আপনজন ডেস্ক: নিউ টাউনে মূলত রাজ্যের হজযাত্রীদের জন্য আবাসস্থল মদীনাতুল হুজ্জাজ কমপ্লেক্সে চলমান কলকাতা বইমেলয়া ডিউটিরত পুলিশ (ইএফআর) কর্মীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে এক শ্রেণির পুলিশ কর্মী ওজু খানায় প্রস্রাব করার। এমনকী, মদ্যপানের পর শৌচাগারে মদের বোতল রাখারও অভিযোগ ওঠে। সেই মদের বোতলের ছবিসহ ওজু খানা অপবিত্রতা করার খবর সামনে আসতেই কড়া পদক্ষেপ নিল রাজ্য হজ কমিটি ও রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর। তার ফলে, এই অভিযোগ ওঠার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার রাতেই মদীনাতুল হুজ্জাজ থেকে সকল পুলিশ কর্মীকে সরিয়ে দেওয়া হল।
সূত্রের খবর, মদীনাতুল হুজ্জাজের মতো পবিত্র জায়গায় মদের বোতল সহ অপবিত্রতার কথা ছড়িয়ে পড়ায় রাজ্যের সংখ্যালঘু মহল থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিন্দা করা হয়। সেই অসন্তোষের খবর পৌঁছে যায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। এরপর পর রাজ্য প্রশাসনের কাছে নির্দেশ আসে অবিলম্বে মদীনাতুল হুজ্জাজ থেকে পুলিশ কর্মীদের সরিয়ে অন্য কোনও জায়গায় স্থানান্তরিত করার। নবান্ন সূত্রে খবর, সংখ্যালঘু দফতরের সচিব পি বি সালিম বিধাননগর পুলিশ কমিশনার আইপিএস মুকেশের কাছে রিপোর্ট তলব করেন। এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
হজ হাউসের পবিত্রতা নষ্টের অভিযোগ ওঠায় নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ তুলে রাজ্য হজ কমিটির কার্যনির্বাহী আধিকারিক ও সংখ্যালঘু দফতরের জয়েন্ট সেক্রেটারি বিধাননগর পুলিশ কমিশনার আইপিএস মুকেশকে চিঠি লেখেন। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনারা অবগত আছেন যে, নিউ টাউনের মদিনাতুল হুজ্জাজ কমপ্লেক্সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য মোতায়েন করা কর্মীদের থাকার জন্য অস্থায়ীভাবে পুলিশ প্রশাসনকে দেওয়া হয়। যাইহোক, এটি আমাদের নজরে এসেছে যে প্রাঙ্গণের মধ্যে কিছু ক্রিয়াকলাপ সুরক্ষা এবং পবিত্রতা উভয়ের সাথে আপস করছে।
অননুমোদিত রান্না নিষিদ্ধ করার স্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও, মেঝেতে রান্নার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে আগুনের ঝুঁকি এবং ঘন ঘন এমসিবি ট্রিপ হয়। এই সমস্যাটি এর আগে এসিপি, ডিসিপি (বিমানবন্দর) এবং জেটি সিপিকে জানানো হয়েছিল, তবে মাত্র তিন দিন আগে একই রকম লঙ্ঘন লক্ষ্য করা গেছে। বারবার এসব ঘটনা ভবনের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু, ওজু খানাকে প্রস্রাব খানা হিসেবে অপব্যবহার করা হচ্ছে, পাশাপাশি পুলিশ কর্মীদের দখল করা এলাকায় খালি মদের বোতল পাওয়ার মতো অস্বস্তিকর খবর পাওয়া গেছে। এই ধরনের পদক্ষেপ কেবল রাজ্য হজ হাউসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করে না, প্রাঙ্গণের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবকেও প্রতিফলিত করে। আর কোনও অসদাচরণ রোধ করতে এবং কমপ্লেক্সের মর্যাদা বজায় রাখতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
পুলিশ সদস্যদের আবাসনের জন্য ভবনের ৭-৯ ইঞ্চি তলা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে। গতকালও পুলিশ কর্মীরা জোর করে এবং অননুমোদিতভাবে ১০ তলার হল ঘরে ঢুকে পড়ে। চত্বরের বেসরকারি সুরক্ষা কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং ভীত বোধ করছেন। বিষয়গুলো ঠিক করার জন্য এখানে কোনও সিনিয়র পুলিশ অফিসারও নেই।’
এই চিঠি পাওয়ার পর জোর তৎপরতা শুরু করেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনার আইপিএস মুকেশ। নবান্ন সূত্রে খবর, বিধানগর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়, পুরো ইএফআর ইউনিটটি রাতে এমইউএইচ থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিপথগামী জওয়ানদের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে। বিষয়টি আপাতত সমাধান করা হয়েছে। জানা গেছে, রাতের মধ্যে পুলিশ কর্মীদেরে মদীনাতুল হুজ্জাজ থেকে সরিয়ে দমদম বিমানন্দরে কাছে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct