আপনজন ডেস্ক: সব জল্পনা উড়িয়ে আসন্ন ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপিকে রুখতে বাম-কংগ্রেস ও তৃণমূলকে জোটের আহ্বান জানালেন ফুরফুরা শরীফ আহলে সুন্নাত অল জমাতের কর্ণধার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের ফুলবাড়িতে এক ধর্মসভা থেকে তিনি এই ডাক দেন। পাশাপাশি দলিত-আদিবাসীসহ ছোট দলগুলিকে নিয়ে মহাজোট গঠনেরও ইঙ্গিত দেন তিনি। অন্যদিকে মঙ্গলকোটের তৃণমূল বিধায়ক তথা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সম্পাদক মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর ভূমিকার সমালোচনা করেন। তবে ত্বহা সিদ্দিকী সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করার দিকে এগোননি।
এদিন ভাঙড়ের ফুলবাড়ি গ্রামে এক ধর্মীয় সভায় উপস্থিত হন আব্বাস সিদ্দিকী। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি সভা স্থলে পৌঁছান। ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে তিনি বক্তব্য শুরু করলেও কিছুক্ষণ পর রাজনৈতিক কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে রুখতে তিনি বাম-কংগ্রেস এমনকি শাসকদল তৃণমূলকেও জোটে আসার আহ্বান জানান। পাশাপাশি দলিত-আদিবাসীসহ ছোট দলগুলিকে নিয়ে মহাজোট গড়ারও ডাক দিয়েছেন তিনি। জোটে না আসতে চাইলে বাম-কংগ্রেস ও তৃণমূলকে বয়কট করারও ডাক দেন তিনি। এমনকি তিনি বলেন, ‘যারা এই মহাজোটে আসবে না, তারা বিজেপিকে সুযোগ করে দিয়েছে বলে প্রমাণিত হবে।’ আব্বাস সিদ্দিকী এলাকার মানুষের আবেগকে উসকে দিয়ে বলেন, ভাঙড়ের মাটি পবিত্র মাটি। কিছু অসাধু ব্যক্তি তাকে অপবিত্র করার অপচেষ্টা করছে।
তিনি ঘোষণা করেন, ‘আগামী নির্বাচনে ভাঙড়-ক্যানিং এলাকার মানুষ আমার পাশে দাঁড়ালে, ভাঙড়ে পীর সুলতান আসগার আলি শাহের নামে হাসপাতাল তৈরি হবে।
রাজনৈতিক লড়াইয়ের ব্যাপারে আব্বাস সিদ্দিকী আত্মপ্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ইতিমধ্যে তিনি ১০০টি আসন জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ডিসেম্বরেই তার নতুন দল আত্মপ্রকাশ করছে বলে আর জানুয়ারিতে প্রতীক চলে আসবে বলে জানান। এরপর রাজনৈতিকভাবে ময়দানে তিনি ও তার অনুগামীরা ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘোষণা দেন।
তবে যাকে কেন্দ্র করে আব্বাস সিদ্দিকী বিতর্কের শিরোনামে আসেন সেই ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি সওকাত মোল্লাকে নাম না করে ‘চোর গুন্ডা’ বলে আক্রমণ করেন। আর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সতর্ক বার্তা দেন, এই জেলায় যদি তৃণমূল ডোবে তাহলে এই ধরনের কিছু চোর গুন্ডার জন্য ডুববে।
সাংবাদিকরা এদিন আব্বাস সিদ্দিকীকে প্রশ্ন করেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীও একই ভাবে দল তৈরি করে ব্যার্থ হন। তারপর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন আপনি সেক্ষেত্রে সফল হবেন কি? এই প্রশ্নের উত্তরে সিদ্দিকুল্লাহকে তীব্র আক্রমণ করেন আব্বাস। তিনি বলেন, ’তিনি টাকার বিনিময়ে অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছেন। তার কোনও ভিত নেই, ধৈর্য নেই। তার শ্বশুর বরেণ্য আলেম মরহুম মাওলানা তাহের সাহেবের সৌজন্যে কিছুটা প্রভাব তৈরি হয়েছিল।
এদিনের সভায় প্রায় দশ হাজার লোকের সমাগম হয় বলে উদ্যোক্তাদের পক্ষে দাবি করা হয়। ভাঙড়ের পাশাপাশি ক্যানিং, হাড়োয়া ও মিনাখাঁ বিধানসভা এলাকা থেকেও আব্বাস অনুগামীরা ভিড় করেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। সভাকে ঘিরে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তারজন্য ভাঙড় থানার পুলিশ আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।
উল্লেখ্য, ভাঙড়ের ফুলবাড়ী গ্রাম তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। এই গ্রামেই বাড়ি রাজ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম ও প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য মীর তাহের আলির।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct