কে কে আনাম, মেমারি, আপনজন: পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি শহরে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইতিহাস গবেষক গোলাম আহমাদ মোর্তজা রহ. প্রতিষ্ঠিত জামিয়া ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুম ক্যাম্পাসে দু’দিনের দশম সারা বাংলা কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১২ ও ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতা ও ওয়াজ মেহফিলের আয়োজক ছিল বিশ্বখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ হজরত মাওলানা গুলাম মোহাম্মদ বস্তানভির জামিয়া ইসলামিয়া ইশাআতুল উলুম ।মেমারি জামিয়ার সেক্রেটারি কাজী মুহাম্মদ ইয়াসীন জানান, বস্তানভি’জির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক বিশ বছরের। তাঁর পিতা গোলাম আহমাদ মোর্তজা রহ এই যোগসূত্র গড়ে তুলেছিলেন।দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাক্তন উপাচার্য গুলাম মোহাম্মদ বস্তানভি গুজরাতের সুরাত জেলার বস্তানে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর কর্মভূমি মহারাষ্ট্রের নানদুরবার জেলার আক্কালকুয়া’র পবিত্র ভূমে। স্কুল, কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, হসপিটাল, মাদ্রাসা সহ পঁচিশটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা - পরিচালক হজরত বস্তানভি দারুল উলুম দেওবন্দে মাস ছয়েকের উপাচার্যের কার্যকালে মেডিসিন ও প্রকৌশলকে প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করে ঐতিহাসিক সংস্কার সাধন করেন। নব্বইয়ের দশকে তিনি পবিত্র কুরআনের সঠিক অর্থ প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।মেমারি জামিয়া ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুমে তিনি সম্মানীয় প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে সম্মানিত। তাঁরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া ইশাআতুল উলুমের উদ্যোগে আয়োজিত হয় এই কুরআন প্রতিযোগিতা ও ওয়াজ মেহফিল।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ৬৮ টি মাদ্রাসার শতাধিক (১০২) প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আক্কালকুয়া’র জামিয়া থেকে প্রেরিত ভারতের বিভিন্ন রাজ্য হতে আগত ন’জন বিচারক প্রতিযোগিতায় বিচারের দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিযোগিতা হয়, পূর্ণাঙ্গ কুরআন কন্ঠস্থকরণ, কুরআন শরীফের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা, চল্লিশ হাদীস সনদ সহ কন্ঠস্থকরণ এর ওপরে। প্রতিটি স্তরেই প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় স্থানাধিকারীদের পুরষ্কৃত করা হয়। প্রথম বিভাগ অর্থাৎ ত্রিশ পারা হিফযে কুরআনে প্রথম স্থান অধিকার করে হুগলী জেলার বেলপাড়া মুনিরিয়া দারুল উলূম মাদ্রাসার মুন্সী মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন। ঐ বিভাগে দ্বিতীয় হয় দঃ ২৪ পরগনার চিনিপুকুরের জামিয়া ফাইযুল উলূমের ছাত্র হাবিবুর রহমান। দঃ ২৪ পরগনার উত্তর পাড়ার মাদ্রাসা দারুল ফালাহের ছাত্র হাবিবুর রহমান তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এই বিভাগে চতুর্থ ও পঞ্চম হয় যথাক্রমে উত্তর ২৪ পরগনার শায়েস্তা নগর দারুস সালাম মাদ্রাসার ছাত্র শেখ মুহাম্মাদ সাদিক ও উত্তর দিনাজপুরের ফাইজুল কুরআন ঠিকরেবাড়ির ছাত্র সফিউজ্জামান। দ্বিতীয় বিভাগ তাফসিরুল কুরআনে পূর্ব বর্ধমান জেলার জামিয়া ইসলামিয়া মদীনাতুল উলূম মেমারির ছাত্র আব্দুল হাকীম প্রথম এবং উত্তর ২৪ পরগনার জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম কালিকাপুরের নাফিস মোল্লা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে । তৃতীয় বিভাগ হাদীসে বীরভূম জেলার ইলাম বাজারের মাদ্রাসা দারুল উলূম নোমানিয়ার ছাত্র জুলফিকার মন্ডল প্রথম এবং উত্তর দিনাজপুরের জামিয়া উবাই ইবনে কাব বানিয়াটোলার আহমাদ আব্দুল্লাহ দ্বিতীয় স্থান দখল করে। বিজয়ী ছাত্রদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ আর্থিক পুরস্কারসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী ও মানপত্র । জানা যায়, এই প্রতিযোগিতার হিফয বিভাগে প্রথম থেকে পঞ্চম স্থানাধিকারী ছাত্ররা এবং তাফসীর ও হাদীস বিভাগের কেবল প্রথম স্থানাধিকারী ছাত্ররা আগামী ২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের আক্কালকুয়া’র সর্বভারতীয় কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে। প্রতি তিন বছর অন্তর জাতীয় স্তরে এই প্রতিযোগিতা হয়। এবার ২৬ টি রাজ্যের প্রতিযোগীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চলেছে।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে পুরষ্কার প্রদান ছাড়াও ছিল ওয়াজ মেহফিল। উপস্থিত ছিলেন হজরত বস্তানভির সুযোগ্য পুত্র মাওলানা মোহাম্মদ হুজাইফা বস্তানভি। তেলঙ্গানার স্বনামধন্য বক্তা মুনাওয়ার যামান । শুরুতে জামিয়া ইসলামিয়া মদীনাতুল উলুমের সেক্রেটারি কাজী মুহাম্মদ ইয়াসীন উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। আমাদের কোনও অভাব আপনারা রাখেননি। আপনাদের কাছে আমারা কৃতজ্ঞ। এর সঙ্গে আমরা চাই, আপনারা ভালো ভালো ছাত্র ছাত্রীদের পাঠান। তিনি বলেন, মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে আলেম হয়েও অন্য পেশায় প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা অর্জন করা যায়। আমাদেরই সেই উদাহরণ আছে। তিনি মেমারি জামিয়াকে স্থান নির্বাচন করার জন্য আক্কালকুয়া’র জামিয়া ইসলামিয়া ইশাআতুল উলুমের নিকট কৃতজ্ঞতা জানান। অতিথি বক্তাদের অভ্যর্থনা জানান মেমারি জামিয়ার চেয়ারম্যান ও প্রিন্সিপাল ক্বারী কাজী সামশুদ্দিন আহমাদ কাশেমী । তিনি বলেন, খুশির বিষয় হল, আজকের এই অনুষ্ঠান আয়োজনে আমরা হাজার কিলোমিটার দূরের মানুষদের এখানে পেয়েছি। তারই সঙ্গে দুঃখের এটাই যে, আজকের এই মহতি অনুষ্ঠানে আমরা হজরত বস্তানভিকে পেলাম না। তাঁর দীর্ঘ জীবন ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে, তিনি ভারতের মুসলিম সমাজে তাঁর অবদানের কথা তুলে ধরেন। জলসার প্রধান অতিথি মাওলানা হুজাইফা বস্তানভি পবিত্র কুরআনের নির্ভরতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ভারতবর্ষের মুসলমানদের শিক্ষা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা দুই প্রকার। ইসলামী শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষা। ইসলামী শিক্ষা প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। তার সঙ্গে আধুনিক গ্রহণও জরুরি। ভারতবর্ষের উদ্বুদ্ধকারী বক্তাদের অন্যতম মুনাওয়ার যামানের বক্তব্য শোনার আগ্রহ ছিল উপস্থিত মানুষের মধ্যে। দ্বীন শিক্ষা ও ঈমান রক্ষার ওপর জোর দেন তিনি। প্রধান অতিথি মাওলানা হুজাইফা বস্তানভির দুআর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। মুফতি কাজী তালেবুল্লাহ্ কাশেমী সহ বহু ইসলামী চিন্তাবিদ উপস্থিত ছিলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct