আমিরুল ইসলাম, বোলপুর, আপনজন: বিশ্বভারতীর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ। বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ করছে। অমর্ত্য সেনের এহন মন্তব্যের ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই বিস্ফোরক প্রেস রিলিজ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। তিনি যতই জগৎবিখ্যাত শিক্ষাবিদ হোক না কেন অন্যায় ভাবে আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বিশ্বভারতী জমি দখল করে রাখবে। বিশ্বভারতী প্রশাসন যেকোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না। অমর্ত্য সেনকে পরিযায়ী এবং পরিব্রাজক বলে কটাক্ষ করা হয়। অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর চলা অশান্ত পরিবেশের ফসল তুলেছেন এবং বিশ্বে বিশ্বভারতীকে পণ্যদ্রব্য করে ফায়দা লুটেছেন। এই ধরনের মেকি রাবীন্দ্রিক যাতে পবিত্র স্থানে জায়গা না পান তার জন্য বিশ্বভারতী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অমর্ত্য সেনের নাম না করে তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক প্রেস রিলিজ বিশ্বভারতীর। পাশাপাশি ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বিস্ফোরক মন্তব্য বিশ্বভারতীর। বিজ্ঞপ্তিতে লেখা অমর্ত্য সেনকে নিয়ে। তিনি যতই জগৎ বিখ্যাত হোন না কেন, জমি হরপকারী হিসেবে বিশ্বভারতী দৃষ্টিভঙ্গিতে দোষী এবং অপরাধী। পাশাপাশি চাটুকারি শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের সাবধান হুমকি বিশ্বভারতীর। বৃহস্পতিবার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন বিশ্বভারতীর ভাবপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই প্রেস রিলিজে বিশ্ববরেণ্যখ্যাত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে নিয়ে এহেনও বেনজির আক্রমণ করা হয়েছে। যা নিয়ে সরব বিশ্বভারতীর পড়ুয়া থেকে শুরু করে অধ্যাপক, প্রাক্তনী এবং আশ্রমিকরা। সমস্ত স্তরেই তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত চলতি বছর শুরুতেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অমর্ত্য সেনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল তার বাড়ি শান্তিনিকেতনের প্রতিচিতে ১৩ শতক জমি বিশ্বভারতীর। অমর্ত্য সেন তা অবশ্য বিশ্বভারতীর দাবি অস্বীকার করেছেন। অমর্ত্য সেন বলেছিলেন এই জমি তার পৈত্রিক সম্পত্তি। পরবর্তী সময়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আইনি হুঁশিয়ারি নোটিশ দেয় অমর্ত্য সেন কে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে বলে, জমি না ছাড়লে জোরপূর্বক দখল নেওয়া হবে। যদিও অমর্ত্য সেন আদালতের দ্বারস্থ হন। কোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। জমিতে জোরপূর্বক কিছু করা যাবে না। যতদিন না মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে। এখানেই থেমে থাকেনি এরাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। নাম না করে বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী অমর্ত্য সেনকে কখনো বলেছেন জমি হরণ কারী। কখনো আবার বলেছেন জমিহাঙর। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মন্তব্যে গর্জে ওঠে আপামর বাঙালি এবং অমর্ত্য প্রেমী মানুষজন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনি স্বয়ং শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়িতে ছুটে এসেছিলেন। রাজ্য সরকারের ভূমিদপ্তরের কাগজপত্র অমর্ত্য সেনের হাতে তুলে দেন মমতা। অমর্ত্য সেন বিশ্ববরেণ্যখ্যাত একজন মানুষ। তার অপমান মানে বাঙালি জাতির অপমান। মুখ্যমন্ত্রী আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, অমর্ত্য সেনের বাড়ি ভাঙতে এলে সবার আগে আমি গিয়ে দাঁড়াবো। আন্দোলন গড়ে তুলবো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বাংলার বিশিষ্টজনেরা শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ির সামনে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ধরনা মঞ্চে স্বামীল হয়েছিলেন বিশিষ্ট চিত্রকর শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, চিত্র শিল্পী যোগেন চৌধুরী সহ বিশিষ্টজনেরা। আবারো বিশ্বভারতীর দেওয়া প্রেস রিলিজে বেনজির আক্রমণ অমর্ত্য সেনকে। নজির হীন আক্রমণের ঘটনায় আগামী দিনে আরো জলঘোলা হবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধের শান্তিনিকেতনে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct