তালের বড়া
শংকর সাহা
সেদিন ছিল জন্মাষ্টমী পূজা। বাড়িতে বাড়িতে চলছে পূজার আয়োজন। দূর মন্দিরে কাঁসরের ঘন্টায় মনটি যেন আবেগ বিহ্বল হয়ে গেল ভুটোর। বয়স আটের ভুটো বাস্তবের কঠিনতাকে বুঝে ওঠতে পারেনি এখনো। সে শুধুই জানে তারা গরীব। ভুটোর মা বাসন্তী গাঙ্গুলী বাড়িতে কাজ করেন। স্বামী হারানোর ব্যথা সে আজও ভুলতে পারেনি। তাই একমাত্র সন্তান ভুটোকে নিয়ে তার বেঁচে থাকা। সেদিন ছিল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী ।ভুটো মায়ের মুখ থেকে শুনেছে জন্মাষ্টমীতে তালের বড়া ঠাকুরকে ভোগ দিতে হয়। মাকে সে বলেছে আজ তালবড়া করে ঘরের ঠাকুরকে ভোগ দিতে। কিন্তু মা তাকে জানায় তাল বড়া করতে যে তাল লাগে সেটি যে ঘরে নেই। মা তাকে বিকেলে করে দেবে বলে কাজে বেরিয়ে পড়ে। অভাবের সংসারে তালবড়া করতেও যে পয়সা লাগে!
মায়ের মুখ থেকে শোনার পর ভুটো নদীরপাড়ে ফটিকবাবুর বাগানে যায় যদি সেখানে তাল কুড়িয়ে পাওয়া যায়। অনেকক্ষণ থাকার পরে সে একটি তালও পেয়ে যায়। তাল পেয়ে ভুটোর খুব আনন্দ। সে দৌড়তে দৌড়তে বাড়ি ফেরে। আজ যে তালের বড়া হবে। মার মুখে শোনা গল্পের মতো সেও ভগবানকে তালের বড়া করে ভোগ দেবে। ভুটো জানেনা তার মানেটি কি ? দুপুর পেরিয়ে আকাশে তখন পড়ন্ত রোদের ছটা । গাঙ্গুলী বাড়িতে কাজ সেরে সবে ফিরছেন বাসন্তী। বাড়িতে আসতেই ছেলের কান্ড দেখে অবাক সে। ভুটো উনুনের পাড়ে জ্বালানী সাজিয়ে রেখেছে, মা এসে তালের বড়া করবে বলে। পাশে বসে ভুটো। কোলে তার একটি পাকা তাল।ভুটোকে দেখে বাসন্তীর চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। মাকে দেখেই দৌড়ে এসে ভুটো বলে, “ মা,কখন করবে তালের বড়া ? ভগবান কৃষ্ণকে ভোগ দেবেনা ? সবার বাড়িতে কখন পূজা হয়েছে?” ছেলেকে কোলে তুলে চোখে জল নিয়ে বাসন্তী বলে, “ ভুটো, তুই তো আমার সবচেয়ে বড় কৃষ্ণ !” ভুটো মার গলা জড়িয়ে থাকে। শ্রাবণের শেষ বিকেলে আকাশের দিকে নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে থাকে বাসন্তী আর হাতে কাগজে মোড়া গাঙ্গুলী বাড়ি থেকে চেয়ে আনা চিনির একটি প্যাকেট..
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct