আপনজন ডেস্ক: প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীরা মুক্তি পেলেন। নলিনী শ্রীহরণসহ মোট ছয়জনকে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট মুক্তি দিয়েছে। ১৯৯১ সালের ২১ মে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের শ্রীপেরুমবুদুরে এক জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগার্সের (এলটিটিই) এক সদস্য আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করেন। রাজীব গান্ধী হত্যা মামলায় ধরা পড়েছিলেন মোট সাতজন। তাঁদের মধ্যে এ জি পেরারিভালানকে সুপ্রিম কোর্ট গত মে মাসে মুক্তি দিয়েছিলেন। ৩১ বছর জেল খাটার পর শুক্রবার নলিনীর সঙ্গে মুক্তি পেলেন জয়কুমার, সন্তন, মুরুগান, রবার্ট পায়াস ও রবিচন্দ্রন। রাজীব গান্ধী হত্যা মামলায় ধৃত সাতজনকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০০০ সালে রাজীব জায়া সোনিয়া গান্ধীর হস্তক্ষেপের ফলে নলিনীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হয়। ২০০৮ সালে ভেলোর জেলে গিয়ে নলিনীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। পরে তিনি ও রাহুল বলেছিলেন, পিতার হত্যাকারীদের তাঁরা ক্ষমা করে দিয়েছেন। ২০১৪ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার হস্তক্ষেপে বাকি ছয় অপারাধীরও সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমে যাবজ্জীবন হয়। এবার সবাই মুক্তি পেলেন।
রাজীব গান্ধীকে হত্যায় দোষী সবাই তামিলনাড়ুর বাসিন্দা। এ মামলা ও অপরাধীদের নিয়ে তামিলনাড়ুতে এক অদ্ভুত আবেগ জড়িয়ে আছে। রাজ্যে ডিএমকে বা এআইএডিএমকে যাঁরাই যখন ক্ষমতায় থেকেছেন, তাঁরা দোষীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। সচেষ্ট হয়েছেন। তামিল জনসাধারণের এক বড় অংশের বিশ্বাস, রাজীব গান্ধী হত্যায় ওই সাতজনের ভূমিকা ছিল খুবই সামান্য। তাঁরা জানতেও পারেননি যে রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই) তাঁদের ব্যবহার করছে। তাঁদের একেবারেই অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। ২০১৮ সালে তামিলনাড়ুর তৎকালীন সরকার দোষীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি সিদ্ধান্তটি কার্যকর করতে পাঠানো হয়েছিল রাজ্যপালের কাছে। রাজ্যপাল পাঠান রাষ্ট্রপতির কাছে। কিন্তু কেউই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। এই পরিস্থিতিতে অন্যতম অপরাধী পেরারিভালন মুক্তির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। শীর্ষ আদালত গত মে মাসে তাঁকে মুক্তি দেন। সেই রায়ের উল্লেখ করে প্যারোলে মুক্ত নলিনী মাদ্রাজ হাইকোর্টে মুক্তির আবেদন জানান। মাদ্রাজ হাইকোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। শুক্রবার বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন তাঁদের রায়ে বলেন, যে যুক্তিতে সুপ্রিম কোর্ট মে মাসে পেরারিভালনকে মুক্তি দিয়েছিলেন, সেই যুক্তি এই অপরাধীদেরও মুক্তিদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কংগ্রেস অবশ্য এ রায়ের সমালোচনা করেছে। দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, এ রায় ভ্রান্তিসর্বস্ব। সিদ্ধান্ত ভুল। কংগ্রেসের কাছে একেবারেই গ্রহণীয় নয়। দেশের মনোভাব ও মানসিকতার সঙ্গে এ সিদ্ধান্ত বেমানান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct