সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া, আপনজন: “যেতে নাহি দিব” – পড়ুয়া, অভিভাবক ও অন্যান্য শিক্ষকদের আবদার, বদলি নিয়েও নেওয়া হল না বদলি, বদলির সিদ্ধান্ত ফেরালেন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক বদলি হয়ে অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছেন । পুজোর ছুটির মধ্যে সেই খবরটা কানে উঠেছিল স্কুলের পড়ুয়াদের। প্রায় প্রধান শিক্ষক বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা শুনে মঙ্গলবার বিকালে প্রধান শিক্ষকের অফিস ঘেরাও করে পড়ুয়ারা আবদার করেছিল যেতে নাহি দিব। পড়ুয়াদের সেই আবদার ফেরাতে পারলেন না বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লকে মাচাতোড়া ইউনিয়ন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন গোস্বামী । ঘরের কাছের স্কুলে বদলি পেয়েও শেষ অবধি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিলেন ওই শিক্ষক। সারা রাজ্য জুড়ে মাঝেমধ্যেই ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের অবক্ষয় নিয়ে নানা অভিযোগ উঠে আসে সংবাদের শিরোনামে । সেই প্রেক্ষাপটে একেবারে বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লকের মাচাতোড়া ইউনিয়ন হাইস্কুল । স্কুল সূত্রে জানা গেছে দীর্ঘদিন স্কুলে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক ছিল না । ২০১৬ সালে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন মনোরঞ্জন গোস্বামী । তিনি স্কুলে যোগ দিতেই বদলে যায় পঠন পাঠনের পরিবেশ । তাঁর উদ্যোগেই নিয়মিত ক্লাস , পরীক্ষা , ফলাফল প্রকাশ ছাড়াও স্কুল চত্বরে বাগান তৈরি ও শিক্ষামূলক কর্মকান্ড শুরু হয় । আর এতেই স্কুলের প্রতিটি পড়ুয়া থেকে এলেকার মানুষের মন জয় করে ফেলেন ওই প্রধান শিক্ষক । ৫৬ বছর বয়সে নিজের বাড়ি খাতড়া থেকে স্কুল প্রায় ২৪ কিলোমিটার রাস্তা প্রতিদিন বাইক চালিয়ে আসা যাওয়া করতে কষ্ট হওয়ায় সম্প্রতি বাড়ির কাছে বদলি চেয়ে উৎসশ্রী পোর্টালে আবেদন জানান মনোরঞ্জন গোস্বামী । পুজোর ছুটির মধ্যে শিক্ষা দফতর তাঁকে বাড়ি থেকে দশ কিলোমিটার দূরে রানীবাঁধ ব্লকের পুরানপানি হাইস্কুলে বদলির নির্দেশ দেয় । গতকাল পুরানো স্কুলের পরিচালন সমিতিকে ডেকে সমস্ত কিছু বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যান ওই প্রধান শিক্ষক । আর সেই সময়ই স্কুলের সমস্ত পড়ুয়া ঘিরে ধরে তাঁকে । পড়ুয়াদের আবদারে শেষ পর্যন্ত বদলির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়ে অবসর না নেওয়া পর্যন্ত ওই স্কুলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মনোরঞ্জন বাবু । পড়ুয়াদের এই ভালোবাসায় রীতিমত আপ্লুত প্রধান শিক্ষক । প্রধান শিক্ষক সিদ্ধান্ত বদল করায় খুশি পড়ুয়ারাও ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct