আপনজন ডেস্ক: প্রশ্নটা এভাবেও হতে পারতো—ঘড়ির কাঁটা স্বাভাবিকভাবেই ঘোরে কেন? উল্টো দিকে কেন ঘোরে না? ঘড়ির কাঁটা সবসময়ই ডান দিকে ঘোরে, কখনোই বাম দিকে ঘোরে না। কিন্তু বামে ঘুরলেও তো পারতো, এমনটা মনে হতেই পারে আপনার! এটিরও কিন্তু নির্দিষ্ট কারণ আছে! এই প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে মিশে আছে মানব সভ্যতার ইতিহাস। ২৪ ঘণ্টা সময় মাপার যন্ত্রের নাম ঘড়ি। পৃথিবীর সব থেমে থাকলেও থেমে থাকে না ঘড়ির কাঁটা। লাতিন ‘ক্লক্কা’ থেকে এসেছে ইউরোপের ‘ক্লক’, শব্দটির বাংলা অর্থ ঘড়ি। ইতিহাস মতে, প্রথম ঘড়ির মডেল তৈরি হয় ইউরোপে। এরপর প্রথম সচল ঘড়ি আবিষ্কার হয়েছিল ইংল্যান্ড বা ইউরোপের কোনো দেশে। সেও প্রায় ৭০০ বছর আগের কথা। আদিকালে এখনকার মতো ঘড়ি ছিল না। ছিল সূর্যঘড়ি। ইংল্যান্ড পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে হওয়ায় সূর্য দক্ষিণ আকাশে হেলে থাকে। এ কারণে সূর্যঘড়ির যে দণ্ডের ছায়া দেখে সময় পরিমাপ করা হয়, সেই ছায়াটি বাম দিক থেকে ডান দিকে ঘোরে। কারণ, ওই স্থানটি উত্তর গোলার্ধে। ওখানে সূর্য যখন পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়, তখন সূর্যঘড়ির দণ্ডের ছায়াটি বাম থেকে ডান দিকে ঘোরে। তাই ঘড়ি আবিষ্কারের সময় স্বাভাবিক ও অভিজ্ঞতালব্ধ চিন্তা অনুযায়ী ঘড়ির কাঁটা ডান দিকে ঘোরানোর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে যদি ঘড়ি আবিষ্কার হতো, তাহলে হয়তো ঘড়ির কাঁটা বাম দিকে ঘুরত। কারণ, দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যঘড়ির ছায়া উত্তর গোলার্ধের বিপরীত দিকে, অর্থাৎ ডান দিক থেকে বাম দিকে ঘোরে! এখন প্রশ্ন হল, পশ্চিম-পূর্বের সঙ্গে বাম ও ডানের কী সম্পর্ক? এবার তাহলে একটা মানচিত্র নিয়ে বসা যাক। মানচিত্রের ওপরের দিকে একটা দিকনির্দেশক চিহ্ন থাকে। তার পাশে লেখা থাকে এন বা নর্থ। মানে, মানচিত্রের ওপরের দিকটা হল নর্থ, বাংলায় যাকে বলে উত্তর। আর নিচের দিকটা হল দক্ষিণ। তাহলে হিসাবে বাঁ দিকে পড়ে পশ্চিম আর ডান দিকে পূর্ব দিক। এ কারণেই ঘড়ির কাঁটা বাম দিক থেকে ডান দিকে যায়। মানে, আসলে ওটা বাম থেকে ডানে না, বলা উচিত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যায়।
সবচেয়ে প্রাচীন যে ঘড়িগুলো, সেগুলোতে কিন্তু কাঁটার ঘোরাঘুরির কোনো বিষয় ছিল না। মিসরীয়রা এই সূর্যঘড়ি বানানো শিখেছিল খ্রিস্টের জন্মেরও সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। এ রকম আরেকটা ঘড়িকে বলা হয় ‘শ্যাডো ক্লক’। ওটা বানিয়েছিল ব্যাবিলনীয়রা, খ্রিস্টের জন্মের হাজার দেড়েক বছর আগে। এই সূর্যঘড়িগুলোতে সময় দেখা হতো সূর্যের ছায়া দেখে। অর্থাৎ সময়-নির্দেশক যে কাঁটা বা দণ্ড, সেটা স্থির থাকত। সূর্যের আলোয় সে কাঁটার ছায়ার পরিবর্তন দেখেই সময় হিসাব করা হতো। ইতিহাস মতে, কাঁটা ঘুরে ঘুরে যেসব ঘড়ি সময় জানান দেয়, সেগুলো প্রথম বানানো হয় ১৩ শতকে। তবে তখনই এই ঘড়িগুলো তেমন জনপ্রিয় হয়নি। হবে কী করে, তখনো যে মানুষের সময় দেখার তেমন দরকারই পড়েনি। সূর্য দেখেই মানুষ দিব্যি বুঝে নিত যে এখন সকাল না দুপুর, বিকেল না সন্ধ্যা। সময় নিয়ে এরচেয়ে বেশি মাথা ঘামানোর তেমন দরকারই ছিল না। এরও মোটামুটি ৪০০ বছর পরে, ১৮ শতকে যখন কলকারখানা বসতে শুরু করল, তখন মানুষের নির্দিষ্ট করে সময় দেখার দরকার হতে শুরু করল। নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় যেতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কাজে লাগতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ে ছুটি হবে, কারখানার নিয়মটাই যে তেমন! তখন সবার ওই কাঁটাওয়ালা ঘড়ির দরকার পড়ল, যাতে সবাই সময়মতো সব কাজ করতে পারে। ফলে ঘড়িও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠলো।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct