গাজায় নির্বিচার হামলার পাশাপাশি পশ্চিম তীরেও প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চললেও ইসরায়েল তাদের উসকানি দিতে এমন কাজ করছে। ফলে পিএ একদিকে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েলকেও খুশি রাখতে পারছে না। গতকাল আল–জাজিরায় লিখেছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জেনা আল তাহান।
৮ ডিসেম্বর ভোর। চারদিকে সুনসান নীরবতা। ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের রামাল্লার কেন্দ্রস্থলে আল–মানারা স্কয়ারে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কয়েক ডজন সাঁজোয়া যান নিয়ে এসে ওই এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। ওই এলাকার দূরত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সদর দপ্তর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার। সেখানে একটি দোকান বন্ধ করে দিল সেনারা। সেই দোকানের বাইরে তারা একটি পোস্টার সেঁটে দিল, যাতে লেখা ছিল, ‘এই দোকানের মালিক সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন ও সহায়তা করে।’রামাল্লায় যেকোনো সশস্ত্র প্রতিরোধের বিপক্ষে কঠোর অবস্থানে পিএ। সুতরাং পিএ সদর দপ্তরের কাছে এমন একটি জায়গায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা গোলাবারুদ নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়েছেন—বিষয়টি আশ্চর্যের বৈকি।একজন স্থানীয় সাংবাদিক জানালেন, আল–মানারা স্কয়ারে সর্বশেষ ২০০৬ সালে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছিল।ইসরায়েলি বাহিনী পরে রামাল্লায় আরও দুই দিন অভিযান চালিয়েছিল। বিশ্লেষকেরা আল–জাজিরাকে বলেন, অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিয়মিতই ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালায়। কিন্তু সম্প্রতি পরিচালিত এই অভিযানের গুরুত্ব অনেক বেশি।রামাল্লাভিত্তিক বিশ্লেষক ইসমাত মনসুর বলছিলেন, এই অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর শক্তি প্রদর্শন। পাশাপাশি পিএকে উসকানি দেওয়া ও ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করা।ইসমাত মনসুর বলেন, ‘আমরা যদি এই কর্মকাণ্ডকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মত্রিচের সাম্প্রতিক বিবৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখি, তাহলে দেখা যাবে, সেখানে পিএর বিরুদ্ধে কেবল উসকানি ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলের উদ্দেশ্য হচ্ছে পিএকে বিব্রত করার পাশাপাশি আরও দুর্বল করে তোলা।’মনসুর বলেন, রামাল্লায় পিএর সদর দপ্তরের খুব কাছে আল–মানারায় অভিযান পরিচালনা বা গোলাগুলির জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে কোনো নিরাপত্তার অজুহাত দেখাতে হয় না।গত ৭ অক্টোবর গাজার শাসক হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালান। এ সময় অন্তত ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি ও কিছু বিদেশি নাগরিক নিহত হন। এর বাইরে ২০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে তাঁরা বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসেন।হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা শুরু করে। ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ১৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭ হাজার ৭০০ জনের বেশি শিশু রয়েছে।
যুদ্ধ–পরবর্তী ধাপ
গাজায় ইসরায়েলের হামলা যখন তৃতীয় মাসে পড়েছে, তখন ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি কর্মকর্তারা একটি বিষয় নিয়ে খোলাখুলি কথা বলছেন। আলোচনার বিষয়বস্তু হলো, ইসরায়েল যেমনটা বলছে, সে অনুযায়ী যদি হামাসকে নির্মূল করা হয়, তাহলে যুদ্ধ–পরবর্তী গাজায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের চিত্রটা কেমন হবে।বিগত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়েছেন, হামাসকে সমূলে উৎপাটনের পর গাজা শাসন করতে পারে পিএ। তবে অনেক পর্যবেক্ষক এমনটি মনে করেন না। এমনকি ইসরায়েলের শীর্ষ কর্মকর্তারাও ওই পরামর্শের বিরোধিতা করেছেন।মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বলেছে, তারা চায় না গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করুক। গাজা দখল কিংবা উপত্যকার বাসিন্দাদের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য করারও বিরোধিতা করছে মার্কিন সরকার।গত নভেম্বরের শুরুর দিকে মাহমুদ আব্বাস বলেছিলেন, একটি ‘রাজনৈতিক সমাধানে’ পৌঁছানোর ওপর গাজায় পিএর প্রত্যাবর্তন নির্ভর করছে। ওই সমাধানে পৌঁছানো গেলে ১৯৬৭ সালে নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে। এর রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।তবে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ বা পিএ নিয়েও সমস্যা রয়েছে। পিএ–প্রধান আব্বাসের অনেক বয়স হয়েছে। আবার এটাও সত্যি, পিএর নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে প্রায় দুই দশকে কোনো নির্বাচনের আয়োজন করা হয়নি।পশ্চিম তীরের বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদেল জাওয়াদ হামায়েল মনে করেন, গাজার যুদ্ধ–পরবর্তী অবস্থা কেমন হবে, তা এত দ্রুত আঁচ করা সম্ভব নয়। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। এটা উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে এখন পর্যন্ত গাজায় হামাসের সামরিক অবকাঠামোগুলো পুরোপুরি নির্মূলে সফল হয়নি ইসরায়েল। এর অর্থ ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে আমরা এখনই কথা বলতে পারি না।’এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি কর্মকর্তারা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় তাঁরা যে পরিসরে হামলা চালাচ্ছেন, তার ব্যাপকতা কমানো হবে। আবদেল জাওয়াদ বলেন, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনার অর্থ হলো—গাজার আরও ভেতরে গিয়ে অভিযান চালাবে তারা। এতে করে দীর্ঘ সময় তারা উপত্যকাটিতে সামরিক উপস্থিতি ধরে রাখতে পারবে।আবদেল জাওয়াদের মতে, এমনটি হলে, কয়েক মাস কিংবা বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় যা ইচ্ছা, তাই করতে পারবে। ফিলিস্তিনের বেসামরিক লোকজন বা স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের হত্যা বা গ্রেপ্তার করতে খুব কম বাধা পাবে তারা।
ইসরায়েলের স্বার্থে কি টিকে থাকবে পিএ
১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন (পিএলও) ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো শান্তি চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) গঠিত হয়েছে। এটি ছিল অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ, চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ বছর মেয়াদের এই কর্তৃপক্ষ দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।অসলো চুক্তির ৩০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ইসরায়েলের দখলদারি, কঠোর বিধিনিষেধ, অবৈধভাবে ভূমি দখল ও বসতি স্থাপনের মুখে রাষ্ট্র গঠনে ব্যর্থ হয়েছে পিএ। এর মধ্যে ২০০৭ সালে হামাসের কাছে গাজার নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা।পশ্চিম তীরে বসবাসকারী অনেকেই পিএকে পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি ঠিকাদার হিসেবে মনে করেন। অসলো চুক্তিতে পিএকে ইসরায়েলের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির কথা বলা হয়েছে। ‘নিরাপত্তা সমন্বয়ের’ নামে এই নীতি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। এতে সশস্ত্র প্রতিরোধ দমন, গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইসরায়েলকে সহায়তার কথা বলা হয়েছে।বিশ্লেষকেরা বলছেন, পশ্চিম তীরের ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি দখলদারদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে পিএ। গত বছরের ডিসেম্বরে নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব ডানপন্থী দল ইসরায়েলের ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা পিএকে ভেঙে দিতে চাইছে। মনসুর বলেন, এটা ঠিক, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থা চায় পিএর অস্তিত্ব যেন টিকে থাকে। এটি তাদের একটি কৌশল। কিন্তু ইসরায়েলের ডানপন্থীরা চাইছে, যতটা সম্ভব পিএকে দুর্বল করে রাখতে।‘ইসরায়েল পিএকে দূরে সরাতে চায়’ বলে মনে করেন আবদেল জাওয়াদও। তিনি বলেন, ‘পিএ ফিলিস্তিনিদের শাসন করছে—এমনটা দেখতে চান না নেতানিয়াহু সরকারের অনেকে। এমনকি পিএ যদি ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতা করে চলে এবং পশ্চিম তীরে উল্লেখযোগ্য কোনো বাধা ছাড়াই ইসরায়েলিদের বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দেয়, তারপরও।’আবদেল জাওয়াদ মনে করেন, শেষ পর্যন্ত পিএ যদি গাজা শাসনের দায়িত্ব পায়, তাহলে ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল যেসব ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলে করেছিল, তা একত্র হয়ে যাওয়ার একটি সম্ভাবনা থাকবে। এতে করে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করতে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে শত শত অবৈধ বসতি স্থাপনকারীকে ইসরায়েলে সরিয়ে নিতে হবে। এসব জায়গায় সুরক্ষিত অবকাঠামো গড়ে তুলে বসবাস করছেন অন্তত সাত লাখ ইসরায়েলি। অবকাঠামোগুলোর বেশির ভাগই যেসব জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো আংশিক বা পুরোপুরি মালিকানা রয়েছে ফিলিস্তিনিদের।আবদেল জাওয়াদ বলেন, নেতানিয়াহুর স্বপ্ন, দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান যেন ব্যর্থ হয়। ডানপন্থীদের কাছে তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তাঁদের সমর্থন থাকলে তিনি পশ্চিম তীরে নির্বিঘ্নে বসতি স্থাপন অব্যাহত রাখতে পারবেন। একই সঙ্গে গাজায় পিএর নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা বা কূটনীতিতে বাধা দিতে পারবেন।
পিএর জনপ্রিয়তা কমছে
গত দশকে পিএর জনপ্রিয়তা কমেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা অর্থনৈতিক সংকটের কারণেই তারা জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। গাজা ঘিরে সংঘাত এবং সহিংস উপায়ে ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনের কারণে এই অর্থনৈতিক সংকট ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে।ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব নিজার বানাত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর ২০২১ সালের জুনে বিক্ষোভ দেখা দিলে আব্বাসের পদত্যাগের দাবি ওঠে। এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণের জেরে। গাজায় সর্বশেষ ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর তা নতুন গতি পেয়েছে।গাজা শহরের আল-আহলি হাসপাতালে ইসরায়েলের বোমা হামলায় কয়েক শ মানুষ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গত ১৭ অক্টোবর পশ্চিম তীরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সে সময় জেনিনে ফিলিস্তিনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ১২ বছরের এক মেয়েশিশু মারা যায়। ইসরায়েল সহিংস সামরিক আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি অবৈধ বসতি স্থাপন জোরদার করায় ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক সমাধানের পথ ক্রমে সংকুচিত হয়েছে। পক্ষান্তরে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সশস্ত্র প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষাও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলীয় শহর জেনিন, নাবলুস ও তুলকারেমে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হামায়েল বলেন, রামাল্লাসহ পুরো অঞ্চলে প্রতিদিন ইসরায়েলি সেনাদের তল্লাশি অভিযান নতুন কিছু নয়। এখানে নতুন হচ্ছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধযোদ্ধাদের সশস্ত্র সংঘাত। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের জনগণ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে তাদের জাতীয় প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করে, এমনটি আমি মনে করি না।এটা ঘটেছে এ কারণে যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এত দিন ধরে যেভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সামলেছে, তা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সুস্পষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা এবং পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দমনমূলক অবস্থান সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখায় তাদের বিষয়ে জনগণের মধ্যে এই অবস্থান তৈরি হয়েছে।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct