ওরা খুব ভালো করবে (প্রয়োজন আন্তরিকতা একাগ্রতা আর সৎ পরিশ্রম)
অনির্বাণ ভট্টাচার্য
প্রধান শিক্ষক, জেটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
______________________________________
আবার কালের নিয়মে বাৎসরিক শিক্ষা সূচি মেনেই এসে গেল মাধ্যমিক পরীক্ষা(২০২২)।মধ্য শিক্ষা পর্ষৎ পাঠ্যক্রম অনেক সহজ করে দিয়েছেন।পাঠ্যক্রম অনেকটাই বহরে কমেছে।তাই আশা করাই যায়,এই অল্প সময়ের ভিতরেই আপনার এবং আমাদের সন্তানরা খুব ভালো ফলাফল করবে।ভরসা রাখুন। আপনাদের চেয়ে এই মুহূর্তে বড় বন্ধু ওদের আর কেউ নেই।কেননা ওরা খুব বিভ্রান্ত।দীর্ঘদিন স্কুলমুখো না হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি সম্বন্ধে ওরা একেবারেই অনভিজ্ঞ।জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসার আগে তাই দু চারটে কথা আপনাদের বলার জন্যই কলম ধরা।সামান্যতম কাজে এলে,ভালো লাগবে।
প্রথমেই বলি আপনার সন্তানকে বলুন পরিকল্পনা র কথা। অর্থাৎ রুটিন মাফিক প্রতিটি অধ্যায় দেখার সময় পেরিয়ে গেছে।এখন কেবল আগাম ভাবনার সময়।কোন প্রশ্ন কখন করবে।কোনটা আগে,কোনটা পরে।কোন অংশের জন্য জায়গা ছেড়ে রাখবে।কোন অংশে ছবি জরুরী।এই বিষয়গুলি একবার শেষবারের মত ঝালিয়ে নিক।সবচেয়ে বড় বিষয় হল নিজের খামতি এবং নিজের দূর্বলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা।সে গুলো নিয়ে এখন খুব বেশি চিন্তা করে যেন হতাশ হয়ে না পড়ে।আপনি তার পাশে থেকে তার বিশেষ পারদর্শিতার কথা গুলো,দক্ষতা গুলোকে মনে করিয়ে দিন।এতে ওরা খুব চাপ মুক্ত থাকবে।যেটাতে সে স্বচ্ছন্দ,সাবলীল সেটার উপরে বেশি জোর দিতে বলুন। দরকার হল, বাঁধা ধরা সময়ের ভিতরে উত্তর লিখে আসা।সে যেন সেটাতেই ফোকাস করে।একটা উত্তরে অনেক সময় ব্যয় করলে পরের সব উত্তর থেকে সময় কমে আসে।উত্তরের মান খারাপ হয়। লেখার আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে শেখান। উৎসাহের বশে বেশি না লিখে ফেলে।কোন প্রশ্ন তাৎক্ষনিক ভাবে শক্ত মনে হলে মন অন্য দিকে ঘুরিয়ে,যেটা সহজ সে দিকে মন দিক।কিন্তু যেটা বলার,ছেড়ে আসা শক্ত প্রশ্নের প্রতি যেন বারবার মনযোগ না যায়। পরীক্ষা দিয়ে ফিরে আসার পরে দয়া করে সন্তানের ব্যর্থতার পোস্টমর্টেম করবেন না।ও আরও ভেঙে পড়বে।সন্তানকে বলুন যেন পুরো প্রশ্ন মন দিয়ে পড়ে।কমন এসে গেছে ভেবে,অর্ধেক পড়েই যেন উত্তর লিখতে শুরু করে না দেয়।প্রশ্নের চাহিদা মেনে উত্তর লিখতে বলুন।বলুন তোমার উত্তর তোমার জ্ঞানের দলিল নয়।প্রশ্নের জবাব।উত্তরের পয়েন্ট গুলোও যেন গুরুত্ব অনুযায়ী পরপর সাজায়।ছাত্রছাত্রীদের বলি,তোমরা উত্তর লখা শুরু করার আগে বিভাগ,প্রশ্নের নম্বর,দাগ নম্বর উল্লেখ করবে।সম্ভব হলে ‘খেই’ *বা *‘সূত্র’ধরিয়ে দেবে।যাতে খাতা দেখতে গিয়ে পরীক্ষকের বিশেষ সুবিধা হয়। নতুন প্যারাগ্রাফ শুরু করার সময় বুলেট চিহ্ন ব্যবহার করবে।আর একটা কথা,কোথাও সত্য অথবা মিথ্যা লিখতে বললে সেটাই লিখবে।শুদ্ধ অশুদ্ধ লিখতে বললে সেটাই।সঠিক উত্তরের পাশে টিকচিহ্ন এবং ভুল উত্তরের পাশে ক্রসচিহ্ন দিতে বললে সেটাই উল্লেখ করবে।খুব মন দিয়ে পোড়ো কি করতে বলছে।সত্য-মিথ্যা,না কি শুদ্ধ-অশুদ্ধ,না কি ক্রসচিহ্ন-টিকচিহ্ন।অনেক পরীক্ষক খুব বিরক্ত হন।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কথায় এবার আসি। মোবাইল থেকে নিজেকে ক’দিনের জন্য দূরে সরিয়ে রাখো।একে বলে ডিটক্স মোবাইল(Detox Mobile)।ডিজিটাল ডিটক্স।সমস্ত ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখো।অভিভাবকদের আবার বলছি পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পরে সন্তানের ব্যর্থতা নিয়ে বেশি প্রশ্ন না করে,ওর সাফল্যের উদযাপন করুন।ওকে উৎসাহিত করুন।সেগুলোকেই ম্যাগনিফাই করুন।ওর ব্যর্থতা ওকে ভয়ে,অনুশোচনায়,চিন্তায় কুরে কুরে খাচ্ছে।আপনি ওর অভিভাবক।ওকে সময় দিন।আসা মাত্রেই ঝাঁপিয়ে পরে ওর পরীক্ষা নিয়ে জানতে চাইবেন না।ভালো হলে ও নিজেই পরম উৎসাহে আপনার কাছে জামা-জুতো খোলার আগেই কলকল করে বলতে শুরু করবে। অপমানবোধ সকল বয়সীদের মধ্যে সকলের মধ্যেই কাজ করে।কাজেই সকলের সামনে,পরীক্ষার হলের বাইরে আসা মাত্রেই জমায়েতে কিম্বা নির্জনেও বকাবকি করবেন না।ব্যর্থতার শিকড় কিন্তু অবসাদ পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এই ফাঁকে একটু একটু ব্যর্থতার পাঠও শেখান।শেখান,জীবনের প্রথম পরীক্ষা এটা।তবে এটাই শেষ পরীক্ষা নয়।ওরা বহুদিন স্বাভাবিক পঠন-পাঠন থেকে দূরে।তাই খারাপ ভালো সবটাই আপেক্ষিক।পরস্থিতি নিয়ন্ত্রিত।ব্যর্থতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা দিন।একটা দুটো পরীক্ষা মনোমত না হলে হতাশায় ডুবে যাওয়ার মত কিছু হয় না।এই শিক্ষাটা যে ও আপনার মুখ থেকে শুনতে উদগ্রীব হয়ে রয়েছে! এটা থেকেই না সে ঘুরে দাঁড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবে!তিন ঘন্টা পনের মিনিটের ম্যাচ।পাওয়ার প্লে আছে।কিন্তু এক্সট্রা টাইম নেই।কাজেই যাবতীয় স্ট্র্যাটেজিক টিম আউট এখনই। একটাই মন্ত্র জপে চলতে বলুন ”সামনের আগামী কয়েকটা মিনিট আমার জীবনের গতিপথই বদলে দেবে।পারব।আমি পারবই।“ শুধু মেরিট দিয়ে ইতিহাস রচনা করা যায় না।আন্তরিকতা,একাগ্রতা আর সৎ পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।ওরা খুব ভালো করবে।ওরা যেমন আপনাদের সন্তান,তেমনি আমাদেরও। শুভ কামনায় অবিচল থাকুন। উৎসাহ যোগান।সাফল্য আসবেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct