সম্প্রীতি মোল্লা, কলকাতা, আপনজন: একাধারে টেট নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের আবেদন খারিজ। পাশাপাশি এই টেট নিয়েই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগের বিশদ তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার সওয়াল-জবাব পর্বে রাজ্যের দাবি, ‘২০১৪ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া, ইতিমধ্যেই ৮ বছর অতিক্রান্ত, এতদিন পর জনস্বার্থ মামলা করা যায় না’ এই মামলা খারিজের আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য। তবে এদিন রাজ্যের দাবি খারিজ করে দিল আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা জমা দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে । মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে। এদিন আদালত জানায়, ‘এই মামলাটি গ্রহণযোগ্য। আগামী ১৬ ই আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে’। গত ২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার গ্রহণযোগ্যতা আছে বলেই প্রাথমিকভাবে মত প্রকাশ করেছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
সম্প্রতি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২৬৯ জন কর্মরত শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের তদন্ত করছে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে গেলেও কোন স্থগিতাদেশ পাইনি রাজ্য। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তলব করেছে সিবিআই। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় নিযুক্ত প্রায় ৪৩ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য তলব করেছে সিবিআই। এই প্রেক্ষিতে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সংসদ। যেখানে বলা হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষককে তাঁদের নিয়োগ সংক্রান্ত নথি সংসদের কাছে জমা দিতে হবে। যেখানে বলা হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে ৪২,৯৪৯ জন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টির তদন্ত করছে সিবিআই। জরুরি ভিত্তিতে ৪২,৯৪৯ জন শিক্ষককে তাঁদের নিয়োগ সংক্রান্ত নথি পাঠাতে হবে’। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের একটি ইমেইল অ্যাড্রেস দেওয়া হয়েছে। আজ অর্থাৎ বুধবারের মধ্যে সমস্ত তথ্য হাতে পাবার পর সেই তথ্য সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে প্রকাশ। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় ৪২, ৯৪৯ শূন্য পদে যাদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই তথ্য খতিয়ে দেখবে সিবিআই। টেটের রোল নম্বর, টেট পাশ সার্টিফিকেট সহ যাবতীয় নথি জমা দিতে হবে। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ৪২,৯৪৯ শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। তাই জরুরি ভিত্তিতে এক্সেল শিট-এ ৪২,৯৪৯ জন শিক্ষককেই তাঁদের নিয়োগ সংক্রান্ত নথি সংসদকে পাঠাতে হবে। আজ অর্থাৎ বুধবারের মধ্যে এই নথি প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দফতরে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি ইমেল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বুধবারের মধ্যে ওই ইমেল ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের তরফে বিজ্ঞপ্তিটি জারি করেছেন সেক্রেটারি আরসি বাগচি।প্রসঙ্গত, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত হচ্ছে। বুধবার সব তথ্য হাতে পাওয়ার পরেই তা তুলে দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের হাতে। ইতিমধ্যেই ২৬৯ জন শিক্ষকদের চাকরি বাতিল ঘোষণা করে থাকে আদালত। এমনকি নিয়োগ জালিয়াতির জন্য চাকরি হারিয়েছেন খোদ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে।পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টপাধ্যায় পর্যন্ত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct