এই মুহূর্তে ক্রিকেট গোটা বিশ্বের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। যেকোনো খেলার চেয়ে এখানে ক্রিকেটারদের আয় বেশি। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের আকাশচুম্বী তারকাখ্যাতি, অতি উচ্চ আয় এবং উন্নত জীবনযাত্রা অনেকের কাছে ঈর্ষার কারণ। এমনকি জাতীয় দলের বাইরে আছেন এমন ক্রিকেটারদের উপার্জনও নেহাত কম নয়। অথচ বাংলাদেশের জনপদ শরীয়তপুরে একটা সাধারণ রেস্টুরেন্টে কাজ করতে দেখা গেল সে দেশেরই জাতীয় প্রতিবন্ধী দলের এক ক্রিকেটার রাসেল শিকদারকে। তাঁর এমন দূরবস্তা কারণ উল্লেখ করে রাসেল বলেন, 'আমার একবছর বয়সের সময় টাইফয়েড জ্বর হয়। তখন আমি ভাবতাম না যে আমার এইরকম একটা সমস্যা হবে। আমি যে প্রতিবন্ধী হয়ে যাবো তা কখনো আমার চিন্তা-ভাবনাতে আসেনি। তবুও বড় হওয়ার সাথে সাথে খেলা চালিয়ে যেতে থাকি। অনেকে অনেক কথা বলতো যে, তুই খেলে কি করবি? জবাবে বলতাম, খেলাটা আমার ভালো লাগে, ভালোবাসি এটাকে। দেখি কতদূর যাওয়া যায়। খেলার জন্য এসএসসি পরীক্ষাটাও আমি দিতে পারিনি। যখন আমার টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয় তখন আমি প্রথম অনূর্ধ্ব-১৮ গ্রুপে চান্স পাই। তখন আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি, আর এরপর থেকে পড়া লেখাটাও আর ওইরকমভাবে হয়ে ওঠেনি।’
একটু থেমে নিজের ক্রিকেট জীবন সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে প্রথম শারীরিক প্রতিবন্ধী ন্যাশনাল ক্যাম্পে চান্স পাই। ২০১৪ সালেই ভারতে এশিয়া কাপ খেলতে যাই। এছাড়া দুবাই গিয়েছি। ইংল্যান্ড এবং ভারতেরও গিয়েছিলাম।কয়েকটা টুর্নামেন্টে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছি।'কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের জন্য আলাদা বিভাগ খোলার কথা বলেছিলেন। যদিও এর বাস্তবায়ন হয়নি। বেতনভুক্ত খেলোয়াড়ের কোনও প্রথা না থাকায় অনেক খেলোয়াড়ই খেলা ছেড়ে দিচ্ছেন। বলে জানান রাসেল। তিনি আরও বলেন, 'প্রতিদিন প্র্যাকটিস করতে গেলে, একটা বল কিনতে গেলে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা লাগে। আমি স্ট্রাইক বোলার, আমাকে সবসময় নতুন বল দিয়ে বল করতে হয়। সেই সামর্থ্যটা আমার নাই। এজন্যই এখন আমার এই রেস্টুরেন্টে কাজ করতে হয় নিজের অর্থ যোগানোর জন্য। মাশরাফি, সাকিব ওরা যেরকম বেতনভুক্ত, আমরা ওরকম বেতনভুক্ত না। এখন বেতনভুক্ত যদি না হয় তাহলে আমাদের চলাফেরার সমস্যা হয়।'
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct