আপনজন ডেস্ক: রাশিয়া সফরে গেছেন মায়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। শুক্রবার ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে হ্লাইংয়ের বৈঠক করার কথা রয়েছে। এ সময় তারা কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করবেন ও বিবৃতি দেবেন।
\r\n
মঙ্গলবার ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লেইং।
\r\n
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া, মায়ানমারে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেন তিনি।
\r\n
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ছয়টি হাতি উপহার দিয়েছেন মায়ানমারের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) মস্কো সফরের সময় তিনি পুতিনকে এই উপহার দেন।
\r\n
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মায়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় সম্পর্কে এগিয়ে নেওয়ার প্রশংসা করেছেন। এ ছাড়া মস্কোকে ছয়টি হাতি উপহার দেওয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
\r\n
পুতিন মিন অং হ্লাইং-কে বলেন, ‘এবং অবশ্যই, আপনার উষ্ণ উপহারের জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছি না। আপনি গত বছর আমাদের কাছে ছয়টি হাতি এনেছিলেন এবং সেগুলো ইতিমধ্যেই মস্কো চিড়িয়াখানায় দেওয়া হয়েছে।
\r\n
৬৮ বছর বয়সী মিন অং হ্লাইং খুব কমই বিদেশ ভ্রমণ করেন। তিনি রাশিয়ান সামরিক সরঞ্জামের মানের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনকে সমর্থন করেছেন যেখানে তিনি বিশ্বাস করেন যে মস্কো শীঘ্রই বিজয়ী হবে।
\r\n
সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে ছয়টি যুদ্ধবিমান কিনেছে মায়ানমার। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাতি উপহার দেওয়া রাশিয়া ও মায়ানমারের সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করার একটি প্রতীকী প্রয়াস। অনেকে একে ‘হস্তী কূটনীতি’ বলেও উল্লেখ করছেন।
\r\n
বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের ২৫তম বার্ষিকীর কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তির রজতজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি। মায়ানমার ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে।’
\r\n
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক প্রকৃতপক্ষে ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে। গত বছর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পরমাণু বিদ্যুৎ কম্পানি রোসাটমের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে মায়ানমারে ১০০ মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এই কেন্দ্র নির্মাণ শেষে পরিচালনার দায়িত্বও রোসাটমের হাতে থাকবে।
\r\n
পুতিন আরো ঘোষণা করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ৯ মে মস্কোতে অনুষ্ঠিতব্য সামরিক কুচকাওয়াজে মায়ানমারের একটি সামরিক ইউনিট অংশ নেবে। তিনি বলেন, মিন অং হ্লাইংও এতে অংশ নেবেন। চীনের মতো রাশিয়াও মায়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করে এবং সহযোগিতা উন্নয়ন করছে। তাদের বিমান বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন পথ খুলছে।
\r\n
২০২১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নেত্রী অং সান সু চির প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে মায়ানমার অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে, যার ফলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
\r\n
জাতিসংঘের মতে, মায়ানমার অভ্যন্তরীণ সংঘাত, অর্থনীতি, ক্ষুধায় ব্যাপক বিপর্যস্ত এবং দেশটির ৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষের এক-তৃতীয়াংশের সাহায্য প্রয়োজন। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর রাশিয়া ছিল প্রথম দেশগুলোর মধ্যে একটি যারা জান্তাকে সমর্থন করেছিল, যখন বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের জন্য বিশ্বজুড়ে তাদের নিন্দা করা হচ্ছিল।
\r\n
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন বলেছেন, তিনি কৃষি, পারমাণবিক শক্তি, পরিবহন এবং অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য ভালো সম্ভাবনা দেখেছেন।
\r\n
ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থার মতে, মিশুস্তিন বলেছেন, ‘রাশিয়া এবং মায়ানমারের বিরুদ্ধে অবৈধ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আমাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সফলভাবে বিকশিত হচ্ছে এবং পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ রাশিয়ান কম্পানিগুলো দাউইতে মায়ানমারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। মিশুস্তিন সংস্থাগুলোর নাম উল্লেখ করেননি।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct