আপনজন ডেস্ক: সম্প্রতি গাজাবাসীকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তরের প্রস্তাব করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই প্রস্তাবনাকে উদ্বেগের দৃষ্টিতে দেখছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা। গত সপ্তাহে দেয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প গাজাকে ধ্বংসস্তুপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরপর সেটাকে পরিষ্কারের ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি। একইসাথে মিসর ও জর্ডানকে প্রস্তাব দেন, যেন তারা গাজাবাসীদের পুনর্বাসন করে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বিতর্কিত প্রস্তাবকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করেছে উভয় দেশ। সোমবার ফের একই অবস্থান ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। এ সময় তিনি দাবি করেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। তবে মিসরের কর্মকর্তারা এমন কথোপকথনন অস্বীকার করেছেন। মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বিশ্লেষক মিরেট মাবরুক বলেন, ‘ট্রাম্পের অনড় অবস্থান দেখে মনে হয়, তিনি এই বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্টরা এই জাতীয় কথাবার্তা বন্ধুত্বপূর্ণ আবেদন হিসেবে বলেন না।’ তিনি আরো বলেন, ট্রাম্প এর আগে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহের সাথেও একই বিষয়ে কথা বলেছেন। এর থেকে বুঝা যায়, ওয়শিংটন এ বিষয়ে আঞ্চলিক নেতাদের উপর চাপ প্রয়োগ করতে চায়। এহেন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক একটি সংবেদনশীল পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন জর্ডান ও মিসরের কাছে তার এমন সব চাহিদা পেশ করবে, যা গ্রহণ করা দেশ দু’টির জন্য অত্যন্ত কঠিন হবে। ট্রাম্পের এমন প্রস্তাবনা ইসরাইলকে আবারো গাজায় উপস্থিত হতে আগ্রহী করে তুলবে। বিশেষ করে ইসরাইলের অতিডানপন্থী নেতারা ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করে গাজা দখল করতে চায়। ফলেট্রাম্পের এই প্রস্তাবনাকে এগিয়ে নিতে তারা সাহায্য করবে। ইতোমধ্যে ইসরাইলের অতিডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গাজার প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থনও জানিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সঙ্গতি রেখে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছেন।
মাবরুক জানান, ফিলিস্তিনি স্থানান্তরের এই প্রস্তাবনাটি নতুন নয়। কয়েক দশক ধরে এই পরিকল্পনাটি আলোচনায় আসছে। এর পক্ষেই অতিডানপন্থী ইসরাইলিদের অবস্থান। এর মধ্য দিয়ে তারা বৃহত্তর ইসরাইল গঠন করতে চায়। তিনি আরো জানান, ‘অতিডানপন্থীদের ইচ্ছে হলো তারা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বের করে দেবে। সেজন্য তাদেরকে হয়তো মিসরে পাঠানো হবে। আর মিসর অস্বীকার করলে নেগেভ মরুভূমিতে অথবা অধিকৃত পশ্চিমতীরে ঠেলে দেয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ইসরাইলি অতিডানপন্থীরা মনে করে, ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারেই পশ্চিমতীরের প্রকৃত মালিকানা তাদের। আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য স্টাডিজের অধ্যাপক ওয়ালিদ হাজবুন বলেন, ট্রাম্পের এই প্রস্তাবনাটির লক্ষ্য এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এর মাধ্যমে যেকোনো বিষয়ে দরকষকষি হতে পারে। তিনি বলেন, তবে ট্রাম্পের বক্তব্যের একটি অংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, ‘এই পদক্ষেপ দীর্ঘ মেয়াদিও হতে পারে। আবার অস্থায়ীও হতে পারে।’ এই বক্তব্য আমাদের চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন করে। কারণ, নিকট অতীতে ট্রাম্প ও তার জামাতা জ্যারেড কুশনার গাজায় রিয়েল এস্টেট উন্নয়নের ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেজন্য তারা পরিষ্কার অভিযানের বার্তা ভিন্ন কিছুকেও ইঙ্গিত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবনার সামনে জর্ডান ও মিসর কতটুকু দৃঢ় থাকতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, তারা উভয়ই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল।
হাজবুন বলেন, ‘উভয় দেশই অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য এবং তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য আমেরিকার উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। তাই ট্রাম্প তাদের কতটা চাপ দিতে চাইবেন, তা এখনো স্পষ্ট বলে মনে হচ্ছে না।’
মাবরুক বলেন, ‘ট্রাম্প বড় ধরনেরই চাপ দিতে পারেন। তবে দেশ হিসেবে সেটা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘জর্ডান এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে। তাদের দেশে এখনো অনেক শরণার্থী রয়েছে। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের অনেক সহযোগিতা করে। এগুলো প্রায় সবটুকুই শরণার্থীদের পেছনে খরচ হয়ে যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ডর্জানকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সামরিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে। সেগুলো দিয়ে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকেই অস্ত্র কিনতে হয়। তাই সহায়তার অর্থ পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রেই ফেরত যায়।’ ট্রাম্প এমন একটা সময় এই প্রস্তাবনা রেখেছে, যখন মিসর ও ইসরাইল ছাড়া প্রায় সব দেশকে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেজন্য এখন এই প্রস্তাবনার বিরোধিতা করা মিসরের জন্য বেশি কঠিন। কারণ, দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা এখন বড় নাযুক। এর বিরোধিতা করলে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এতে তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে উঠবে। বিশ্লেষকরা বলেন, ট্রাম্প এই প্রস্তাবনা এগিয়ে নিলে মধ্যপ্রাচ্য আরো বেশি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিরোধ করার মতো ক্ষমতা তাদের দুই দেশের কারোরই নেই। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল এতটুকু বলতে পারবে যে এমন সিদ্ধান্ত নিলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct