আপনজন ডেস্ক: স্রেফ উড়ে যাওয়া যাকে বলে! ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে যে অভিজ্ঞতা প্রায়ই হতো প্রতিপক্ষের, এবার ক্যারিবীয়দের সেই তেতো স্বাদই উপহার দিল আয়ারল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫ উইকেটে ১৪৬ রান আইরিশরা টপকে গেল ১৫ বল আর ৯ উইকেট হাতে রেখেই! তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘটল দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আর সুপার টুয়েলভে উঠে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে জায়গা করে নিল আয়ারল্যান্ড। হোবার্টে আজ ৪৮ বলে ৬৬ রানে অপরাজিত ইনিংসে তুলে নেওয়া জয়ে আইরিশ রূপকথাই লিখলেন পল স্টার্লিং এবং তাঁর সঙ্গে ৩৫ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকা লরকান টাকার। আজ বেলেরিভ ওভালে যেন জার্সি বদল করে নেমেছিল দুই দল। আয়ারল্যান্ড ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভূমিকায়, যে উইন্ডিজ আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে জিতেছিল ২০১২ ও ২০১৬–এর শিরোপা। আর নিকোলাস পুরানের দল যেন আয়ারল্যান্ডের ছায়া, ২০০৯ বিশ্বকাপের পর টানা পাঁচ আসরে যারা প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেড় শ ছুঁই স্কোর তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই মারমুখী হয়ে ব্যাট চালিয়েছেন দুই আইরিশ ওপেনার পল স্টার্লিং ও অ্যান্ডি বলবার্নি।আকিল হোসেনের করা দ্বিতীয় ওভার থেকে এক ছয় এক চারসহ ১৬ রান তুলে নেন দুজনে। চতুর্থ ওভারে ওডিন স্মিথের কাছ থেকে আসে ২ চার এক ছয়সহ ১৪ রান। মাঝে গতির ঝড় তোলা আলজারি জোসেফ দেন আরও ১০ রান। টানা তিন ওভারের এই ঝড়েই ওভারপ্রতি দরকার ৬ রানের মধ্যে নিয়ে আসে আয়ারল্যান্ড।
প্রথম ৬ ওভারে ৬৪ রান দিয়ে ফেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে যেন রান আটকানোর কোনো উত্তরই ছিল না। যে কারণে ৭৩ রানের মাথায় বলবার্নিকে তুলে নিলেও আয়ারল্যান্ডের রানের গতিতে আর বাঁধ দিতে পারেননি পুরানরা। টাকারকে নিয়ে আয়ারল্যান্ডের জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন স্টার্লিং। ৩২ বছর বয়সী এই ওপেনার অপরাজিত থাকেন ২১তম ফিফটি করে। তার ইনিংসে ৬টি চারের সঙ্গে ছিল ২টি ছয়।২ ছয় মেরেছেন টাকারও। ২৩ বলে ৩৭ রান করে যাওয়া বলবার্নি হাঁকান ৩টি ছয়। সব মিলিয়ে ৭টি ছয় ও ১১টি চার হাঁকায় আয়ারল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছয় ছিল ৫টি। টস জিতে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য ছিল শুরু থেকেই মেরে খেলা। কিন্তু রান তো ওঠেইনি, উল্টো তৃতীয় ওভারে দলকে ১০ রানে রেখে আউট হয়ে যান কাইল মেয়ার্স। অপর প্রান্তে জনসন চার্লস তবু অবিচল ছিলেন। পরের ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফারকে টানা দুই চার ও এক ছয়ে তুলে নেন ১৪ রান। তবে আক্রমণে স্পিন আসতেই থমকে যান জনসন। সিমি সিংয়ের বলে পয়েন্ট ক্যাচ দেওয়ার আগে করে যান ১৮ বলে ২৪ রান।
২৭ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যানই ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানকে দেড় শর কাছাকাছি নিয়ে যান। ১০ ওভার শেষে এই রানও অবশ্য দূরের মনে হচ্ছিল। ২ উইকেটে ৬৭ খুব কম না হলেও রান তুলতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ব্রান্ডন-লুইসরা। জশ লিটল, মার্ক অ্যাডাইর, গ্যারেথ ডিলানিদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে শট নিতে পারছিলেন না ব্যাটসম্যানরা। ব্রান্ডন প্রথম হাত খুলতে শুরু করেন ১২তম ওভারে, জন ম্যাকার্থিকে টানা দুই চার মেরে। অপর প্রান্তে অবশ্য থিতু হতে পারছিলেন না কেউই। লুইস ১৮ বলে ১৩ রান করে আউট হওয়ার পরপর ১১ বলে ১৩ রানে পুরান আর ৮ বলে ৬ রান করে রোভম্যান পাওয়েলও দ্রুত ফিরে যান। ১৭ ওভার শেষেও উইন্ডিজের রান দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১১২। সেখান থেকে শেষ তিন ওভারে ৩৪ রান যোগ করেন ব্র্যান্ডন আর ওডিন স্মিথ। ব্র্যান্ডন অপরাজিত থাকেন ৪৮ রানে। ২ ছয় এক চারে ১২ বলে ১৯ রান করেন স্মিথ। আয়ারল্যান্ডের হয়ে ৪ ওভারের লেগস্পিনে ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন ডিলানি। সুপার টুয়েলভে আয়ারল্যান্ড কোন গ্রুপে খেলবে, তা চূড়ান্ত হবে স্কটল্যান্ড–জিম্বাবুয়ে ম্যাচের পর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct