ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পরিসমাপ্তি কিভাবে ঘটবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এ ঘটনায় বিশ্বরাজনীতিতে যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রাশিয়া ও এর পেছনে চিন সহ মিত্র আরো কিছু দেশ বর্তমানে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন একটি ব্যবস্থাকে অনিবার্য করে তুলতে চাইছে বলে মনে হয়। সেটি রাশিয়া-মার্কিন দ্বিমেরুর বিভাজনকেন্দ্রিক ব্যবস্থা না-ও হতে পারে। তা নিয়ে লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ শেষ কিস্তি।
সে ক্ষেত্রে আমেরিকা পরমাণু চুক্তি পুনর্বহালে সম্মত হতে পারে। সে সাথে তেল বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। সেটি হলে ইরানের মধ্যপ্রাচ্যের ভূমিকায় তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। এতে ইরান তার ভূমিকা একেবারে উল্টে হয়তো দেবে না। তবে দেশটি একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে চলে যেতে পারে, যে অবস্থান অক্ষ ঘুরিয়ে দেবার সিদ্ধান্তে সৌদি-আমিরাত নিলে তাদের শায়েস্তা করতে কাজে লাগাতে পারবে আমেরিকা। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির এই পরিস্থিতি যেকোনো সময় ভয়ঙ্কর এক রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে অনেক খেলাই এখনো বাকি রয়েছে বলে মনে হয়। তুরস্ক ও ইসরাইলেরও এই সমীকরণে প্রভাবশালী ভূমিকা থাকবে। ইসরাইল ইউক্রেনে ইতিবাচক ভূমিকা নিলে রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে তার নিরাপত্তা বিঘ্নিতকারী শক্তিগুলোকে সমর্থন দিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। অন্য দিকে একই কাজ তুরস্ক করলে সিরিয়া আজারবাইজান ও লিবিয়ায় তুরস্কের অবস্থানে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে বাস্তব কারণেই এই দু’টি দেশ কোনো এক পক্ষে প্রান্তিকভাবে না ঝুঁকে ভারসাম্য বজায় রাখার নীতি নিয়ে চলেছে। যদিও জোরালোভাবে পক্ষ নেয়ার ব্যাপারে তাদের ওপর চাপ রয়েছে। পাকিস্তানে সুপারসনিক মিসাইলের রহস্য ইউক্রেনের প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধের আঁচ যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ঠিক সে সময়েই গোলাবিহীন এক ভারতীয় ব্রহ্ম সুপারসনিক মিসাইল আকাশসীমা ভেদ করে পাকিস্তানে আঘাত হানে। মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে ভারতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার উদ্যোগ নিয়েছিল, সেটি থেমে যায় রাশিয়ার অনুরোধে। এরপর পাকিস্তান মিসাইলটি আসলেই রাষ্ট্রিক ত্রুটি না অন্য কোনো কারণে ছোড়া হয়েছে তা তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগের দাবি জানায়। সে দাবিতে নয়াদিল্লি এক দিকে সাড়া দেয়নি অন্য দিকে ভারত পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দখলে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর প্রকাশ হয়। আর ঠিক এ সময় পাকিস্তানকে চীন হাইপারসনিক মিসাইল তৈরির প্রযুক্তি হস্তান্তর করার খবর প্রকাশ হয়। এই সময়ে ইসলামাবাদে আয়োজন শুরু হয়েছে ওআইসি সম্মেলন। আর একই সময়ে ইমরান খানের ওপর সংসদে অনাস্থা জ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতাও সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি উত্তেজনার আরেকটি কেন্দ্র দক্ষিণ এশিয়া হতে যাচ্ছে বলে মনে হয়।
ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন সর্বাত্মক যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ উত্তেজনা, দক্ষিণ এশিয়ায় ধূমায়িত উত্তেজনা, বৈশ্বিক পরিসরে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও কর্তৃত্ব পরিবর্তনের লড়াই, এসব কিছু একটি নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরির পরিপ্রেক্ষিতে চলছে বলে মনে হয়। এর সাথে তাইওয়ান উত্তেজনা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে কিউবা বা অন্য কোনো দেশে নতুন কোনো উত্তাপ তৈরি হলে পৃথিবী হয়ে উঠতে পারে এক উত্তপ্ত গ্রহ। এর পথ ধরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো কোনো ঘটনা ঘটা অসম্ভব কিছু বলে মনে করছেন না অনেক বিশ্লেষক। আর পুতিন ল্যাভরভ বা বাইডেন ব্লিঙ্কেনের কথা অনুযায়ী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরমাণু যুদ্ধে রূপ নিলে তা বিশ্বে মনুষ্যসৃষ্ট এক মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আলেক্সান্ডার ডুগিনের ধারণা ও কর্মপন্থাকে ভ্লাদিমির পুতিন নিজের ডকট্রিন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এই ডকট্রিনের বাস্তবায়নে তিনি অনেক দূর এগিয়েও গেছেন। এর বিভিন্ন দিক এবং আগামী বিশ্বে এর প্রভাব কেমন হবে তা বিশ্লেষণ করলে এক ভয়ঙ্কর বিশ্বচিত্র ভেসে ওঠে। পরের কোনো এক কলামে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। পরম করুণাময় যেন পৃথিবীবাসীকে মনুষ্যসৃষ্ট মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন।
(সমাপ্ত)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct