এম মেহেদী সানি, বনগাঁ: প্রথম মুসলিম মহিলা হিসেবে রাজ্যে রেল পুলিশের অফিসার ইনচার্জ বা ওসি হয়ে ইতিহাস গড়েছেন রূপসিনা পারভিন। সম্প্রতি বনগাঁ জিআরপি’র ওসি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, তিনিই প্রথম মুসলিম মহিলা যিনি সরাসরি পশ্চিমবঙ্গে সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করেছিলেন। ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুলিশ নিয়োগের জন্য রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় যোগ্যতা অর্জনের পরে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে যোগদান করেন এবং সরাসরি হাওড়া রেলওয়ে স্টেশনের জিআরপি থানায় পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে নিযুক্ত হন। বর্তমানে অফিসার ইনচার্জ পদে বনগাঁ জিআরপি থানার দায়িত্ব পেয়ে রূপসিনা পারভিন ‘আপনজন’ প্রতিনিধিকে বলেন, “বর্তমানে সফলভাবে দায়িত্ব নিয়ে থানা সামলাচ্ছি, ওসি হিসেবে থানা চালাতে আমার কোনও সমস্যা হচ্ছে না।”রূপসিনা পারভিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগর ব্লকের চারঘাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর শশুর বাড়ি বনগাঁ ব্লকের গাঁড়াপোতায়। স্বামী এবং এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন পুলিশ কোয়ার্টারে। স্বামী রহিম মন্ডল একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ছয় বছরের এক মেয়ে রয়েছে তাঁর, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। তাঁর বাবা বাসারত হোসেন রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার বিভাগের সরকারি কর্মচারী ছিলেন। অবসরকালীন সময়ে গত মে মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। মা সেরিমা খাতুন ছিলেন গৃহবধূ। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল তাদের মেয়ে সরকারি চাকরিতে উচ্চতর পদে অধিষ্ঠিত হবে। রূপসিনা আরও বলেন, “আমার জন্য আমার মা-বাবাকে সমাজের মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে, এখনও কেন মেয়েকে বিয়ে দিলি না? এতো দিন পড়াশোনা করানোর কী দরকার? মুসলিম সমাজ পুলিশের চাকরি মেনে নেবে কী? সবকিছু উপেক্ষা করেও মা-বাবা পাশে ছিলেন বলেই আমি এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। মা-বাবার কাছ থেকে সর্বদা এগিয়ে চলার প্রেরণা পেয়েছি সর্বদা অনুপ্রাণিত করতেন আমাকে।” রূপসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে সাব-ইন্সপেক্টর পদের জন্য প্রথম লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং সফল হই। তারপরে বাধ্যতামূলক শারীরিক পরীক্ষা এবং সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ হয়ে অবশেষে হাওড়ার জিআরপি থানায় সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিযুক্ত হই। পরে বারাসাত জিআরপি থানায় এবং গত জুন মাসে সেকেন্ড অফিসার হিসেবে বনগাঁ জিআরপি থানায় দায়িত্ব পেয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ১৮ নভেম্বর বনগাঁ জিআরপি থানায় অফিসার ইনচার্জ বা ওসির দায়িত্ব পেয়েছি।” মুসলিম পরিবার থেকে উঠে এসে বড় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন রূপসিনা পারভিন এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে রূপসিনা মুসলিম মেয়েদের উদ্দেশ্য বলেন “মুসলিম সমাজে মেয়েদেরকে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে মূল প্রতিবন্ধকতা হল এক শ্রেণির মানুষের ধর্মীয় গোঁড়ামি, সেখান থেকে সব বাধা পার করে মুসলিম মেয়েদের এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি বিভিন্ন পদে বড় দায়িত্ব সামলাতে হবে, কখনো নিজেকে মেয়ে হিসেবে ভাবলে চলবে না। এর পাশাপাশি সব ধর্মের মেয়েদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।”তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই আমাকে দেখে প্রত্যেক মুসলিম মেয়েরা এগিয়ে আসুক, প্রত্যেকের মধ্যেই প্রতিভা রয়েছে সেটিকে কাজে লাগাক। ধর্মীয় গোঁড়ামির মধ্যে নিজেদেরকে আবদ্ধ না রেখে শিক্ষাকে পাথেয় করে প্রত্যেকটি মেয়ে এগিয়ে আসুক। পরামর্শ নিতে ইচ্ছুক কোনও মেয়ে যদি আমার সাথে কথা বলতে চায় আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে, আমি তাদের পাশে থাকব’ বলেও মন্তব্য করেন বনগাঁ জিআরপি’র ওসি রূপসিনা পারভিন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct