এ যেন খানিকটা সিনেমার গল্প সত্যি হয়ে উঠে আসা ৷ শৈশবেই মা মারা গিয়েছিল ৷ বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করতেই সত্ মায়ের অত্যাচার নাবালিকার ওপরে ৷ দেখতে না পেরে বাবা পিসি-র কাছে সেই কন্যা সন্তানকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ৷ পিসি পালন করতে না পেরে বিক্রি করে দিয়েছিলেন ৷ উত্তরপ্রদেশ থেকে পালিয়ে ট্রেন ধরে হাওড়া,পরে নদীয়াতে উদ্ভ্রান্ত ঘুরতে দেখে রেল পুলিশ উদ্ধার করে সরকারি হোমে দেয় ৷ সেখানেই হোমের জানালা দিয়ে দুঃখিনীর সঙ্গে পরিচয় কুরিয়ারবয় যুবকের ৷ সাবালিকা হতে মেদিনীপুর শহরের সরকারি হোম থেকে সেই অনাথকে বিয়ে করলেন কুরিয়ার বয়ই ৷ কন্যা দান করলেন অতিরিক্ত জেলা শাসক থেকে সমাজ কল্যান আধিকারিক ৷
উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রানী মুরাও (১৯)৷ রানী মুরাও তখনও শৈশব পার হয় নি ৷ মা মারা গিয়েছিলেন ৷ কয়েক বছরের মধ্যে বাবা ফের বিয়ে করেন ৷ সত্ মা বাড়িতে আসতেই রানী-র খারাপ দিন শুরু হয়ে যায় ৷ অত্যাচার শুরু হয়েছিল রানীর ওপরে ৷ আটকাতে না পারলেও বাবা অত্যাচার থেকে দুরে রাখতে মেয়েকে পিসির বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ৷ পিসি ৯ বছরের সেই নাবালিকাকে কিছুদিন রেখে পরে বিক্রি করে দিয়েছিলেন কারও কাছে ৷ কিন্তু বিক্রি হওয়া সেই নাবালিকা কোনো ভাবে ট্রেন থেকে পালিয়ে অন্য ট্রেনে চেপে উত্তরপ্রদেশ থেকে হাওড়াতে হাজির হয় ৷ পরে সেখান থেকে ফের ট্রেনে চেপে নদীয়ার রানাঘাট ষ্টেশনে হাজির হয় সে ৷ ষ্টেশনে তাকে উদ্ভ্রান্ত ঘুরতে দেখে রেল পুলিশ উদ্ধার করে স্থানীয় সরকারি হোমে পাঠায় ৷ সেখান থেকেই শুরু হয় হোমজীবন ৷ ২০০৯ সাল থেকে সেই হোমে ২০১২ সাল পর্যন্ত কাটায় সে ৷ রাস্তার পাশে হোমের জানালা ধরে প্রায়শই কাঁদতো সে মা কে মনে করে ৷ রোজই জানালার পাশে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকা অসহায় ওই কিশোরীকে দেখে একদিন কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করেছিল স্থানীয় এক কুরিয়ার বয় মহেন্দ্র ভাস্কর ৷ তাঁর দুঃখের কাহিনী শুনে তখন থেকেই সহমর্মিতা জেগেছিল মহেন্দ্রর ৷ রোজই কুরিয়ার নিয়ে যাওয়ার সময়ে জানালা দিয়ে একটু করে কথা বলে কাজে যেত সে ৷ এর থেকেই গড়ে উঠেছিল ভাব ৷ এরই মধ্যে ২০১২ সালে সরকারি নিয়মে ওই কিশোরীকে মেদিনীপুর শহরের সরকারি হোমে বদলী করে দেয় প্রশাসন ৷ সেই খবর দিয়েছিল কিশোরী রানী ৷ পরে মেদিনীপুর শহরে স্থানান্তরিত হলেও সংযোগ ছিন্ন হয় নি মহেন্দ্রর ৷ নদীয়া থেকে ফোনে হোমে ফোন করে অনুমতি নিয়েই কথা বলতো মাঝে মধ্যে ৷ হোমের কর্মীরা সব জেনে এই দুইয়ের সম্পর্কে ভাটা পড়তে দেয় নি ৷ মহেন্দ্র জানায় হোমের অনুমতি নিয়ে সুদুর নদীয়া থেকে কয়েকবার হোমে এসে দেখাও করেছিল ৷ হোম কর্তাদের জানিয়েছিল অসুবিধা না থাকলে সে রানীকে বিয়ে করতে চায় ৷ নাবালিকা থেকে সাবালিকা হতেই ২০১৬ সালে সেই প্রস্তাবকে ক্ষতিয়ে দেখে হোমের সরকারি আধিকারিকরা ৷ জানাযায় বহরমপুরের বাসিন্দা মহেন্দ্র পরিবারে এক মাত্র ছেলে,রয়েছে এক বোনও, যার বিয়ে হয়ে গিয়েছে ৷ মহেন্দ্র নদীয়াতে কুরিয়ার বয় হিসেবে কাজ করতো ৷ সব দেখেই ছেলে ভালো নিশ্চিত করে বিয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয় ৷ সোমবার ছিল সেই মহেন্দ্রক্ষন ৷ যেখানে তাদের চার হাত এক করে দিলেন হোমের আধিকারিকরা ৷ সমস্ত কাজ ফেলে কন্যা দান করলেন অতিরিক্ত জেলা শাসক মধুসুদন চ্যাটার্জী ৷ জেলা সমাজ কল্যান দফতরের আধিকারিক থেকে কর্মীরা কন্যাপক্ষ সেজে দিনভর ধুমধাম করে দিলেন বিয়ে ৷আয়োজনও ছিল বিশাল৷