আপনজন ডেস্ক: সোমবার দিল্লির যন্তর মন্তরের সামনে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৪-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে। তাদের সেই প্রতিবাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বেশ কয়েকজন বিরোধী দলের নেতা সেখানে অংশ নিয়ে এই বিলটিকে ‘কালো বিল’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
কংগ্রেস, এআইএমআইএম, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, মুসলিম লিগ, আম আদমি পার্টি, এনসিপি, সিপিআইএম, সিপিঅাইএমএল সহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের নেতারা ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের ডাকা বিশাল প্রতিবাদে যোগ দেন। ‘উই রিজেক্ট ওয়াকফ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০২৪’ শিরোনামে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এআইএমআইএম সুপ্রিমো আসাদুদ্দিন ওয়াইসি, মহুয়া মৈত্র (তৃণমূল কংগ্রেস), তরুণ গগৈ ও ইমরান মাসুদ (কংগ্রেস), মাহমুদ মাদানি (জমিয়তে উলেমায়ে-হিন্দ), খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি (ইসলামী ফিকহ একাডেমি), সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি (জামায়াতে ইসলামি হিন্দ), ধর্মেন্দ্র প্রধান (সমাজবাদী পার্টি), দীপঙ্কর ভট্টাচার্য (সিপিআই-এমএল) প্রমুখ। শিখ সম্প্রদায়ের সদস্যরা ছাড়াও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীরাও প্রতিবাদস্থলে বক্তব্য রাখেন।
এআইএমপিএলবির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহিম মুজাদ্দিদি বলেন, ওয়াকফ সংশোধনী বিল আইনের নামে নৈরাজ্য ছড়ানো এবং ওয়াকফের সুরক্ষা ও স্বচ্ছতার নামে ওয়াকফ সম্পত্তি ধ্বংস ও দখলের ষড়যন্ত্র। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি, তারা যেন এই পদক্ষেপ বন্ধ করে বিলটি প্রত্যাহার করে নেয়।
সমাবেশে সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, এই সংশোধনী বিলের লক্ষ্য মুসলিমদের ক্ষমতা খর্ব করা, তাদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিচয়কে টার্গেট করা। তিনি বলেন, বিলটি পাস হলে সরকার যে কোনও ওয়াকফ সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে।
তাদের উদ্দেশ্য ভারতে মুসলমানদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিচয় ছিনিয়ে নেওয়া। এই বিলের মাধ্যমে মসজিদ, দরগা ও কবরস্থান দখল করাই মোদী সরকারের মূল লক্ষ্য। হায়দরাবাদের সংসদ তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি), জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডিইউ) এবং লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি) - যারা বিজেপির জোটসঙ্গী - তাদের “অসাংবিধানিক” বিলকে সমর্থন করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন। বলেন, অন্যথায় মুসলমানরা তাদের কখনো ক্ষমা করবে না।
ওয়াকফ বিলের বেশ কয়েকটি ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এআইএমআইএম প্রধান বলেন, যদি অন্যরা মন্দির, অন্যান্য হিন্দু ধর্মীয় সম্পত্তি এবং শিখদের সম্পত্তির অংশ হতে না পারে তবে কীভাবে অমুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তির অংশ হতে দেওয়া যেতে পারে?
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রধান মাওলানা মাহমুদ মাদানি বলেন, ওয়াকফ শুধু মুসলমানদের সমস্যা নয়, এটি সংবিধানের ওপর আক্রমণ। এতে সংবিধানের মৌলিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন ওয়াকফ বিলের মাধ্যমে সংবিধানের ওপর বুলডোজার চালানো হচ্ছে। আমরা যে কোনও মূল্যে এর বিরোধিতা করব। মাওলানা মাদানি দৃঢ়তার সাথে বলেন যে এটি সংগ্রামের মাত্র শুরু, জোর দিয়ে বলেন যে মুসলমানরা একা এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের কাছ থেকেও সমর্থনের আহ্বান জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শিখ পার্সোনাল ল বোর্ডের নেতা অধ্যাপক জগমোহন সিং, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা হান্নান মোল্লা, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ধনঞ্জয়সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতারা। শিখ পার্সোনাল ল বোর্ডের আহ্বায়ক অধ্যাপক সিং ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মুসলিমদের সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে এসেছি যে এই লড়াইয়ে আপনারা একা নন। আমরা আপনাদের সর্বান্তকরণে সমর্থন করব।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, ওয়াকফ সংশোধনী বিল এনে সরকার মুসলিমদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চায়। বিলটি পাস হলে ওয়াকফ সম্পত্তি আর দেওয়া হবে না। যে কোনও ডিএম ওয়াকফ সম্পত্তির শিরোনাম পরিবর্তন করতে পারেন। এটা মুসলমানদের ভূমি দখলের চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। এর বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতে হবে। ওয়াকফ সম্পত্তিতে অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৃণমূল সাংসদ প্রশ্ন তোলেন, অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ট্রাস্টে মুসলিমদের কি অন্তর্ভুক্ত করা যায়?
জামাত-ই-ইসলামি হিন্দ প্রধান হুসেইনি বলেন, ওয়াকফ বিল মুসলিমদের তাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র। মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে যে এই বিলটি ওয়াকফ সম্পত্তির প্রশাসনকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে করা হয়েছে, যা সত্য নয়। ওয়াকফ সম্পত্তির অবসান, দুর্বল ও জোর করে দখল করার জন্য এই বিল আনা হচ্ছে।
সিপিআই-এমএল সভাপতি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ও শ্রমিক নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, এটা জমির জন্য লড়াই। কৃষকরা, যাঁরা নিজেদের জমির জন্য লড়াই করছেন, তাঁদেরও এই প্রতিবাদে সামিল হওয়া উচিত।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct