প্রত্যাশামতোই ছবি ঘিরে দর্শকমহলে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। তবে পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ানের সাথে প্রোডাকশন ডিজাইনের সাদৃশ্য থাকায় ট্রেলার রিলিজের আগে অবধি নেটিজেনদের রীতিমতো ঠাট্টাতামাসা খোরাক ছিল যশরাজ প্রযোজিত এই ছবি। পোস্টর রিলিজের পর থেকেই ট্রোল পেজে ফেবু মিম আর নীতিবাচক সমালোনায় ভরে উঠেছিলো সন্ধ্যের পাড়ার রক। তবে কি শেষটায় রিমেক ছবি বানাতে চলেছেন আদিত্য চোপড়া অ্যান্ড কং?
এ ছবির প্রেক্ষাপট ছিল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে স্বাক্ষর না করা মির্জা সিকন্দর বেগ নামে এক নবাব ও তার রাজ্যপাট রৌনকপুরকে নিয়েই হয় এই গল্পের সুত্রপাত।
গোপনে ইংরেজদের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী নবাবের মহলে মধ্যরাত্রে হানা দেয় লর্ড ক্লাইভ ও তার নেতৃত্বে থাকা বাহিনী। এদিকে নাবাব পুত্রকে কামানের সামনে বন্দি করে রেখে নবাব কে আত্মসমর্পণের শর্ত দেন ক্লাইভ।
অবশেষে বিশ্বাসঘাতকতা আর বাহুবলের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন নবাব, যুদ্ধক্ষেত্রেই শহিদ হলেন নবাব ও তাঁর পরিবার। শেষ মুহূর্তে নবাবজাদিকে ক্লাইভের বন্দুকের নলা থাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় এই গল্পের প্রথম ঠগ নাম খুদাবক্স জাহাজি (অমিতাভ বচ্চন)।জীবদ্দশায় বোধহয় জীবনের অন্যতম অ্যাকশন ধর্মী ছবি ভক্তদের উপহার দিলেন বিগ-বি। ৭৫ কোটা পার করা কোন অভিনেতার কাছ থেকে এহেন মারকারি শটের আগে হিন্দি ছবির দর্শকেরা দেখেননি তা বলায় যায়।ধুমধাড়াক্কা ওপেনিং সিনে ছুটন্ত ঘোড়ার পিঠে অমিতাভের আগমনের মানুষ মনে রাখবে বহুদিন।শুরু হল নবাব কন্যা জাফিরার রাজার বিশ্বস্ত খিদমতগার খুদাবক্স ওরফে আজাদ ঠগসকে সাথে নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে লর্ড ক্লাইভের বিরুদ্ধে রাজ্য দখলের প্রাণপণ লড়াই। কাহিনী চিত্র কোথায়ও বাহুবলীর ছায়া অবলম্বনে তৈরি হয়েছে বললে বোধহয় খুব একটা ভুল বলা হবে না। এধরনের একটা পিরিওডিক ছবির চিত্রনাট্য রচনার আগে রিসার্চ এবং ডিটেলিং সম্বন্ধে পরিচালককে আরো অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল। এধরনের ন্যারেটিভ চিত্রনাট্যে ভর করা বলিউডি ছবি ৮০-৯০ এর দশকে দর্শক অনেক প্রত্যক্ষ করেছ।
এবার আসছি আমির প্রসঙ্গে।এ ছবিতে ফিরিঙ্গী নামে এক বিশ্বাসঘাতক ঠগের কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। সত্যি বলতে পাতি কৌতুকরসে ডোবানো ঘ্যানঘ্যানানি মেলোড্রামাতে একেবারি বেমানান লেগেছে আমিরকে।চিত্রনাট্য যাই হোক স্রেফ ষ্টারর্ডমের জোরেই উতরে যায় ছবি গুলি।
পুরো ছবিতে ক্যাটরিনা কাইফ কার্যত ব্রাত্য। যেটুকু সিন আছে তাও আহামরি কিছু নয়। তাঁর অভিনয় শৈলি প্রকাশের কোন যায়গাই নেই। বলা যেতে পারে, জাফিরা চরিত্রে কাজ দেখানোর ভালরকম সুযোগ পেয়েছেন ফতেমা সারা। তা পালনও করেছেন। তবে আবেগী সত্তা প্রকাশে যে তার এখনো যথেষ্ট আড়ষ্ঠতা রয়েছে তা দেখলেই দিব্যি বোঝা যায়।
প্রশংসাযোগ্য কাজ করেছেন প্রডোকশন ডিজাইনার সুমিত বসু রীতিমত খেটে রিসার্চ করে কাজটা করেছেন তাঁর ক্যারিয়ারে করা সেরা ছবিগুলির শীর্ষ তালিকা অলঙ্করণ করে থাকবে এই ছবিটি। চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন নন্দন।
অন্যধারার ছবিতে হাতে খড়ি হয়েছিল পরিচলক বিজয় কৃষ্ণ আচার্যের।ডেবিউ করার জন্য প্লাটফর্ম নেহাত মন্দ ছিল না। যশরাজের ব্যানারে হাতে এপিক ছবিতে অমিতাভ ও আমিরের মতো দুই তুবড়ি। তবে অপটু হাতে বাজি পোড়াতে গিয়ে মুখ পুড়ল বিজয়ের। চিত্রনাট্য লিখতে বসার অগে আরো অনেক বেশি ছবির বিষয় নিয়ে গবেষণা করা দরকার ছিল পরিচালকের।
যতনা চিত্রনাট্য দুর্বল ততধিক দুর্বল পরিচালনা। পরিচালকের মুন্সিয়ানা থাকলে হয়তো উতরে যেত তবে সে কাজে বিজয় একেবারে আনকোরা তা সাফ দেখা গেল।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct