সম্প্রীতি মোল্লা,আসানসোল,আপনজন: বাংলায় জোড়াফুলের প্রতি রাজ্যবাসীর যে অটুট বিশ্বাস রয়েছে, তার ফের প্রমাণ মিললো রাজ্যের দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। সর্বভারতীয় পেক্ষাপটে বালিগঞ্জ বিধানসভা অপেক্ষা আসানসোল লোকসভা আসনে নজর ছিল বেশি। কেননা ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বিজেপি এখানে পরপর দুবার জয়ী ছিল।তবে এবার বিহারিবাবুর সৌজন্যে গেরুয়া উবে গেছে আসানসোল লোকসভা আসন থেকে।শনিবার উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় প্রথমবার আসানসোল লোকসভায় জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির কাছ থেকে আসানসোল ছিনিয়ে নিল তৃণমূল কংগ্রেস। জয়ী হলেন তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী বলিউড অভিনেতা শত্রুঘন সিনহা। আসানসোলে রেকর্ড ভোটে জয়ী হলো তৃণমূল প্রার্থী।২ লক্ষ ৯৭ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘন সিনহা।যদিও আসানসোলে ঘাসফুল ফোটা সময়ের অপেক্ষা ছিল। এবার বিজেপির হাত থেকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র ছিনিয়ে নিল তৃণমূল । আসানসোলে বিরাট ব্যবধানে জয়লাভ করলেন তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘন সিনহা। দ্বিতীয় স্থান পেলেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল। গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল থেকে ১ লক্ষ ৯৭ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তবে এবার শত্রুঘ্ন সিনহা সেই রেকর্ড ভেঙে ফেললেন। বাবুল সুপ্রিয় সেই ব্যবধান কে ছাপিয়ে গেলেন তিনি।জয় নিশ্চিত হওয়ার পর তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘন সিনহা জানান -” আসানসোলের ইতিহাস তৈরি হবে বলেছিলাম, ইতিহাস তৈরি হয়েছে”। উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনি দাবি জানিয়েছিলেন তিনি ঐতিহাসিক জয় এনে দেবেন। বিহারীবাবু মুখে যা বলেছিলেন তা কাজেও তা করে দেখালেন। জয়ের পরে শত্রুঘ্ন সিনহা জানান, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই হয়েছে লড়াই। আসানসোলবাসীকে ধন্যবাদ।’ একই সঙ্গে শত্রুঘ্ন জানান, তাঁর জয়ের পিছনে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক এবং তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী প্রচারে এসেছিলেন। ২০১৪ এবং ২০১৯ পরপর দু’বার আসানসোলে বিজেপি-র টিকিটে জয় পেয়েছিলেন বাবুল। আসানসোল জিততে, বাবুলকে জেতাতে নরেন্দ্র মোদী এসেছিলেন আসানসোলে। ‘অব কি বার, মোদী সরকার’ স্লোগান তুলে গোটা দেশে প্রচারে নেমেছিল বিজেপি। ২০১৪ সালে এই রাজ্যে সে ভাবে ‘মোদী হাওয়া’ কাজ না করলেও আসানসোল জিতেছিল বিজেপি। বাংলায় লোকসভা আসন জয়ের বিচারে বিজেপি-র পতাকা প্রথম উড়েছিল এই আসানসোলেই। ২০১৯ সালে রাজ্যে ১৮ টি আসনে জয়-পাওয়া বিজেপি আসানসোলে দলের মাটি আরও শক্ত করে নেয়। ব্যবধান বাড়িয়ে দ্বিতীয়বার জয় পেয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয় । এবার সব ইতিহাস ভেঙে নুতন ইতিহাস গড়লো তৃণমূল। ২০১৪ সালের আগে আসানসোল সিপিএমকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। যদিও স্বাধীনতার পরে কংগ্রেসেরই ছিল এই আসনটি।সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা অতুল্য ঘোষও এই আসনে জিতেছিলেন দু’বার। ১৯৭০ সালের পর থেকেই সিপিএমের দখলে চলে গিয়েছিল এই আসন। মাঝে দু’বার ১৯৮০ এবং ১৯৮৪ সালে ফের কংগ্রেসের দখলে যায় অবশ্য । দু’বারই জেতেন কংগ্রেসের আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়।তবে ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ টানা ২৫ বছর বামেদের দখলে ছিল আসানসোল। তিনবার হারাধন রায়, তিনবার বিকাশ চৌধুরী এবং দু’বার বংশগোপাল চৌধুরী আসানসোলের সাংসদ হয়েছেন সিপিএমের টিকিটে। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে বিজেপির তরফে বাবুল সুপ্রিয় জিতেছিলেন।তবে এবার সর্বপ্রথম জিতলো তৃণমূল কংগ্রেস, তাও বিহারিবাবুর সৌজন্যে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct