আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের হজযাত্রীদের জন্য আশ্রয়স্থল ও অফিস হিসেবে নিউটাউনের মদিনাতুল হুজ্জাজ সমধিক পরিচিত। হজ মরশুমে হাজিদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হলেও বাকি সময় প্রশাসনের নির্দেশে অনেক সময় অন্য সরকারি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সূত্রের খবর, এ বছর সল্টলেকের করুণাময়ীতে চলতি বইমেলায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। রাজ্য সরকারের নির্দেশে এই কটা দিন তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হয়েছে মদীনাতুল হুজ্জাজ কর্তাদের। হজ যাত্রী ব্যতিরেকে মদীনাতুল হুজ্জাজ প্রায়শ রাজ্য সরকারের অন্য কাজে এভাবে সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু এই পুলিশ কর্মীদের থাকাকালীন মদীনাতুল হুজ্জাজের ওজুখানা সংলগ্ন শৌাচাগারে মদের বোতল ও আবর্জনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ‘আপনজন’। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মদীনাতুল হুজ্জাজের ওজুখানা সংলগ্ন শৌচাগারটি খুবই অপরিষ্কার। আর সেখানকার এক কোণে রয়েছে দুটি মদের বোতল সহ খালি জলের বোতল, খাবার প্লেট প্রভৃতি আবর্জনা। ওজু খানাও অপরিষ্কার। সেখানেও প্রস্রাব করে নোংরা করার চিত্রও ফুটে উঠেছে বলে দাবি। সাধারণত মদীনাতুল হু্জ্জাজকে একটি পবিত্র ভবন বলে মনে করে থাকেন রাজ্যের সংখ্যালঘুরা। কারণ, সেখানে হজযাত্রীদের থাকার জন্য খুবই সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। সেই সঙ্গে পবিত্রতা রক্ষা করা হয়। মদীনাতুল হুজ্জাজে বরাবরই এই পবিত্রতা রক্ষা করার বিশেষ নির্দেশ থাকে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু মদীনাতুল হুজ্জাজের শৌচাগারে পড়ে থাকা মদের বোতলের দৃশ্য ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারিত হওয়ার পর প্রশ্ন উঠছে, শৌচাগারের মধ্যে এই মদের বোতল এল কী করে? তাহলে কি মদীনাতুল হুজ্জাজের কর্তাদের কড়া নির্দেশ অমান্য করে এখানে রাতে মদের আসর বসানো হয়েছে বা মদ খেয়েছে? আঙুল উঠছে এখানে রাত্রে থাকা এক শ্রেণির পুলিশ কর্মীর দিকে। সূত্রের খবর, মদীনাতুল হুজ্জাজে যেসব পুলিশ কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশ কয়েক সচেতন পুলিশ কর্মীও আছেন। তারা তাদের ঘনিষ্ঠজনদের কাছে জানিয়েছেন, ওজুখানায় যখন হাত েপা দুতে যানতখন দেখেন সেখানে প্রস্রাবে সয়লাব ও প্রস্রাবের বিকট গন্ধ। এরপর শৌচাগারে গিয়ে তাদের চোখে পড়ে মদের বোতল পড়ে থাকার দৃশ্য। তা দেখে তারা মর্মামত হন। যদিও অনেকে বলছেন, মদীনাতুল হুজ্জাজের শৌচাগারের মধ্যে মদের বোতল পড়ে থাকা মানেই সেখানে কেউ মদ্যপান করেছে এমনটা নাও হতে পারে। বাইরে থেকে থেকে খালি মদের বোতল শৌচাগারে ফেলে মদীনাতুল হুজ্জাজের বদনাম করার চেষ্টাও হতে পারে। তবে নির্দিষ্ট প্রমাণ না মেলায় এ নিয়ে অসন্তোষের সৃষ্টি হলেও নির্দিষ্ট করে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। তাই এই ধরনের অভিযোগ উঠলেও কারও বিরুদ্ধে কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া মুশকিল বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। যদিও একটি মহল থেকে দাবি তোলা হয়েছে, মদীনাতুল হুজ্জাজের সিসিটিভি দেখে শনাক্ত করা হোক কারা এই মদের বোতল নিয়ে ওজুখানা বা শৌচাগারে গেল। এ ব্যাপারে রাজ্য হজ কমিটির কার্যনির্বাহী আধিকারিক মুহাম্মদ নকি-র সঙ্গে ‘আপনজন’ যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ নিয়ে রাজ্যের মুসলিম বিশিষ্টজনদের নানা অভিমত তুলে ধরেছেন ‘আপনজন’ সাংবাদিক এম মেহেদী সানি।
খুবই সেনসিটিভ বিষয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে তবে কিছু মন্তব্য করতে পারব। (শফিক কাসেমি, নাখোদা মসজিদ) সরকার হজ ভবনকে ব্যবহার করতে চাইলে পবিত্রতা রক্ষা করা উচিত। (আবদুল মাতিন, আহলে আলসুন্নত) পবিত্র কাজে ব্যবহার করার জায়গা অপবিত্র করা অত্যন্ত দুর্ভাগ্য জনক। (কামরুজ্জমান, পার্সোনাল ল বোর্ড) মুসলমানদের মনে এমন ধারণা তৈরি করা হচ্ছে তারা যেন অনুগ্রহের পাত্র। (পীরজাদা রুহুল আমীন, আইমা) এটা খুবই অন্যায় কাজ। এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। (নুরুদ্দিন, জামায়আতে ইসলামি) এই ধরনের কাজ ভীষণ নিন্দনীয়। কর্তৃপক্ষের ক্ষমা চাওয়া উচিত। (আলমগির হোসেন, আহলে হাদিস) হজ ভবনে মদের উপস্থিতি মোটেই কাম্য নয়। এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। (আবদুল হাদি, সম্পাদক, পিস) পবিত্র স্থানে অপবিত্র কাজ সমর্থন যোগ্য নয়। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। (বাকিবিল্লাহ, ইমাম সংগঠন) রাজ্যে হাজিদের জন্য পবিত্র স্থান অন্য সরকারি কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়। সামাজিক থেকে শুরু করে ধর্মীয় ক্ষেত্রে মুসলমানদেরকে এভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে।(নওশাদ সিদ্দিকী, বিধায়ক)All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct