শংকর সাহা: হাতে চিঠিটি পাবার পর সুবিমল কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। এতো অভাবের সংসারে মা যে কি করে তাকে পড়াচ্ছেন তা হয়তো বাইরের আর পাঁচজন না জানলে বুঝতেও পারবে না। এমাসে মা তাকে বাড়তি আরও ৪০০ টাকা পাঠিয়েছেন। সাথে একটি হাত চিঠি,আর তাতে লেখা,.. “মাসখরচের সাথে এই ৪০০টাকাটি পাঠালাম । একটি জামা কিনে পরিস। ভালো করে লেখাপড়াটা করিস।”
মায়ের চোখের সেই স্বপ্নগুলো আজও সুবিমলকে মনে করিয়ে দেয় সেই কষ্টের দিনগুলোর কথা। সুবিমলের জন্মের কয়েকমাস পড়েই তার বাবা হঠাত বিনা চিকিতসায় মারা যান। একদিকে অভাবের সংসারে ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদের কিভাবে মানুষ করবেন তা প্রায় দিশেহারা করূণাময়ী( সুবিমলের মা)। কখনো ঠোঙ্গা নিয়ে,কখনোবা ধূপকাঠি বানিয়ে সংসার চালাতেন কিন্তু কখনো আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। ছেলে মেয়েদের এক উন্নত শিক্ষায় তিনি মানুষ করেছিলেন। পাড়ার সকলে বলত,”করূণাময়ীর সন্তানরা হিরের টুকরো”। মেয়েদের বিয়ে দেবার পর সুবিমলকে মানুষ করাই তাহার স্বপ্ন।
সেবার সুবিমল উচ্চমাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে জেলায় প্রথম স্থান লাভকরে। তাই ছেলেকে নিয়ে তার স্বপ্ন আরও বেড়ে যায়। ছেলেকে শহরের বড় কলেজে ভর্তি করাতে চাইলে সুবিমল মাকে বলে,... “শহরে থেকে পড়াশোনা করলে অনেক খরচ। আমরা তো গরীব মা।”
ছেলেকে থামিয়ে তিনি বলতে থাকেন, “তোকে যে ভালো জায়গায় ভর্তি করাবো তাতে আমাকে আরও খাটতে হলেও সব সয়ে যাবে এ শরীরে। তোকে যে মানুষ করতেই হবে।”
মার কথাগুলো সে কি করে ফেলবে কিন্তু সুবিমল বুঝতে পারছে মা কি করেই বা পারবেন এতগুলো টাকা জোগাড় করতে। আজ সে আশুতোষ কলেজে অঙ্কে স্নাতক করছে। ভালো পড়াশোনার জন্যে কলেজের সবার কাছে সুবিমল আজ পরিচিত। এ মাসে মার পাঠানো টাকাগুলো হাতে নিয়ে সে ভাবছে, শেষবার সে যখন বাড়ি থেকে আসে তখন দেখেছিল মার পায়ের জুতোটি বড্ড ছিঁড়ে গেছে। তাই টিফিনের টাকাগুলো জমিয়ে যা হয়েছে তা দিয়ে মার জন্যে একজোড়া জুতো কেনে সুবিমল। ক্যুরিয়র করে পাঠাবে। মনে মনে ভাবতে থাকে মা কতই না খুশি হবেন। ভেতরে সে একটি চিঠি লিখে দেয়। আর তাতে লেখা,... “মা,তোমার জন্যে পাঠালাম। আশা করছি তুমি পরবে। ভালো থেকো মা।”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct