মঞ্জুর মোল্লা, নদিয়া, আপনজন: শীতের হালকা ইমেজ আসতেই নদীয়া জেলা জুড়ে খেজুর গাছ কাটতে ব্যস্ত এখন গাছিরা। নদিয়া জেলার মাজদিয়া সহ বিভিন্ন জায়গাতেই খেজুররস থেকে নলেন গুড় তৈরি হয় তবে তাদের মধ্যে মাজদিয়া এলাকা বিশেষ প্রসিদ্ধ। সুস্বাদু খেজুরগুড় তৈরির পদ্ধতিটা বেশ কঠিন পরিশ্রমসাপেক্ষ। গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহের মতো কঠিন কাজটা যারা করেন শিউলিরা। চাপড়া থানার গাছা এলাকায় বাসিন্দারা তাজের আলি সেখ জানায় শীতের মাস তিনেক শিউলির কাজ করেন। তাঁদের কাজ শুরু হয় শীত আসার আগে থেকেই।হেমন্তের শেষ দিক থেকে শুরু করতে হয় গাছ কাটা এই কাটা মানে কিন্তু গাছ কেটে ফেলা নয়,পরিষ্কার করা। যে সমস্ত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হবে,সেগুলোকে বেছে তার ডালপালা খানিক ছেঁটে আগার দিকের কাণ্ডের খানিক অংশ ছেঁচে রাখা হয়। কিছু দিন পর ওই অংশটা একটু নরম হয়ে এলে সেখানে একটা করে রস বেরোবার বাসের কাঠি (চ্যানেল) ঢুকিয়ে রাখা হয়। শীতের শুরু থেকে যখন খেজুর গাছে রস আসতে আরম্ভ করে তখন আরম্ভ হয় রস সংগ্রহের কাজ। প্রতিটা গাছের জন্য একটা করে নতুন মাটির কলসি ভালো করে চুনজলে ধুয়ে রাখকে হয়। সূর্য ডোবার আগে সেই কলসিটা গাছের গায়ে তৈরি করা নির্গমন নলের নীচে রেখে আসতে হয়। সারা রাত ধরে খেজুর রস ধীরে ধীরে খেজুর রস কলসিতে জমা হয়।ভোরে রাতে গাছে উঠে কলসিটাকে নামিয়ে আনা হয়।
এবার ওই কলসির রস এক জায়গায় ঢেলে সেগুলো ভালো করে আগুনে ফুটিয়ে তৈরি করতে হয় খেজুররসের নলেন গুড়। আব্দুল কাদের মোল্লা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে যুক্ত রয়েছেন এই কাজের সঙ্গে।শুধু রস পাড়াই নয়,তিনি নিজের কিছু খেজুর গাছ আছে সেই সঙ্গে গ্রামে অনেক গাছ আছে সেখানে থেকে রস সংগ্রহ করে সব মিলে প্রায় ৫০ টা খেজুর গাছ রসছে এবছরের।তিনি বলেন ‘শীত যত পড়বে,খেজুর রসের স্বাদ তত ভালো হবে।তবে সেই সঙ্গে রস সংগ্রহ এবং জ্বাল দেওয়ার কাজটাও খুব যত্নের সঙ্গে করতে হবে,না হলে গুড়ের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে তাঁর আক্ষেপ,এই কাজে পরিশ্রম যতটা,সেই তুলনায় মজুরি খুবই কম,তাই পরবর্তী প্রজন্মের ছেলেরা আর এই পেশায় আসতে চাইছেন না। কারন খুব কষ্ট করে গাছ কাটা থেকে শুরু করে রস সংগ্রহ খুবই পরিশ্রম করতে হয়। তিন ছেলে আছে বর্তমান এক ছেলে এক সঙ্গে যুক্ত আছে। বাবার কাছে কাজ শিখে এখনও শিউলির কাজ করেন, তবে কত দিন তাঁরা এই পেশায় থাকবেন, সেটা নিয়ে সংশয় আছে। নদীয়া জেলার মাজদিয়া, জোগাটা, গোবিন্দপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে খেজুর গাছ রয়েছে সব থেকে বেশি পরিমাণে গুড় আমদানি হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct