্চলে বালুকারাশি প্রবল বায়ুপ্রবাহের দ্বারা বাহিত হয়ে পার্শবর্তী ভূমিতে পতিত হয়। ফলে সেই সব অঞ্চলে ক্রমশ মরুভূমিতে পরিণত হতে থাকে। একে বলে মরু সম্প্রসারণ।
মরুকরুন রোধের উপায় গুলি হলো -------
১. মরু অঞ্চলে নানান ধরণের কাঁটা জাতীয় গাছ লাগানো দরকার যাতে সেগুলি তাঁদের সুবিস্তীত মূল দ্বারা ভূ পৃষ্ঠের শিথিল মৃত্তিকা স্তর কে আটকে রাখতে পারে।
২. যেখানে বৃক্ষরোপন সম্ভব নয় সেখানে আঁকাবাঁকা ভাবে বেড়া দিয়ে বায়ুর গতি রোধ করা।
৩. মরুর সম্প্রসারণ রোধের জন্য মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা।
৪. পশু খাদ্য ও জ্বালানি কাঠের জন্য চাষ বাড়ানোর দরকার।
৫. পশু চারণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
৬. বিশেষ ধরণের শৈবাল দ্বারা চিনে গোবি মরুভূমির প্রসার রোধ করা হচ্ছে।
৭. বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য কৃত্রিম জলাধার নির্মাণ করা প্রয়োজন।
৮. পেডিমেন্ট ও বাজাদার পার্থক্য লেখ।
উত্তর ---
১. কাজের প্রকৃতি - পেডিমেন্ট মূলত ক্ষয়কাজের জন্য সৃষ্টি হয়ে থাকে।
• বাজাদা সঞ্চয় কাজের ফলে গঠিত।
২. উপাদান --- পেডিমেন্ট ছোট বড়ো নুড়ি কাকর দ্বারা গঠিত।
• বাজাদা সুক্ষ পলি বালি দ্বারা গঠিত।
৩. অবস্থান - পেডিমেন্ট পাদদেশিয় ঢালের উর্দ্ধে গঠিত হয়.
• বাজাদা ঢালের নিম্নে গঠিত হয়।
৪. ঢাল - পেডিমেন্ট এর ঢাল ৬-৭°
• বাজাদার ঢাল হয় ৩-৪•।
৫. বিভাগ - পেডিমেন্ট মূলত তিন প্রকার - আবৃত, সংযুক্ত, ব্যবচ্ছিন্ন
• বাজাদার কোনো শ্রেণীভাগ নেই।
৯. ইয়ারদাঙ ও জিউগেন এর পার্থক্য লেখো।
উত্তর
১. উচ্চতা - ইয়ারদাঙ এর উচ্চতা ৩-৩০ মিটার
• জিউগেন এর উচ্চতা ৬-৭০ মিটার
২. আকৃতি - ইয়ারদাঙ ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে হয়।
• জিউগেন শৈলশিরার মতো দেখতে।
৩. মস্তকদেশ - ইয়ারদাঙ এর মাথা গুলি খয়ের ফলে তীক্ষ্ণ ও ছুঁচাল হয়।
• জিউগেন এর মাথা ক্ষয়ের ফলে চ্যাপ্টা ও সমতল হয়।
৪. শিলা :- ইয়ারদাঙ এ শিলাদ্বয় উলম্ব ভাবে থাকে ।
• জিউগেনের শিলা গুলি অনুভূমিক ভাবে অবস্থানা করে।
১০. বারখান ও সিফ বালিয়াড়ি পার্থক্য লেখো.
উত্তর -
১. অর্থ - বারখান তুর্কি শব্দ Barkan থেকে এসেছে যার অর্থ বালির পাহাড়।
• সিফ আরবি শব্দ, যার অর্থ তরবারি।
২. অবস্থান - বারখান আড়াআড়ি ভাবে অবস্থান করে।
•সিফ সমান্তরাল গড়ে ওঠে।
৩. আকৃতি :- বারখান অর্ধ চন্দ্রাকৃতি হয়ে থাকে।
• সিফ তরবারির ন্যায় দীর্ঘ ও সংকীর্ণ।
৪. দৈর্ঘ্য - বারখান এর দৈর্ঘ্য কম
• সিফ এর দৈর্ঘ্য অনেক বেশি।
৫. সৃষ্টি - বারখান থেকে সিফ বালিয়াড়ি গঠিত হয়.
• সিফ থেকে বারখান বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয় না।
(বিঃ দ্রঃ :- পরীক্ষায় পার্থক্য ছকের মাধ্যমে লিখবে তোমরা )
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct