রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে তৃণমূল জিতে চললেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে চরম বিপর্যস্ত হল তৃণমূল। জিতে গেল বিরোধী জোট। যুগদিয়া হাই মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির নির্বাচন ছিল রবিবার। এই নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় চলে আসে যেন বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনের ছায়া। যুগদিয়াতে এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে শুরু করে স্কুলের পরিচালন সমিতি গঠন, কোনও জায়গায় দাঁত ফোটাতে পারেনি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের সংখ্যালঘু মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, বিধায়িকা নমিতা সাহা প্রমুখ সারাক্ষণ তদারকি করেন। তা সত্ত্বেও রেহাই হয়নি। ৬টি আসনের সব কটিতে হেরে গেল তৃণমূল প্রার্থী। আর জিতে গেলেন কংগ্রেস ও বাম জোটের প্রার্থী। নির্বাচনে হেরে গেল তৃণমূল কংগ্রেস। পুনরায় দখল করল সিপিএম-কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীরা। তারা ৬টি আসনের সবকটি দখল নিয়েছে। অভিভাবকদের রায় যে তৃণমূলের পক্ষে নেই তা আবারও বুঝিয়ে দিল যুগদিয়াবাসী। রবিবার রাত আটটা নাগাদ জোট সমর্থিত প্রার্থী আক্রম হোসেন সরদার, সুফিয়া বিবি, মোসলেম ঢালী, মোকলেসুর রহমান মল্লিক, জামাল উদ্দিন সাঁফুই ও সাজাহান সরদারকে জয়ী ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং অফিসার আবদুর রাজ্জাক মণ্ডল।
রবিবার হাই মাদ্রাসার নির্বাচন ঘিরে ছিল বেশ উত্তেজনা। এদিনের নির্বাচনে ২০০-র বেশি নিরাপত্তা কর্মী মোয়াতেন ছিল মাদ্রাসা চত্বরে। নির্বাচন ঘিরে কোনও মতে ঝামেলা সৃষ্টি না হয়, তার জন্য এত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলে জানিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিও মিঠুন কুমার দে। এসডিপিও-র সুরেই কথা বললেন মগরাহাট থানার ওসি দেবাশিষ সরকারও। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে এই নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই ছিল পুলিশের লক্ষ্য। এলাকার মানুষ যেন নিরাপত্তা নিয়ে কোনও রকম অভিযোগ করতে না পারে।
এমন উত্তেজনাপ্রবণ মাদ্রাসা পরিচালন সমিতির নির্বাচন তাঁর অভিজ্ঞতায় আগে ছিল না বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসার আবদুর রাজ্জাক মণ্ডল। তাঁর কথায়, 'ভোট কর্মী হিসেবে আমি বেশ কয়েক ভোট করিয়েছি। সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমার এমন অভিজ্ঞতা নেই যা আজ মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির নির্বাচন এসে দেখলাম। নির্বাচন ক্ষেত্রে দু-একবার চেঁচামেচি হলেও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট ও গণনা সম্পন্ন সম্ভব হয়েছে।'
যুগদিয়া হাই মাদ্রাসা নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল পরাজিত হওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মগরাহাট পূর্বের বিধায়ক নমিতা সাহা জানান, কংগ্রেস ও সিপিএম পরিকল্পনা করে আমাদের হারিয়েছে। তারা উন্নয়ন চায় না। কেন দলের এই ভরাডুবি তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে। তিনি আকক্ষেপের সুরে বলেন, এই অশুভ শক্তি (কংগ্রেস-সিপিএম জোট) এলাকার পঞ্চায়েতও দখল নিয়েছে ।
জানা গেছে, এই ফল নিয়ে ইতিমধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এই বিপর্যয় নিয়ে খুব শীঘ্রই ব্লকের নেতাদের তলব করা হতে পারে বলে জানা গেছে। কেন এলাকায় মানুষের ক্ষোভ তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেই বিষয়টি খতিয়ে দেয়া হবে ব্লক নেতাদের সঙ্গে জেলা নেতাদের বৈঠকে।
এদিকে, যুগদিয়ার জোটের মুখ ও মগরাহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্য জাফর আলি মোল্লা বলেন, শাসক দল এলাকার প্রাথমিক চাহিদা মেটাতে পারছে না। স্থানীয় এক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নয়ন না করে সেখানকার প্রাচীন গাছপালা কেটে কর্মতীর্থ বানাচ্ছে। এ সবই স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার মদদে হচ্ছে। আর বছর খানেক আগে এক তরুণ কংগ্রেস নেতা ও সমাজসেবী বদরুদ্দোজা মোল্লা ওরেফ নন্তকে খুন করে এক দুষ্কৃতি। পরে সে তৃণমূলে যোগ দেয়। তারপর থেকে বিভিন্ন সময় ওই দুষ্কৃতি গন্ডগোল পাকানোয় শান্তিপূর্ণ এলাকা অশান্ত হয়ে ওঠে ও আতঙ্কে তাকে। এটা এলাকার মানুষ মেনে নিতে পারেনি। আর তারই ফল পঞ্চায়েত ও মাদ্রাসা সমিতির নির্বাচনে পড়েছে।
অভিভাবকরা আমাদের উপর ভরসা রেখেছেন। তাদের কথা মাথায় রেখে আমরা মাদ্রাসার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব বলে জানালেন সদ্য জয়ী সদস্য সমাজসেবী আক্রম হোসেন সরদার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct