টেস্ট-এর পর মাধ্যমিকের বিশেষ প্রস্তুতি (ভূগোল)
সুপ্রভাত ঘোষ
ভূগোল শিক্ষক, নারায়ণ দাস বাঙ্গুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুল
বিগত দু’বছর পর, পুনরায় মাধ্যমিক পরীক্ষা পুরো সিলেবাসের উপর হতে চলেছে। সারা বছর ধরে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সান্নিধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের যে কঠোর অধ্যাবসা; তা নিরসন এবং ফলাফলের সন্ধিক্ষণে আমরা উপস্থিত। এ সময়ে প্রত্যেক বিদ্যালয়ের টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা হাতে পেয়েছো এবং বুঝতেই পেরেছ কোথায় তোমাদের দুর্বলতা? তুমি কোথায় সবল? চলো, আমরা সবাই আর একবার ভূগোল বিষয়টাকে ঝালিয়ে নিই। ভূগোলে ১০০ পাওয়া খুবই সহজ। কী করে? তার জন্য নিচের প্রত্যেকটা কাজ করছো কিনা একবার মিলিয়ে নাও।
1. বিভাগ-’ ক’(14) এবং ‘খ’(22) এর ৩৬ নম্বর -এর প্রস্তুতি: এই পর্বে তুমি ৩৬ এ ৩৬ নম্বর তুলতে গেলে যে কোন টেক্সট বই ভালো করে আরো কয়েকবার রিডিং পড়ে নাও। যে সমস্ত জায়গায় লজিক্যাল বা রিজিনিং বা যুক্তি দেওয়ার প্রয়োজন; সেই জায়গাগুলো একটু বুঝে নাও এবং টেস্ট পেপার এর প্রশ্নগুলোকে অভ্যাস করে সেগুলোকে ঝালিয়ে নাও। যেমন- এল নিনোর প্রভাবে ভারতে কি হয়? আবার পেরু উপকূলের কি হয়? এল নিনোর প্রভাবটা যদি ভালো করে পড়ো তাহলেই বুঝতে পারবে; কেন ভারতে এল লিনার প্রভাবে খরা এবং পের উপকূল বন্যা ও দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। আবার পার্বত্য অঞ্চলে কেন বৈপরীত্য উষ্ণতার সৃষ্টি হয় কিংবা পৃথিবী, সূর্য ও চাঁদ একই সরলৈখিক অবস্থানে অবস্থান করলে তাকে সিজিগী বলে কেন? অথবা পূর্ণিমার তুলনায় অমাবস্যা তিথিতে জোয়ারের প্রাবল্যতা বেশি হয় কেন? মনে রাখবে; ৩৬ টা প্রশ্নের মধ্যে ৫টা প্রশ্ন এমন থাকবে যেগুলো তোমাকে পরীক্ষার হলে তোমার যুক্তিবোধের সাহায্যে উত্তর দিতে হবে।তাই প্রত্যেকটা বিষয় সম্পর্কে ধারণাকে সুস্পষ্ট করে নাও।
2. বিভাগ-’গ’-এর ১২ নম্বরের প্রস্তুতি: এই পর্বে দু’নম্বর এর প্রশ্ন ছটি লিখতে হয়। প্রত্যেক প্রশ্নের সঙ্গে একটি করে বিকল্প প্রশ্ন থাকে। মনে রাখতে হবে, এই পর্বে প্রশ্নগুলো সংজ্ঞাভিত্তিক বা বৈশিষ্ট্যভিত্তিক বা উদাহরণ ভিত্তিক হয়ে থাকে। তোমরা এই পর্বের প্রস্তুতির জন্য টেস্ট পেপারের প্রশ্নগুলোকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিতে পারো। প্রত্যেকদিন যেকোনো একটি টেস্ট পেপারের ১২টি প্রশ্ন ভালো করে পড়ে নিয়ে খাতায় লিখে অভ্যাস করতে পারো। এই পর্বে প্রশ্নগুলোর জন্য একটি উদাহরণের চার্ট প্রস্তুত করে রাখতে পারো। যেমন- গৌর কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় যথাযথ সংজ্ঞা এবং উদাহরণ দিতে হবে। যদি প্রশ্ন লেখার সময় সংজ্ঞার সাথে উদাহরণ না দাও, তাহলে তুমি অর্ধেক নম্বর থেকে বঞ্চিত হবে। আবার যদি প্রশ্নটা এরকম হয়, ভারতীয় কৃষির দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ। এক্ষেত্রে উত্তর লেখার সময় ভারতীয় কৃষির অনেক বৈশিষ্ট্য থাকলেও; প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্যয তোমাদের লিখতে হবে। যেমন-তুমি ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য দুটি হল-ক) মৌসুমী বায়ুর প্রভাব এবং খ) জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক এই দুটি লিখতে পারো।
3. বিভাগ-’ঘ’-এর 12 নম্বরের প্রস্তুতি: এই পর্বে প্রশ্নগুলি মূলত ব্যাখ্যা ভিত্তিক বা পার্থক্য ভিত্তিক হয়ে থাকে। ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যাখ্যা উপযুক্ত যুক্তিসহ দিতে হবে;সঙ্গে চিত্র ও উদাহরণ লিখতে হবে। ধরা যাক প্রশ্নটি এরকম; অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদৃষ্টির কারন ব্যাখ্যা করো। এই প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় অস্বক্ষুরাকৃতি হদ সৃষ্টি কিভাবে হলো লিখতে হলে- মিয়েন্ডার থেকে কি করে দুটি নদী বাঁক কাছাকাছি এলো? উত্তলপাড় দুটি কিভাবে যুক্ত হল? অবতলপাড়ে কিভাবে ক্ষয় বৃদ্ধি পেল এবং অবতলপার বরাবর কিভাবে মূল নদীটি নদীবাঁক থেকে বিচ্ছিন্ন হলো? শেষে নদী বাঁকটি ঘোড়ার খুঁড়ের ন্যায় কিভাবে অবস্থান করল? প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর তোমাকে দিতে হবে। পাশে প্রত্যেকটি পর্যায়ের চিত্র সুস্পষ্ট করে আঁকতে হবে এবং উদাহরণ দিতে হবে। মনে রাখবে; চিত্র আঁকার সময়ে কোনটি উত্তলপাড়, কোনটি অবতলপাড়, কোথায় মূল নদী, কোথায় অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি হল;- সেগুলো চিহ্নিতকরণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ভূগোল বিষয়ে চিত্র এঁকে যদি চিহ্নিত না করো তাহলে সেই চিত্রের কোন মূল্য থাকে না অর্থাৎ সেই চিত্রটি গ্রহণযোগ্য নয় উত্তরপত্রের ক্ষেত্রে। আবার যদি পার্থক্য ভিত্তিক প্রশ্ন আসে। ধরা যাক একটি প্রশ্ন এসেছে;- গিরিখাত এবং ক্যানিয়নের মধ্যে পার্থক্য করো। এক্ষেত্রে তিন নম্বর নির্দিষ্ট করা থাকে তিনটি পার্থক্য লেখার জন্য। পার্থক্য লেখার সময় তোমাকে অবশ্যই বিষয়ে গুলিকে চিহ্নিত করে তবেই পার্থক্য লিখতে হবে। মনে রাখবে পার্থক্যের ক্ষেত্রে উদাহরণ এবং চিত্র পার্থক্যের বিষয় হতে পারে না তাই দুটি বিষয়ের মধ্যে উপযুক্ত যে পার্থক্যের বিষয়গুলি হবে সেগুলিকেই তোমাকে বেছে নিতে হবে; না হলে তুমি পুরো নম্বর থেকে বঞ্চিত হবে।
4. বিভাগ-’ঙ’-এর ২০ নম্বরের প্রস্তুতি: এই পর্বে ৫ নম্বরের প্রশ্ন ৪টি লিখতে হয়। এর এই বিভাগে তোমরা দেখেছো দুটি ভাগ থাকে।
প্রথম ভাগে: প্রাকৃতিক ভূগোল থেকে চারটি প্রশ্ন আসে; যার মধ্যে দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তোমাদের ভূগোল বইতে প্রাকৃতিক ভূগোলে চারটি অধ্যায় রয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ অধ্যায় অর্থাৎ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অধ্যায় থেকে কোনো পাঁচ নম্বরের প্রশ্ন থাকে না। এই বিভাগের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে যথাযথ চিত্র ও উদাহরণ তোমাদের তৈরি রাখতে হবে। যদি পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে, হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট যেকোনো তিনটি ভূমিরূপ-এর চিত্রসহ বর্ণনা দাও। এই প্রশ্নের উত্তর লেখার সময়ে প্রথমেই হিমবাহের ক্ষয়কাজের প্রক্রিয়াগুলি কি কি সেগুলো তোমাকে দিতে হবে। এরপর হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির নাম লিখে প্রধান তিনটি ভূমিরূপ এর উৎপত্তির কারণ চিত্রসহ ও উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে। যেমন তিনটি ভূমিরূপ হিসাবে উত্তরপত্রে লিখতে পারো:- ক)সার্ক, খ) ঝুলন্ত উপত্যকা, গ)রসে মোতানে বা ক্র্যাগ এণ্ড টেল। আবার সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বা গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব প্রশ্ন এলে, উত্তর লেখার সময় উপযুক্ত প্রভাবের তথ্য যথাযথভাবে উদাহরণসহ দিতে হবে। দ্বিতীয় ভাগে,আঞ্চলিক ভূগোল থেকে চারটি প্রশ্ন আসবে যার মধ্যে দুটি প্রশ্নের উত্তর তোমাদেরকে লিখতে হবে। সাধারণত আঞ্চলিক ভূগোলে, ভারতের ভূ প্রকৃতি, নদনদী, জলবায়ু, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, মৃত্তিকা- এখান থেকে দুটি প্রশ্ন এবং কৃষিকাজ, শিল্প, জনসংখ্যা এবং পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা- এখান থেকে দুটি প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে। তোমরা এই দুটি ভাগের মধ্যে যে ভাগটি স্বচ্ছন্দ বোধ করবে, সেখান থেকেই উত্তর লিখতে পারো। যদি কেউ মনে করো, ভারতের ভূপ্রকৃতি-নদনদী -জলবায়ু অংশটি তোমার কাছে সহজ ও বোধগম্য তাহলে তুমি ওই ক্ষেত্রের প্রশ্নে অংশগ্রহণ করতে পারো,অথবা; দ্বিতীয় ভাগের কৃষিকাজ-শিল্প-জনসংখ্যা থেকেও উত্তর লিখতে পারো। যেকোন গ্রুপ থেকেই উত্তর লেখো না কেন, যথাযথ উদাহরণ দিয়ে যদি লেখো তবে পুরো নম্বর পাওয়া সম্ভব। এই গ্রুপের প্রশ্নের উত্তরগুলো লেখার ক্ষেত্রে ভারতের মানচিত্র এঁকে অবস্থান সুস্পষ্ট করা অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়। যেমন- পশ্চিম ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্প অথবা কার্পাস বস্ত্র বয়ন শিল্পের অনুকূল পরিবেশ অথবা জনসংখ্যার অসম বন্টন এর কারণ- এই প্রশ্নগুলো দেখে যেও।
5. বিভাগ-’চ’-য়ের ১০ নম্বরের প্রস্তুতি: মাধ্যমিক প্রশ্নপত্রে ৬- এর দাগের এই প্রশ্নগুলি ভারতের মানচিত্রে উপযুক্ত চিহ্ন ও প্রতীক সহ চিহ্নিত করতে হয়। এই অংশটিতে তোমরা খুব সহজেই পুর নম্বর পেতে পারো।তবে অনেকে যথাযথ অভ্যাস না করার কারণে পুরো নম্বর থেকে বঞ্চিত হও।এই অংশে ১০টি স্থানকে ভারতের মানচিত্রে চিহ্নিত করতে বলা হয়। যার মধ্যে পর্বত, নদ-নদী ও হ্রদ, জলবায়ু, মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ থেকে -পাঁচটি প্রশ্ন এবং বাকি অংশ কৃষি কাজ, শিল্প, জনসংখ্যা, বন্দর থেকে- পাঁচটি প্রশ্ন থাকে। তোমরা বাড়িতে প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় যদি যেকোনো টেস্ট পেপার থেকে দশটি করে স্থানকে প্রত্যেকদিন অভ্যাস করে ঘুমোতে যাও, তাহলে দেখবে এই অংশের জন্য তোমাকে আলাদা করে কোন পরিশ্রম করতে হচ্ছে না;কিন্তু তুমি ১০ নম্বরে ১০- মাধ্যমিক পরীক্ষায় পেয়ে গেছো। আশা করি, এতক্ষণ ধরে ভূগোলে কিভাবে তোমরা খুব সহজেই ১০০/ ১০০ নম্বর পেতে পারো তার সম্পর্কে আমার ধারণা তোমাদের সামনে তুলে ধরলাম। তোমরা নিশ্চয়ই উপকৃত হবে এবং সুঅভ্যাস এর মাধ্যমে যদি বিষয়টাকে অনুধাবন করো; তাহলে তোমাদের সাফল্যকে কেউ আটকাতে পারবেনা। তোমাদের সাফল্য অবশ্যই আসবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct