ডা. প্রকাশ মল্লিক: ঘরে ঘরে এখন হাঁটু-কোমরের ব্যথাবেদনার সমস্যা। শুধু বয়স্করাই নন, এই যন্ত্রণার শিকার তরুণ প্রজন্মের একাংশও। বয়স তিরিশ পেরিয়ে গেলেই মেয়েদের এই ধরনের সমস্যা শুরু হয়। যাঁদের দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে কাজ করার পেশা, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ব্যথা আরও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
চিকিৎসার আগে
* সবচাইতে আগে খেয়াল রাখতে হবে কোন বয়সে এই ব্যথা হচ্ছে। এক এক বয়সের জন্য চিকিৎসা কিন্তু ভিন্ন।
* ব্যথা কি শুধু হাঁটু-কোমরে, নাকি সঙ্গে থাইরয়েড, গ্যাস-অম্বল বা অন্য কোনও হরমোনের সমস্যাও আছে?
বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ অনেকসময় দেখা যায়, কারও পেট পরিষ্কার না হলেও লাম্বার পেন হয়। অর্থাৎ ব্যথাটা মৌলিক নাকি, তাতে শারীরিক সিস্টেমের কোনও যোগ আছে, তা কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে দেখে নিতে হবে। নার্ভের অসুখ থেকেও এমন ব্যথা হতে পারে।
* হাঁটু-কোমরের ব্যথা হঠাৎ শুরু হল, নাকি অনেকদিন ধরে এই ব্যথা ছিল, তা খেয়াল রাখতে হবে। দু’ ক্ষেত্রে দু’রকম চিকিৎসা হবে।
স্ট্রেপটোকক্কাস নাকি রিউম্যাটিক নাকি রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস-ঠিক কোন ধরনের অসুখ রোগীর হয়েছে, তা দেখে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
* রোগীর বংশে আর্থ্রাইটিস বা হাড়ের অন্য কোনও অসুখ থাকলে তার ক্ষেত্রে ওষুধ নির্বাচন ও ডোজের বিষয়ে বেশ সচেতন হতে হবে চিকিৎসককে।
* রেনাল সমস্যা থেকেও কোমরের ব্যথা হতে পারে। তাই কিডনির কোনও সমস্যা আছে কি না তা জেনে নিতে হবে। প্রতিটি রোগীর রোগের নির্দিষ্ট প্রকার থাকে। প্রতিটি রোগীর রোগের উপসর্গও আলাদা। বর্ষায় ব্যথা বাড়ছে, নাকি হাঁটাহাঁটিতে বাড়ছে দেখতে হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে শীতে বাড়ে বা সিঁড়ি ভাঙলে বাড়ে। অনেক সময়, রোগীর ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যথার ভাব বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা আলাদা। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ওষুধের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নিয়ম মেনে চললে রোগ অনেকটা ভালো থাকে।
* এই ধরনের অসুখ ফেলে রাখলে খুব বাড়ে। তাই ব্যথা হলে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। হোমিওপ্যাথিতে এই রোগের বেশ কিছু ভালো ওষুধ রয়েছে। তবে রোগীর নানা উপসর্গ ও রোগের প্রকার বুঝে সেইসব ওষুধ নির্দিষ্ট ডোজ মেনে প্রদান করতে হবে। হোমিওপ্যাথিতে ওষুধের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের ডোজ। রোগীর উপসর্গ দেখে যেমন ওষুধ পড়বে, তেমন রোগীর শরীর ও শারীরিক নানা অবস্থার উপর ভিত্তি করে তার ডোজ নির্ধারিত হবে।
ব্যথা বেদনায় প্রচলিত কিছু ওষুধ
রাসটক্স: সকালে ঘুম থেকে উঠলে ব্যথা বাড়লে রাসটক্স কার্যকরী। হাঁটুর ব্যথাতেও এই ওষুধ বেশ ফলদায়ী। ব্রায়োনিয়া: হাঁটাহাঁটি করলে বা কাজ করতে করতে হাঁটুতে ব্যথা বাড়তে শুরু করলে ব্রয়োনিয়া উপকারী।
অ্যাসিকিউলাস হিপ্পোকাস্টেনাম: তরুণ বয়সে কোমরে ব্যথা প্রায় সবসময়েই থাকছে বা কাজ করলে ব্যথা আরও বাড়ছে, এমন ক্ষেত্রে অ্যাসিকিউলাস হিপ্পোকাস্টেনাম ভালো কাজে আসে। এছাড়া মেয়েদের মেনস্ট্রুয়েশন-এর সমস্যার কারণে কোমরে ব্যথা হলেও এই ওষুধ উপযোগী।
সিপিয়া: বয়স্ক বা মধ্যবয়সি মহিলাদের কোমরে ব্যথা হলে সিপিয়া খুব ভালো কাজ করে। সিপিয়ার সঙ্গে আবার মহিলাদের মানসিক সমস্যারও যোগ আছে। মেনোপজ হওয়ার সময়টা অনেক মহিলা খিটখিটে হয়ে পড়েন। প্রিয় মানুষকেও হয়তো পছন্দ হয় না। অকারণে রাগ হয়। মেয়েদের শীররের সঙ্গে প্রাকৃতিক এই সমস্যাগুলি যুক্ত। সিপিয়া কোমরের ব্যথা কমায়। এই ধরনের সমস্যাগুলোর উপরও ভালো কাজ করে।
খুজা: বর্ষায় ব্যথাবেদনা বাড়লে রোগীকে খুজা দেওয়া হয়।
জরুরি কথা: ব্যথাবেদনাকে অবহেলা না করে সঠিক সময়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু করা গেলে, কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই রোগমুক্তি সম্ভব। তবে অবশ্যই রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট ডোজে ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। রোগ অনেকটা আরোগ্যের পথে এলে তৎকালীন উপসর্গ ও শরীরের অবস্থা বুঝে চিকিৎসক ওষুধ বন্ধ করবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct