নাজিম আক্তার, চাঁচল: ৪০ বছর আগের কথা। মালদহের চাঁচলের রাস্তাঘাটে দেখা মিলত টাঙ্গা গাড়ি। এক্কাগাড়িতে সওয়ার হতে মানুষজন ভিড় করতেন বিভিন্ন রাস্তায়। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে তাঁদের অসুবিধের কথা ভেবে তৈরি হয়েছিল দুটি যাত্রী প্রতীক্ষালয়। বাম আমলের সেই স্মৃতি এখনও রয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের স্মৃতিটাই বদলে গিয়েছে।যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে এখন আর যাত্রী নয়, আশ্রয় নেওয়ার জায়গা হয়েছে গবাদি পশুর,জমছে নোঙরা আবর্জনা,কেউ আবার রাখছে খড়কুটো থেকে শুরু করে জ্বালানি।চলছে চটজলদি থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসাও। ফলে যাত্রীদের প্রতীক্ষার জায়গা হয়েছে সেই রাস্তায়। ৪০ বছর আগে যেখানে ছিল প্রতীক্ষালয়। এইভাবে যাত্রী প্রতীক্ষালয় রূপ নিয়েছে চিলেকুঠা ঘরে।এমনই ছবি নজরে এল মালদহের চাঁচল-আশাপুর রাজ্য সড়কের ধারে দুটি যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের। একটি কলিগ্রামের নিমতলায় অপরটি দু কিমি দূরত্বে পাকুড়তলায়।
এলাকাবাসীর মন্তব্য, বাম আমলের স্মৃতি আজও আমাদের নজরে পড়ে। নির্মাণের প্রায় চারদশক হলেও সরকারিভাবে সংস্কার না হওয়ায় এখন তা নড়বড়ে ও জরাজীর্ণ। বয়সের ভারে খসে গেছে দেওয়ার চাঙড়, ফাটল ধরেছে ছাদ ও দেওয়ালে। সেই জরাজীর্ণ প্রতীক্ষালয় দখল করেছে এলাকাবাসী। আবার কেউ নোংরা ফেলার ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করছে সেই যাত্রী প্রতীক্ষালয়কে।
কলিগ্রাম নিমতলার বাসিন্দা মহঃ বাসিরুদ্দিন জানান, চাঁচল-আশাপুর রাজ্য সড়ক দিয়ে কলকাতা, শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট ও উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ জায়গায় যাওয়ার একমাত্র পথ এটি। বর্তমানে সরকারি বেসরকারি গণপরিবহণ রীতিমতো চলছে। প্রায় ছয়টি গ্রামের মানুষ নিমতলায় আসে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্যে। কিন্তু এসেই তাদের খোলা আকাশের নীচে থাকতে হয়। যাত্রী প্রতীক্ষালয় থাকলেও সেখানে মাথা গোঁজার উপায় নেই! চলছে বর্ষাকাল। মাঝে মাঝেই হঠাৎ শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ভয় থাকছে প্রাণনাশের। বজ্রপাতের ভয় থাকছেই। তার রোদ-বৃষ্টিকে মাথায় করে খোলা আকাশের নীচে যানবাহনের জন্য অপেক্ষায় থাকছেন তারা।
পাকুড়তলার এক ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, ব্রিটিশ আমলের পর থেকেই এই যাত্রী প্রতীক্ষালয় নির্মাণ হয়। বদলেছে দেশ ও রাজ্যের সরকার তবে বদলায়নি যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের এই বেহাল চিত্রটা। বছরের পর বছর এইভাবে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে যাত্রীদের এই বিশ্রামাগার। আওয়াজ দিলেই ভেঙে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। এমনটাই আশঙ্কা করছে এলাকার বাসিন্দারা।
রাজ্যের ফের তৃতীয়বারের জন্য ফের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কংগ্রেসের আটি ভেঙে চাঁচলেও ফুটেছে ঘাসফুল। বাসিন্দাদের দাবি, নয়া বিধায়ক যাত্রী প্রতীক্ষালয় নির্মাণ উদ্যোগী হোক।
এবিষয়ে চাঁচলের বিধায়ক নীহার রঞ্জন ঘোষ বলেন, তিনি আশ্বাস দিয়েছে,দ্রুত যেন কাজ হয় আমি বিডিও-র সাথে কথা বলছি। শীঘ্রই যেন যাত্রী প্রতীক্ষালয় সংস্কার করা হয় তা আমি দেখছি। শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। দফায় দফায় মুসুলধারে চলছে বৃষ্টিপাত।আর এই বৃষ্টি থেকে বাঁচতে মাথার উপর ছাদ পাবে কি যাত্রীরা? সেই আশায় দিন গুনছেন বাসিন্দারা। যদিও এই মুহুর্তে বিধিনিষেধ থাকায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ক্ষুদ্র যানবাহন গুলি চলাচল করছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct