নিজস্ব প্রতিবেদক, বহরমপুর, আপনজন: পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে মুসলিম জনবহুল জেলা মুর্শিদাবাদ। আর বারে বারে সেখানে ধর্ম অবমাননার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় কার্তিক পুজোর সময় পুজো মণ্ডপে আল্লাহর নামে অবমাননাকর কথা ডিসপ্লে বোর্ডে প্রদর্শিত হওয়ায় সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল।
বেলডাঙ্গা কাণ্ডে গ্রেফতারও করা হয় মূল অভিযুক্ত সায়ন হালদার। এই সায়নের পিছনে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ ওঠে কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে।
সেই ঘটনার জের কাটতে না কাটতেই বহরমপুরের কাশিমবাজারে কালী ঠাকুরের মন্দিরে কালী ঠাকুরের প্রতিমা ভেঙে দিয়ে ফের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করা হল। সেই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলি তৎপর হওয়ার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্দিরের মধ্যে ঢুকে কালী মূর্তি ভাঙার টিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়। (যদিও তার সত্যতা যাচাই করেনি আপনজন)। তাতে দেখা যায় মন্দিরের ভিতরে ঢুকে যে যুবকটি কালী ঠাকুরের মূর্তি লাথি মেরে ভাঙছে তার তাপস মন্ডল, ধর্মে হিন্দু। আরও জানা যায় তাপস মণ্ডল নিজেই প্রতিমা শিল্পী। নিজের প্রতিমা বানালেও নিজেই আবার মূর্তি ভাঙায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সংখ্যালঘুদের দিকে আঙুল তোলার আগেই পুলিশ ময়দানে নেমে তাপস মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। সে কেন ওই মন্দিরের প্রতিমা ভাঙল এখনও অজানা।
তবে গোপন ক্যামেরায় মুর্তি ভাঙার এই ভিডিও ধরা না পড়লে গল্পটা অন্যরকম হত। সচেতন মানুজন বলছেন, কালী মন্দিরে প্রবেশ করে কালী মূর্তি ভাঙার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে যদি মুসলিম কারও উপস্থিতি থাকত তাহলে তাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি মূলক নানা ঘটনা ঘটতে পারত। বারবার মুর্শিদাবাদ জেলাকে এই ধরনের সম্প্রদায়িক উস্কানির কেন্দ্রবিন্দু কেন করা হচ্ছে তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। যারা মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছেন বা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা করে লুটপাট চালানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা এবং তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়া এটাই এখন প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করেছে জেলা প্রশাসন। অন্য কোন চক্রান্ত এই মূর্তি ভাঙার পেছনে আছে কিনা তা খতিয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। যদিও বিভিন্ন মহলের দাবি অভিযুক্ত তাপস মন্ডল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। অন্যদিকে এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মাঝেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। প্রাক্তন সংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, এটি একটি জঘন্যতম ঘটনা। ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আবার কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ারও চেষ্টা করছে। সবাইকে বলব একটা অপরাধ হয়েছে, তাকে কোনভাবে যেতে সাম্প্রদায়িক রুপ দেওয়া না হয়। অন্যদিকে এ ঘটনা নিয়ে বহরমপুর পৌরসভার পৌরসভার পৌর পিতা নাড়ুগোপাল মুখার্জি বলেন, এলাকায় ঘটনাকে ঘিরে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হলেও মিটমাট হয়ে যায়। পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাপস মন্ডলকে, আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার দেবে। সব জায়গায় রাজনীতিকরণ ঠিক নয়।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct