সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে ফের মাথা তুলেছে কোভিড। সেখানে বাড়ছে কোভিড আক্রান্তদের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি, যে ভ্যারিয়েন্ট এই ৩ দেশে দাপট দেখাচ্ছে তা ভারতে রয়েছে গত বছর থেকেই। তাই নতুন করে এই ভাইরাস এ এদেশে মৃত্যুর তান্ডব চালাতে পারবে না। সেই কারনেই দেশে ন্যাজাল ভ্যাক্সিন এসে গেলেও সবাইকে তা নিতে হবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের এই কথায় কান দিচ্ছে কে! এমনিতেই বাঙালি হুজুগ প্রিয়। তার ওপর কোভিড আতঙ্ক তাঁদের এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এই অবস্থায় গত কয়েক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে রাজ্যে বুস্টার ডোজনেওয়ার জন্য টিকাকেন্দ্রগুলিতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আর তাই রাজ্যে আবারই টিকাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন।২০২২ সালের প্রথম দিক থেকেই রাজ্যে কমতে শুরু করে দিয়েছিল কোভিডের প্রকোপ। তার জেরে আমজনতার মধ্যে আগ্রহ কমেছিল বুস্টার ডোজ নিয়ে। তাই রাজ্য সরকারও বাংলায় টিকা কেন্দ্রের সংখ্যাও কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু নতুন করে ফের কোভিডের আতঙ্ক মাথাচাড়া দিতেই রাজ্যে বাড়তে শুরু করেছে বুস্টার ডোজ নেওয়ার পালা। দেখা যাচ্ছে গত ১ সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্যে এখন দিনপ্রতি বুস্টার ডোজ নেওয়ার সংখ্যা প্রায় ২ হাজার বেড়ে গিয়েছে। ১ সপ্তাহ আগেই যেখানে ৩০০ জনের মতো মানুষ বুস্টার ডোজ নিচ্ছিলেন, এখন সেখানে নিচ্ছেন প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। স্বাভাবিক ভাবেই আগামী দিনেও যে বুস্টার ডোজ নেওয়ার জন্য বাংলার টিকাকেন্দ্রগুকিতে ভিড় বাড়বে তা আগাম আঁচ করেই এবার রাজ্য সরকার বাংলায় টিকাকেন্দ্র বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই ইতিমধ্যেই নবান্ন থেকে জেলায় জেলায় মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে নির্দেশ চলে গিয়েছে নিজ নিজ জেলায় টিকা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। যদিও রাজ্যে এখন টিকার নিদারুণ আকাল চলছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের দাবি, যাতে রাজ্যে টিকা ঢুকলেই দ্রুততার সঙ্গে তা আমজনতাকে দেওয়া যায় তার জন্য প্রস্তুতি সেরে রাখা হচ্ছে। সেই সূত্রেই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে নির্দেশ গিয়েছে নবান্ন থেকে।ওমিক্রনের নয়া ভ্যারিয়েন্ট বিএফ.৭’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই দেশের সব কটি রাজ্যকে বেশ কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। যার মধ্যে রয়েছে বুস্টার ডোজ়ে গতি আনার বিষয়টি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্র বুস্টারের কথা বললেও দেশের কোথাও প্রায় টিকার স্টক তেমন মজুত নেই। বাংলাও ব্যতিক্রম নয়। কলকাতার বাগবাজার সেন্ট্রাল স্টোরে কোভিশিল্ড নেই। কোভ্যাক্সিনের পরিমাণও সামান্য। সে কথা রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে কেন্দ্রকে। যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, টিকার জোগানে সমস্যা হবে না। খুব শীঘ্রই রাজ্যে পর্যাপ্ত টিকা পাঠানো হবে। তাই রাজ্য যেন টিকা কেন্দ্র বাড়ানোর প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। তার পরেই টিকা কেন্দ্র বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন। বুস্টার ডোজ় চালুর সময়ে কলকাতা পুরনিগম এলাকায় ১৫২টি টিকাকেন্দ্রে চালু ছিল। এখন সেখানে মাত্র ১৬টি কেন্দ্র চলছে। একই অবস্থা রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতেও। তবে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল গ্রুপ অন ইমিউনাইজেশন বা এনটিএজিআই’র তরফে জানানো হয়েছে, যাঁরা ইতিমধ্যেই বুস্টার টিকা নিয়ে নিয়েছন তাঁরা ভারত বায়োটেকের নাকে দেওয়ার কোভিড টিকা ইনকোভ্যাক নিতে পারবেন না। এই টিকা তাঁদের জন্যই যাঁরা এখনও বুস্টার টিকা নেননি। কো-উইন পোর্টালে কেউ চতুর্থ বার কোভিড টিকার জন্য নাকে দেওয়া টিকার বুকিং করলে তা গ্রহণ করা হবে না। কেননা যদি কোনও ব্যক্তিকে বার বার একটি নির্দিষ্ট ধরনের অ্যান্টিজেন দিয়ে টিকা দেওয়া হয়, তবে তাঁর শরীরে সেই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।সেখান থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, এই টিকা কেবল কোভিডের বিরুদ্ধে নয়, শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে এমন যে কোনও ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতেও সফল হবে। ১৮ বছর বয়েসের ঊর্ধ্বে যে কেউ এই টিকা নিতে পারবেন। এই টিকা নেওয়ার পর কিছু ক্ষণের জন্য নাক বন্ধ হতে পারে, এ ছাড়া এই ভ্যাকসিনের অন্য কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। উল্লেখ্য, ভারত বায়োটেকের নাকে দেওয়ার কোভিড টিকা ইনকোভ্যাক টিকার এক একটির দাম পড়বে ৮০০ টাকা। তবে বেসরকারি হাসপাতালে এই টিকার দামের সঙ্গে ৫ শতাংশ জিএসটি যুক্ত হবে। ফলে জিএসটি নিয়ে এই টিকার দাম দাঁড়াবে ৮৪০ টাকা। সরকারি হাসপাতাল থেকে এই টিকা নিলে ৫ শতাংশ জিএসটি ছাড়া এর দাম পড়বে ৩২৫ টাকা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct