জয়প্রকাশ কুইরি, পুরুলিয়া: বলা যেতে পারে এই উৎসব ব্রাত্যজনের। এই উৎসবে ভক্ত হন যারা তারা কৃচ্ছ সাধন করেন তেমনি শ্রদ্ধা আদায় করে নেন ব্রাহ্মণের। আসলে গাজনের ঢাকে কাঠি পড়লে বোঝা যায় এবার চৈত্র সংক্রান্তি শেষ হয়ে বৈশাখ আসছে। পুরুলিয়ার গ্রামে গ্রামে এই গাজন উৎসব শুরু হয়ে গেল সোমবার থেকে।আসলে সমুদ্রমন্থনের সময় শিব বিষ পান করে নীলকন্ঠ হয়ে যান। এই শিব হলেন জগতের কল্যাণের দেবতা। হয় সন্তানের মঙ্গল কামনায় গাজনের আগের দিন নীলের উদ্দেশ্যে বাতি দেন মায়েরা। তারপর শিব কে সন্তুষ্ট করার জন্য শুরু হয় চড়ক পরব। এই চড়ক পরব আসলে রাঢ়বঙ্গের অন্যতম পরব। মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তাঁর চন্ডীমঙ্গলে লিখেছেন “চৈত্র মাসে পূজে শিবে নানা উপাচারে, ঢাক ঢোল বাদ্যি বাজে শিবের মন্দিরে ,জিভ কাটে জিভ ফোঁড়ে করই চড়ক অভিমতে বর পায় না যায় নরক”। পুরুলিয়ার গ্রামে গ্রামে আজ মঙ্গলবার নীলের উপোস করেন মহিলারা। আগামীকাল হবে চড়ক পরব। শিব মন্দিরের সামনে উঁচু একটি খুঁটির আগায় লম্বা কাঠ বেঁধে তাতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ভক্তদের তারপর বনবন করে ঘুরতে থাকে চড়ক গাছ। পরদিন হয় ভক্তদের পারণ উৎসব বা শিব পূজা। অবশ্য পুরুলিয়ার প্রথা অনুযায়ী গোটা বৈশাখ মাস জুড়েই কোন না কোন গ্রামে চরক হয়। চরক পূজা উপলক্ষে মেলা বসে যায় বিভিন্ন গ্রামে।
পুরুলিয়ার চারটি শৈবতীর্থে চড়ক হয় ধুমধাম করে। এগুলি হল চিড়কার গৌরিনাথ ধাম , আনাড়ার বানেশ্বর নাথ ধাম , বুধপুরের বুদ্ধেশ্বর ধাম এবং তেলকুপির গদাধর ধাম। মেলা উপলক্ষে এগুলিতে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়।
নানান ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে তবে এবার কোভিড পরিস্থিতিতে ভিড় নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে আয়োজকদের। তবুও এই বৎসর ভীড় জমাতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। একই সঙ্গে পুরুলিয়ায় পালন করছে বর্ষবিদায় ও নববর্ষ উৎসব।