আপনজন ডেস্ক: দিল্লিতে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠক প্রসঙ্গে মোদি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে চলমান ডেলিমিটেশন দ্রুত হওয়া উচিত, যাতে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর তা উন্নয়নের গতিবেগকে ত্বরান্বিত করবে।
এদিন জম্মু ও কাশ্মীরের ১৪ জন রাজনৈতিক নেতার সাথে সাড়ে তিন ঘণ্টা দীর্ঘ বৈঠকের পর একাধিক টুইটে মোদি বলেন, আলোচনার মধ্যে ছিল একটি উন্নত ও প্রগতিশীল জম্মু ও কাশ্মীর গড়ে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মোদি আরও বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হল জম্মু ও কাশ্মীরের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা। তবে কোথাও ৩৭০ ধারার চালুর ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। যদিও সূত্রের খবর, কাশ্মীরি নেতাদের প্রধানমন্ত্রী অাশ্বাস দিয়েছেন, সঠিক সময়ে জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হবে।
তবে সাড়ে তিন ঘণ্টা দীর্ঘ বৈঠককালে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় ১৪ জন নেতাই দাবি করেন যে, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের উপর থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া ৩৭০ ধারার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করার পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং মূলধারার কাশ্মীরের দলগুলির মধ্যে এটিই হল প্রথম বৈঠক। মোদী জোর দিয়েছিলেন যে জেলা উন্নয়ন কাউন্সিল নির্বাচনের সফলভাবে পরিচালনা অনুষ্ঠানের মতোই বিধানসভা নির্বাচন করাকেও। প্রধানমন্ত্রী যদিও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের সমাজের সকল শ্রেণীর জন্য সুরক্ষা ও সুরক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার।
আলোচনায় অংশ নেন কাশ্মীরের চার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ ও তার ছেলে ওমর আবদুল্লাহ, কংগ্রেসের গোলাম নবী আজাদ এবং পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি। চার প্রাক্তন উপমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, কংগ্রেসের তারা চাঁদ, পিপলস কনফারেন্স নেতা মোজাফফর হুসেন বেগ এবং বিজেপির নির্মল সিং ও কবিন্দর গুপ্ত। সিপিআই-এম নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ তারিগামী, জম্মু ও কাশ্মীর অপনী পার্টির (জেপিএপি) প্রধান আলতাফ বুখারি, পিপলস কনফারেন্সের সাজ্জাদ লোন, জে-কে কংগ্রেসের প্রধান জি এ মীর, বিজেপির রবীন্দ্র রায়না এবং প্যান্থার্স পার্টির নেতা ভীম সিংও প্রতিনিধি দলের অংশ নিয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা, এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং উপস্থিত ছিলেন।
তবে এদিনের বৈঠক সম্বন্ধে ওমর আবদুল্লাহ বলেন, গুলাম নবি আজাদ দাবি করেন নির্বাচনের আগে জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। সেই সময় সেই কথা শুনে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি প্রধানমন্ত্রী।
তাই জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবি অব্যহত থাকেব বলেন মন্তব্য করেন ওমর আবদুল্লাহ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও ৩৭০ ধারার পক্ষে সওয়াল করেন।
পিপলস কনফারেন্সের চেয়ারম্যান মুজাফফর হোসেন বেগ জানান, আমরা সকলেই একমত হয়েছি যে আমাদের অবশ্যই জম্মু ও কাশ্মীরের এর গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী খুব ধৈর্য সহকারে সব শুনেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন সীমানা নির্ধারণ হয়ে গেলেই নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে জোরকদমে।
৩৭০ ধারার চালু করার দাবি করা ছাড়াও কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ পাঁচটি দাবি জানান এদিনের বৈঠকে। গুলাম নবি আজাদ বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছিলেন উপত্যকাকে ফের রাজ্যের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। রাজ্যের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার এটাই সঠিক সময়। জম্মু ও কাশ্মীরে যত দ্রুত সম্ভবত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই বৈঠকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের যাতে ফিরিয়ে নিয়ে বসতি স্থাপন করা যায় সেই প্রসঙ্গও তুলেছেন আজাদ। তিনি জানিয়েছেন, এটা আমাদের সবার নৈতিক কর্তব্য। কংগ্রেসের চতুর্থ দাবি ছিল, ২০১৯ সালে ৫ই আগস্ট কাশ্মীরে যত রাজনৈতিক বন্দি এবং সামাজিক বন্দি, অর্থাৎ জম্মু কাশ্মীরের ৩৭০ তুলে দেওয়ার পরে ওই দিন রাজনৈতিক কারণে যাদের গ্রেফতার কিংবা আটক করা হয়েছে তাদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া হোক। কংগ্রেসের শেষ দাবি ছিল, জমির অধিকার এবং জম্মু কাশ্মীরের যুবাদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা। তাদের মধ্যে অন্যতম হল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পুনর্বাসন নিয়েও একগুচ্ছ দাবি জানান গুলাম নবি আজাদ। এদিন বৈঠক শেষে কংগ্রেস নেতা তথা জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ এদিন বলেন, কাশ্মীর এবং জম্মুর বিভিন্ন জায়গাতে অনেক পণ্ডিত রয়েছেন। তাছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন পণ্ডিতরা। তাঁদের পুনর্বাসন করার কথা বলেছি আমরা।
বৈঠকে গুপকার জোটের দলগুলির তরফে জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবি জানানো হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct