উদ্যোগপতি
__________
ফৈয়াজ আহমেদ: বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদ করার ফলে অনেকেই কৃষি ব্যবসার দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা ও বেকার সমস্যা বৃদ্ধির কারনেও ব্যবসার দিকে বর্তমান প্রজন্ম ঝুঁকছে। তবে ব্যবসা হল ঝুঁকি নির্ভর। কিন্তু কৃষি ব্যবসায় ঝুঁকি তুলনামূলক কম, তাই কৃষি ব্যবসাকেও হেলাফেলার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। সেইরকম একটি কৃষি ব্যবসা নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করব।
আমাদের দেশের এক সুপরিচিত ফল হলো পেঁপে। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পাকা পেঁপে ফল হিসাবে খাওয়া হয়। বর্তমনে আমাদের দেশে বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ হচ্ছে। ভরপুর পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ ফলটি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। পেঁপে একটি স্বপ্ল মেয়াদি ফল, অল্প জায়গাতেই পেঁপে চাষ করা যায়। অল্প কিছু গাছ লাগিয়ে সারা বছর সব্জি ও ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে পেঁপে চাষ করে কৃষকভাইরা লাভবান হচ্ছেন।
উপযুক্ত মাটি ও জমিঃ পেঁপে চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভাল। পেঁপে গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। পেঁপের জন্য সেচ সুবিধাযুক্ত এবং জলাবদ্ধতা মুক্ত জমির প্রয়োজন । পেঁপে চাষের জমি কয়েকবার চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হয় । পেঁপে চাষের জন্য বেলে দোঁয়াশ বা দোঁয়াশ মাটি ভাল। অধিক অম্ল ও অধিক ক্ষার মাটিতে পেঁপে চাষ ভাল হয় না। জমিতে দ্রুত জল নিষ্কাশনের জন্য সঠিক ব্যবস্থা রাখতে হবে। জল নিষ্কাশনের জন্য ৩০সেমি চওড়া ও ২০সেমি গভীর নালা থাকলে ভালো।
পেঁপের চারা উৎপাদন পদ্ধতি: সাধারণত, বীজ থেকে চারা হয়। রোগমুক্ত উন্নত গাছ থেকে পাকা ফল পেড়ে বীজ সংগ্রহ করা হয় । এরপর বীজগুলোকে শুকনো ছাই মাখিয়ে জলে ধুয়ে নিয়ে শোকাতে হবে। কারণ, বীজ শোধন জরুরি। পচা ঝুরঝুরে গোবর সার এবং পাতা পচা সার মিশিয়ে বীজতলা বানাতে হবে। বীজতলা ১৫-২০ সেমি উঁচু হবে। ৫ সেমি দূরত্বে ২-৩ সেমি গভীরে বীজ পুঁতে হালকা করে উপরে পাতাপচা সার বা মাটি ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজন মতো ঝারি দিয়ে জল দিতে হবে । বীজতলায় চারা ১০ সেমি মতো বড় হলে মূল জমিতে স্থানান্তর করতে হবে। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে বীজ বুনে ফেলতে পারলে ভালো হয় ।
চারা রোপণ পদ্ধতি: দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় ৪৫ সেমি করে গর্ত খুঁড়ে তাতে সার দিতে হবে। এর জন্য ১০ কেজি গোবর সার, ১ কেজি নিম খোল, ১০ গ্রাম কার্বোফিউরান ৩ জি, ২৫০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট ভাল করে মিশিয়ে ১৫-২০ দিন ঢেকে রাখতে হবে। এরপর গর্তে সারমাটি মিশিয়ে দিতে হবে। সাবধানে বীজতলা থেকে মাটি সমেত চারা তুলে লাগাতে হবে। যেন, শিকড়ের কোনোভাবে ক্ষতি না হয়। প্রতি গর্তে তিনটি করে চারা লাগাতে হবে। ৫-৬ মাসের মধ্যে যখন গাছে ফুল আসবে তখন প্রতিটি গর্তে স্ত্রী বা উভলিঙ্গের গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে দিতে হবে। তবে, প্রতি ১০টি গাছের জন্য একটি পুরুষ গাছ না রাখলে আবার পরাগসংযোগ ভাল ভাবে হবে না। এতে ফলনও কমে যাবে।
সার প্রয়োগঃ প্রতি গাছে ৫০০ গ্রাম করে ইউরিয়া এবং এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের পর গাছে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি মাসে দিতে হবে। গাছে ফুল আসলে সার প্রয়েগের মাত্রা দ্বিগুন করতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। পেঁপে গাছে সার প্রয়োগের নিয়মগুলো মেনে সঠিক সময়ে পরিমাণমতো সার দিতে হবে, তবেই ভালো ফলন হবে।
রোগ ও প্রতিকার:
কান্ড পচা রোগ - বাগানের মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে চারা ঢলে পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া, বর্ষাকালে কাণ্ডপচা রোগ হতে পারে। কাণ্ড পচা রোগ হলে গাছের গোড়ার দিকে বাদামি বর্ণের জল ও ভেজা দাগ দেখা যায়। এ রোগ হলে আক্রান্ত চারা ও গাছ মারা যায় এবং ঢলে পড়ে।
প্রতিকার: বীজতলার মাটি শুকনো রাখতে হবে এবং ছত্রাক নাশক ২-৩ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে শোধন করতে হবে। আক্রান্ত চারা উঠিয়ে ফেলে মাটিতে পুঁতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ২ গ্রাম রিডোমির এম জেড-৭২ ছত্রাক নাশক প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে কাণ্ডে স্প্রে করতে হবে।
মোজাইক রোগ - এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। মূলত, এটি জাব পোকার আক্রমণে হয়ে থাকে। এ রোগের কারণে পেঁপে গাছের পাতায় হলুদ রং এর ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। পাতার বোঁটা বেঁকে থাকে এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
প্রতিকার - এই রোগ দমন করতে নোভাস্টার ৫৬ইসি ০২ মিলি বা হেমিডর বা পিমিডর বা এডমায়ার ২০০ এসএল ০১ মিলি প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে ৫-৭ দিন স্প্রে করতে হবে। এছাড়া, আক্রান্ত গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ফল সংগ্রহ: সব্জি হিসাবে ব্যবহার করতে চাইলে, ফলের কষ যখন হালকা হয়ে আসে এবং জলীয় ভাব ধারণ করবে তখন সংগ্রহ করতে হবে। যখন ফলের গায়ে হালকা হলুদ ভাব দেখা যাবে তখন ফল হিসাবে সংগ্রহ করতে হবে। উপযুক্ত নিয়মে ও পেঁপে চাষ করার নিয়মগুলো অনুশরণ করলে হেক্টর প্রতি ৪০ থেকে ৬০ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct