আপনজন ডেস্ক: উত্তর প্রদেশের মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমির লাগোয়া শাহি ঈদগাহ মসজিদে আদালতরে তত্ত্বাবধানে সমীক্ষা পর্যবেক্ষণের ওপর স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই সমীক্ষা পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলেছিলে, আদালতের পর্যবেক্ষণের আওতায় সেই সমীক্ষা চালাতে হবে। তার জন্য কমিশনার নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেই নির্দেশ স্থগিত করে দিয়েছে।বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপংকর দত্তর ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, সমীক্ষার জন্য এলাহাবাদ হাইকোর্ট কমিশনার নিয়োগের যে নির্দেশ দিয়েছিল তা আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। গত ১৪ ডিসেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই নির্দেশ জারি করেছিল। ওই কমিশনারের দায়িত্ব ছিল সমীক্ষার জন্য মসজিদ পর্যবেক্ষণ করার। মসজিদের অভ্যন্তরে মন্দির অথবা হিন্দু দেব–দেবীর কোনো নিদর্শন রয়েছে কি না, তা দেখা। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে এসেছিলেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। মন্দির কর্তৃপক্ষ ও হিন্দু পক্ষের দাবি, মন্দির ভেঙে সেখানে মসজিদ তৈরি হয়েছিল। সমীক্ষা করলেই তার প্রমাণ মিলবে।মসজিদ কমিটির পক্ষে আইনজীবী তাসমিন আহমেদির আরজি ছিল, ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন মোতাবেক মন্দির কর্তৃপক্ষের মামলা খারিজ করার আবেদনটির মীমাংসা এখনো হয়নি। তা সত্ত্বেও হাইকোর্ট সমীক্ষার ওই নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব ওই নির্দেশ অগ্রাহ্য করা হোক।নির্দেশ খারিজ করার সময় হিন্দুদের পক্ষের আইনজীবী শ্যাম দিওয়ানের উদ্দেশে বিচারপতিরা এ কথাও বলেন, স্থানীয় কমিশনার নিযুক্তির যে আবেদন করা হয়েছে তা ভাসা-ভাসা। তাঁরা বলেন, ভাসা-ভাসা আবেদন করা যায় না। উদ্দেশ্য নির্দিষ্টভাবে পেশ করতে হয়। এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৩ জানুয়ারি। বিচারপতিরা বলেন, এই বিষয়ে হাইকোর্টে যে মামলা চলছে, তা অব্যাহত থাকবে।
অযোধ্যায় রামমন্দির ও বাবরি মসজিদ বিতর্কের মীমাংসা হয় সুপ্রিম কোর্টে। সেই জয়ের পর উৎসাহিত হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ও সংঘ পরিবার আন্দোলনের পথ পরিত্যাগ করে বারানসিতে কাশী বিশ্বনাথ-জ্ঞানবাপী মসজিদ ও মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি-শাহি ঈদগাহ মসজিদ বিতর্ককে টেনে এনেছে আদালতের আঙিনায়। জ্ঞানবাপী মসজিদের দেয়ালে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তিতে পূজা-অর্চনার দাবিতে যে মামলা শুরু হয়েছিল, তা সমীক্ষা পর্যন্ত গড়িয়েছে। যদিও সেই উপাসনাস্থলের চরিত্র-সম্পর্কিত দাবি ও পাল্টা দাবির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। মথুরার ক্ষেত্রেও ঘটনাপ্রবাহ সেই দিকে এগোচ্ছে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট এখনো জানাননি ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইন অনুযায়ী ওই দুই উপাসনাস্থলের চরিত্র বদল করা যাবে কি না, কিংবা সে নিয়ে আবেদন গ্রহণযোগ্য কি না।রামের জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কের রেশ যাতে দেশের অন্যান্য ধর্মস্থানের ওপর না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে ১৯৯১ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার ধর্মস্থান আইন প্রণয়ন করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশ স্বাধীন হওয়ার দিন যে যে উপাসনালয়ের চরিত্র যেমন ছিল, তেমনই থাকবে। কোনোভাবে চরিত্র পরিবর্তন করা যাবে না; অর্থাৎ মন্দির মন্দিরই থাকবে, মসজিদও মসজিদই। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল অযোধ্যা। কারণ, সেই মামলা তখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন ছিল। অযোধ্যা মামলার রায়দানের সময়ও সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান আইনের উল্লেখ করেছিলেন। গত বছরের ২৬ মে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মথুরার বিভিন্ন দেওয়ানি আদালত থেকে শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি-শাহী ঈদগাহ মসজিদ বিরোধের সমস্ত বিচারাধীন মামলা নিজের কাছে হস্তান্তর করে। মসজিদ কমিটিও সেই স্থানান্তরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি পিটিশন দায়ের করেছিল।কাটরা কেশব দেব মন্দিরের সঙ্গে শাহী ঈদগাহ মসজিদের যে এলাকা ভাগ করে নেওয়া হয়েছে, তা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বলে ঘোষণা করার নির্দেশ চেয়েছে হিন্দু পক্ষ। তারা মসজিদটি অপসারণ এবং ১৩.৩৭ একর জমি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct