শিমুল গাছে ভূতের বাসা
সাঈদুর রহমান লিটন
____________________
গ্রামের নাম জগৎহারা। রূপ ঐশ্বর্যে ভরপুর গ্রামের চারিদিকে। জগৎহারার প্রকৃতি যেনো বিধাতার আপন হাতে সৃজন করা। জগৎহারা গ্রামটি কল্পনার এক স্বর্গ পুরির মত। দেখলে মন ভরে যায়, হৃদয় জুরিয়ে যায় জগৎহারার রূপ লাবন্যে।সেই গ্রামে জনৈক এক কবির আমন্ত্রণে জগৎহারা যাওয়ার জন্য ফরিদপুর হতে পড়ন্ত বিকেলে যাত্রা করলেন কবি অনার্য রহমান। তরুণ কবি অনার্য রহমান প্রকৃতির কবি, ভালোবাসার কবি। প্রকৃতি আর অনার্য যেনো ভিন্ন রূপের এক সত্তা।প্রকৃতির টানেই জনৈক কবির আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিতে পারেন নি। কাঁধে পাটের তৈরি একটি ব্যাগ, চোখে কালো চশমা, পরণে গারদের পাজামা পাঞ্জাবি একজন পরিপূর্ণ কবি অনার্য রহমান মধুখালী বাসস্ট্যান্ডে নামলেন। যখন বাস থেকে নামলেন তখন মাইকে মাগরিবের আযান ধ্বনি বাতাসে ভেসে আসছে। বাসস্টাণ্ড কে কেউ কেউ রেলগেট
নামে ও ডাকে।কারণ বাসস্টাণ্ডের উপর দিয়ে রেল লাইন বয়ে গেছে। রেলগাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে বাস ট্রাক যাতে না যেতে পারে তার জন্য গেট নামিয়ে দেয় যার জন্য এলাকাটা বাসস্ট্যান্ড হলে ও নাম রেলগেট। রেলগেট থেকে জগৎহারা প্রায় আট কিলোমিটার দূরে। অটো অথবা ম্যাজিক বা গ্রাম বাংলা নামক তিন চাকার গাড়িতে তারকেশ্বর নামক স্থানে নামতে হয়। রেলগেট থেকে বৃষ্টি শুরু হলো। ক্রমান্বয়ে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে লাগলো। আঁধার রাত । বৃষ্টির মধ্যেই অনার্য রহমান তারকেশ্বর নামলেন। তারকেশ্বর থেকে কিলো খানিক দূরে জগৎহারা। কাঁচা রাস্তা। বৃষ্টি তখনো পড়ছে। গুরিগুরি বৃষ্টি। কর্দমাক্ত রাস্তা। জগৎহারায় জনৈক কবির সাথে কথা। জগৎহারার কবি সাহেব, কিভাবে পৌছুতে হবে তা বলে দিলেন। গ্রামের শেষ প্রান্তে কবির বাড়ি। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মুঠোফোনের আলোতে কবি টুকিটাকি পায়ে হেঁটে চলছেন। হাতে নতুন কালি করা জুতো।, পাজামা কাঁদা জরানোর ভয়ে কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছেন। চশমা খুলে পকেটে নিয়েছেন।ব্যাগটা এক হাতে মাথায় নিয়ে অনার্য বাবু অস্ফুটে আলোয় দেখেশুনে পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছেন। কিছু দূর এগিয়ে গেলে ফাঁকা রাস্তায় প্রকাণ্ড একটা গাছ মনে হলো। ইতি মধ্যে জগৎহারার কবি রিং দিলেন। বড় গাছের কথা বলতেই বললেন, ওটি শিমুল গাছ।আর কয়েক মিনিট হাঁটলেই বাউণ্ডারি আছে যে বাড়িটায় ঐ বাড়ির পাশের বাড়িটাই আমার বাড়ি। অনার্য রহমান খুশি হলেন চলে এসেছেন এই ভেবে। হঠাৎ চমকে উঠলেন, কে যেন তার মাথার ব্যাগটির উপর ঢিল ছুঁড়ে দিলো মনে হলো। কবি রহমান বললেন কে কে? কোন সাড়া শব্দ পেলেন না। আবার বললেন আমাকে কেন ঢিল ছুঁড়া হলো? কোন উত্তর এলো না। কবি হাঁটা শুরু করবেন এমত অবস্থায় আবারো ঢিল পড়ার শব্দ হলো। এবার কবি কম্পিত গলায় কে ভাই কে? কোণ উত্তর এবার ও পেলেন না।কবির মনে ভয় শুরু শুরু হলো। গাঁয়ের মধ্য বড় গাছ। আঁধার রাত। ছিঁটেফোঁটা বৃষ্টি। অপ্রাকৃত কিছু নাতো! কবি অনার্যের গায়ের লোম গুলো কিছুটা খাঁড়া হতে শুরু করছে। ইতিমধ্যে কী যেনো মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল। কবি ঘামতে শুরু করেছেন। এসব কী হচ্ছে আমার সাথে?
পা উঠাতেই কাঁদায় পিছলে পড়ে গেলেন। কবির হাতে পায়ে কাঁদা লেপ্টে গেল। সাদা পাজামা পাঞ্জাবি দেখতে কেমন বিশ্রী হয়েছে আল্লাই জানে। কবি উঠে দাঁড়ালেন। কবি রহমান ভূত প্রেত আছে মানতে চান না। তাহলে এসব কী কাণ্ড হচ্ছে। কবি ভাবতে পারছেন না। তাহলে কী এসব বলতে কিছু আছে? হয়ত আছে, নয়ত না। ওসব ভেবে লাভ নেই। কবি সব ভুলে হাঁটার উদ্যোগ নিলেন। কয়েক পা এগুতেই কিছু চিকুন সুরের এক ধরণের শব্দ শুনতে পেলেন। যেনো এক প্রকার কান্না। কিসের কান্না ভাবতে পারলেন না কবি। কবি শহরের মানুষ। এ রকম শব্দ কখনো শুনেন নি। শুধুমাত্র বইয়ে পড়েছেন এরকম সময় এমন স্থানে ভূত পেত্নীরা আনাগোনা করে। ভূতেরা মানুষকে ভয় দেখায়। অনার্য রহমান ভয় পাবেন না মনে মনে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন। হাঁটার চেষ্টা করেও হাঁটতে পারছেন না। ধর্ম কর্ম যা যা কিছু জানা আছে তা পালন করছেন। দোয়া দরুদপাঠ করে বুকে ফুঁকে দিলেন। দোয়া দরুদ পড়লে ভূত পেত্নীরা আর থাকে না। চলে যায়। আল্লাহ রসুলকে ভয় পায়। রহমান সাহেব সর্বস্ব শক্তি সঞ্চয় করে বুকে সাহস নিয়ে শিমুল তলা থেকে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হলেন। ততৎক্ষণাৎ আরো জোরেশোরে ভয়ার্ত শব্দ করে উঠলো। এবার একা নয়।কয়েকটি এক সাথে। এবং ক্রমাগত করে যাচ্ছিল। অনার্য রহমান এবার চোখ বুজলেন। যাতে কিছু না দেখেন। কানে আঙ্গুল দিলেন যাতে কিছু না শুনেন। একবার বসে পড়লেন। কালো চশমা, হাতের ব্যাগ, বুকের সোনালী রঙের কলম বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটকে পড়ে গেল।এদিকে জগৎহারার কবি অনার্য রহমানের দেরি দেখে চর্চ লাইট হাতে অনার্য রহমানের খোঁজে বের হলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct