সকাল থেকেই ফোন আসছে। ফেসবুকেও পোস্ট দেখছি বিষয়টা নিয়ে। কী হয়েছে? একটা সুন্দর সংসার পুড়েছে আজকে। সংসার পুড়েছে? হ্যাঁ, সংসারই তো, পাখিদের সংসার, লাল মুনিয়ার সংসার... পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাজারহাটে। কে বা কারা কর্মটি করেছে, এ অধম জানে না। তবে এ অধমের দুর্বল মন কষ্ট পেয়েছে এটা শুনে যে, লাল মুনিয়ার সুখী গৃহকোনে একটা সুন্দর সংসার ছিল। সেই সংসারের বিছানায় বাচ্চাটি ঘুমিয়েছিল। কিন্তু আগুন লেগে সংসার ছাই হল। ফোনে গুরুজন স্থানীয় এক মানুষ বললেন, মুনিয়ার মা-বাবা ছাই হয়ে যাওয়া ঘাস ঠোঁটে করে সরাচ্ছিল, খুঁজছিল তার সন্তানকে!
জানেন, খুব শঙ্খ ঘোষ মনে পড়ছিল খবরটা শোনার পর—
''এই তো জানু পেতে বসেছি, পশ্চিম
আজ বসন্তের শূন্য হাত –
ধ্বংস করে দাও আমাকে যদি চাও
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।
কোথায় গেল ওর স্বচ্ছ যৌবন
কোথায় কুরে খায় গোপন ক্ষয়।
চোখের সমুখে এই সমূহ পরাভব
বিষায় ফুসফুস ধমনী শিরা।
জাগাও শহরের প্রান্তে প্রান্তরে
ধূসর শূন্যের আজান গান;
পাথর করে দাও আমাকে নিশ্চল
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।
না কি এ শরীরের পাপের বীজাণুতে
কোনই ত্রাণ নেই ভবিষ্যের?
আমারই বর্বর জয়ের উল্লাসে
মৃত্যু ডেকে আনি নিজের ঘরে?''
সত্যিই কি কোনই ত্রাণ নেই ভবিষ্যের? মহানগরের উপকণ্ঠে জলাভূমি বাঁচিয়ে রাখার জন্য আদালতের নির্দেশে একদশক আগে ইস্ট কলকাতা অথরিটি তৈরি করে নজির গড়েছিল রাজ্য সরকার। তা সত্ত্বেও এত করুণ ঘটনা আজ ঘটে চলেছে। কিছু মানুষ সচেতন নয় বলেই হয়তো আজ এই করুণ ঘটনাটি ঘটেছে। আমাদের তাদের সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে বোঝাতে হবে জলাভূমির গুরুত্ব। জলাভূমি ঠিক থাকলে তো আমাদেরই ভালো।
কবির ভাষায়, 'আমরা সবাই রাজা'... দোষ নেই কারোর, অথচ দায় আছে। 'আমারই হাতে এত দিয়েছ সম্ভার / জীর্ণ করে ওকে কোথায় নেবে? / ধ্বংস করে দাও আমাকে ঈশ্বর / আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।' সন্ততিরা স্বপ্নে থাক। ওরা ভালো থাক। আর যেন ওদের ঘর না পুড়ে যায়। আর যেন আমাদের মন পুড়ে খাঁক না হয়ে যায়। আর যেন কোনও পাখিকে পোড়া ঘাস ঠোঁটে করে সরিয়ে সরিয়ে তার সন্তানের ছাই দেখতে না হয় !!!!!!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct