আপনজন ডেস্ক: চোখ বন্ধ করলে সেই সব দিনটার কথা মনে পড়ে আজও। বাংলার স্যার প্রণববাবু শ্রুতি লিখনের খাতা দেখছেন। একটাও বানান নেই দেখে কাছে ডেকে নিলেন আমাকে। পকেট থেকে চকোলেট বের করে হাতে দিয়ে বলছেন, 'গোলাম রসুল, তোর হবে। পড়াশোনা চালিয়ে যা'।
প্রণব স্যারের উৎসাহে মনে জোর পেয়েছিলাম। তখন থেকে ক্লাসে কখনও সেকেণ্ড হইনি। আমার যা কি কিছু হয়ে ওঠা, পড়াশোনা শেষ করে ওই স্কুলেই মাষ্টারি চাকরি পাওয়া সবটা প্রণব স্যারের জন্যই। ইহজগতে তিনি নেই, ভাবতে পারছি না।' ৬২ বছর আগের অমলিন স্মৃতি গড়গড় করে বলে গেলেন প্রবীন সেখ গোলাম রসুল।
১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন হাওড়ার বাঁকড়া ইসলামীয়া হাইস্কুলের শিক্ষক। '৫৭ তে ইতিহাস, '৫৮তে ইংরাজি ও '৫৯ সালে বাংলা, ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন ছাত্র ও অভিভাবকদের কাছে। তিনি যা পড়াতেন বাড়িতে সেই পড়া আর পড়তে হত না। যোগ্য শিক্ষাবিদ ছিলেন প্রণব বাবু। মেধাবী ছাত্র হিসেবে গোলাম রসুল পেয়েছেন স্নেহের প্রশ্রয়। তিনি জানাচ্ছেন, ক্লাসের ফার্স্টবয় হিসেবে প্রণব স্যার শুধু স্নেহ দেননি, বলতেন, 'যখন খুশি চলে আসবি। তোকে বড় হতে হবে।' ১৯৫৯ তে স্যার রযদিন স্কুল ছেড়ে চলে গেলেন। কান্নার রোল পড়েছিল ছাত্রদের।
১৯৭২ সাল। শিল্প উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ইসলামীয়া হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক। মন্ত্রীকে স্কুলের প্রাক্তনীরা সংবর্ধনা দিলেন। তিনি এসেছিলেন। অনেকগুলো বছরের গ্যাপ। সভায় এসে তিনি ঠিক চিনতে পারলেন অামাকে। মুচকি হেসে ঘাড়ে হাত রেখে বললেন, 'যে স্কুলে পড়েছ, সে স্কুলেই চাকরি পেয়েছ। তোমার শিক্ষক হিসেবে গর্ব হচ্ছে।' বলতে গিয়ে আবেগপ্রবন হয়ে পড়লেন বাঁকড়া বাদামতলার বাসিন্দা প্রবীণ গোলাম রসুল।
শোক সামলে গোলাম সাহেব বললেন, 'সেই শেষ। আর দেখা হয়নি প্রিয় প্রণব স্যারের সঙ্গে।' ২০১৫ তে তিনি রাষ্ট্রপতি হলেন। দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি। সেই গর্বে ইসলামীয়া হাইস্কুল ছুটি দেওয়া হয়েছিল। সে সব কথা বাঁকড়ার চায়ের দোকানে, মোড়ের আড্ডায় আলোচিত হচ্ছে। বাঁকড়ার মানুষ ভুলবেন না প্রণব স্যারকে। বললেন গোলাম স্যার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct