আপনজন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বিতর্কের জবাব দেওয়ার সময় বিরোধী সাংসদরা ওয়াকআউট করেন এবং অভিযোগ করেন যে তাঁর ভাষণের প্রথম ৯০ মিনিটে মণিপুরের কোনও উল্লেখ নেই। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা নিয়ে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানানোর সময় বিরোধী সাংসদদের ‘মণিপুর, মণিপুর’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদরা ওয়াকআউট করেন। ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) এবং শিরোমণি অকালি দলের (এসএডি) সদস্যরাও পরে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন। পরে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন এবং বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধীদের ওয়াকআউটের পর কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুর নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে বলেছি। এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের ভাষণের পর তিনি মণিপুর শব্দটি উল্লেখ করেননি। তিনি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছিলেন, কংগ্রেস ও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে পুরোনো আক্রমণ, অপমান, কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবনিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের কোনও উত্তর ছিল না। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ভাষণ। নতুন কী ছিল? তিনি জাতিকে কী বলেছিলেন যা আমরা জানতাম না? আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে গুরুত্ব ের সম্পর্ক রেখেছি, তার অভাব ছিল এবং অনাস্থা প্রস্তাবের কোনও উল্লেখযোগ্য উল্লেখও ছিল না।
বিধানসভায় অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনকারী গৌরব গগৈ বলেন, “এই অনাস্থা প্রস্তাবের দুটি উদ্দেশ্য ছিল- প্রথমত, মণিপুরের মানুষ ন্যায়বিচার পান এবং দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী মোদীর মণিপুর ইস্যুতে কথা বলা উচিত। তিনি বলেন, ‘এত দিন পর জাতি প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে ভাষণ দিতে দেখেছে। আমরা তাকে নীরবতা ভাঙতে বাধ্য করেছি... কিন্তু মণিপুরের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্য পূরণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর দায়িত্ব থেকে পালাচ্ছেন। ডিএমকে সাংসদ টিআর বালু বলেন, বিরোধীরা মণিপুর এবং দেশের অন্যান্য অংশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শোনার আশা করছে, যেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বালু আরও বলেন, “তিনি একটি রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়েছেন। “অনাস্থা প্রস্তাবের উদ্দেশ্য ছিল... মণিপুর, হরিয়ানা এবং অন্যান্য যেসব এলাকায় সহিংসতা চলছে, সেখানে তাঁর প্রতিক্রিয়া শোনার জন্য। আমরা বহুবার হস্তক্ষেপ করেছি কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। কংগ্রেস নেতা কার্তি চিদাম্বরম বলেন, ‘ভারতের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ স্পিনার কে তা নিয়ে বিতর্ক ের নিষ্পত্তি হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। তিনি বলেন, ‘৯০ মিনিটের মধ্যে তিনি মণিপুরের ইস্যুনিয়ে কথা বলেননি। আমরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছি কারণ প্রধানমন্ত্রী সংসদে আসতে অস্বীকার করেছেন এবং সরকার কী করছে তা বলতে অস্বীকার করেছেন। এটি মণিপুরের সমস্ত মানুষ এবং ভারতের অখণ্ডতার অপমান, তাই আমরা প্রতিবাদ করেছি এবং হাউস থেকে ওয়াকআউট করেছি। বিরোধীরা লোকসভা থেকে ওয়াক আউট করার পরে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈয়ের আনা অনাস্থা প্রস্তাবটি বৃহস্পতিবার লোকসভায় পরাজিত হয়। এদিন দিনের বেলায় সংসদের উভয় কক্ষে বিঘ্ন ঘটে, যার ফলে সংক্ষিপ্ত মুলতবি করা হয়। মণিপুরে সহিংসতা নিয়ে আলোচনার নিয়ম নিয়ে বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার পর বিরোধী দলের তীব্র প্রতিবাদের কারণে লোকসভা দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। দুপুর ১২টা নাগাদ লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ফের আলোচনা শুরু হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct