ভাঙড়: ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানা হলে যত বড় নেতাই থাকুন, সেই মঞ্চে আমি থাকতে পারব না! নাম না করেই ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক সওকাত মোল্লাকে নিশানা করলেন ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা নান্নু হোসেন। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র গুঞ্জন।
এক অনলাইন মিডিয়াকে দেওয়া পতিক্রিয়ায় জেলা পরিষদ সদস্য নান্নু হোসেন এদিন ভাঙড়ের তৃণমূল নেতাদেরও একহাত নেন! তবে সবচেয়ে বেশি চর্চা হচ্ছে যেটা নিয়ে, তা হল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি সওকাত মোল্লাকে নাম না করে আক্রমণ। উল্লেখ্য বিগত কিছুদিন ধরেই ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কর্ণধার আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে তীব্র বাগ বিতন্ডায় জড়িয়েছেন সওকাত! এবং তার রেশ এসে পড়েছে ভাঙড়ে। বারবার বদনাম হচ্ছে ভাঙেরের! আব্বাস ভক্তদের উপর এমনকি স্বয়ং আব্বাসের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে! সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হয়েছেন তৃণমূলের যুব নেতা।
উল্লেখ্য সওকাত মোল্লা ভাঙড় বিধানসভার বিশেষ দায়িত্ব প্রাপ্ত। রেজ্জাক- আরাবুল- নান্নু-কাইজারদের বাদ দিয়ে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকাতকে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন স্বয়ং দলনেত্রী। সওকাতের মুখ থেকে ভাঙড়ের বিভিন্ন জনসভা থেকে নাম না করে আব্বাস বিরোধী কথা শোনা গেছে। কিন্তু সেই মঞ্চে ভাঙড়ের নেতা আরাবুল- ওহিদুলরা থাকলেও ঘুর্নাক্ষরেও আব্বাস বিরোধী কথা বলেননি তাঁরা। অনেকের অভিমত, ভাঙড়ের নেতারা সওকাতকে ভালো ভাবে দেখেন না। ভাঙড়ে তাবড় তাবড় নেতা থাকতে সওকাতের ছড়ি ঘোরানো পছন্দ করছেন না বড়-ছোট কোনো নেতাই।
এতদিনে ভাঙড়ের নেতারা মৌনতার মাধ্যমে কার্যত সওকাতের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করেছেন। তবে এবার প্রকাশ্যেই মিডিয়াকে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সওকাতকে নিশানা করলেন ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা নান্নু হোসেন! যা নিয়ে তীব্র গুঞ্জন ভাঙড়ের রাজনীতি নিয়ে চর্চাকারীদের মধ্যে। উল্লেখ্য এই নান্নু হোসেনই ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে নিজের দলের প্রার্থী আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন। যার ফলে সিপিএম প্রার্থী প্রয়াত বাদল জমাদার সাহেবের নিকটে হারতে হয়েছিল তাজা নেতা আরাবুলকে। এদিন নান্নু হোসেন বলেন, "যত বড়ই নেতা হোক, যদি জেলা সভাপতিও হন, আর সেই মঞ্চে যদি ধর্ভীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার অ্যাজেন্ডা থাকে সেখানে আমি থাকবো না! ভাঙড়ে আজ অবধি কোন ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে গন্ডগোল হয়নি। যা হয়েছে সব ক্যানিংয়ে। এই রোগটাকে যদি ভাঙড়ে লিফ্ট করা হয়, আমি তার পরিস্কারভাবে দূরে থাকব।" তিনি বলেন রাজনৈতিক মঞ্চে তৃণমূলের হয়ে যদি ত্বহা সিদ্দিকীও থাকেন তাও আমি থাকব না।
আপনি শুভেন্দু অথবা আব্বাসের দলে যেতে পারেন বলে গুজ্ঞন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'যারা জল্পনা করছে, তারাই আগে দল ছাড়বে! মমতা ব্যানার্জি যেটা চাইছে, সেটাই আমি করছি। মমতা ব্যানার্জির প্রোগ্রামটাই ফলোয়াপ করছি। যারা বলছে আমরা তৃণমূলে আছি, তারাই এলিভেন্থ আওয়ারে দল ছেড়ে পিছন দিক থেকে পালাবে।"
আরাবুল কিংবা রেজ্জাক একুশে প্রার্থী হলে মানবেন? উত্তরে নান্নু বলেন, রেজ্জাক মোল্লা- আরাবুল ইসলামের প্রার্থী হওয়া অমুলক ভাবনা। রেজ্জাক অসুস্থ মানুষ, বয়স হয়েছে আর আরাবুল করাপটেড তাই দলনেত্রী এদের প্রার্থী করবেন না! যদি করে তখন ভাবতে হবে!" ফলে ২০১১ এর মতো তিনি একুশেও দলের বিরুদ্ধে খোঁজ প্রার্থী হবেন? নাকি অন্যদলে ভিড়বেন? তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা!
ইতিমধ্যে গুজ্ঞন শুরু হয়েছে নান্নু হোসেনকে তৃণমূল প্রার্থী না করলে তিনি অন্য দলের হয়েও ভোট লড়তে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি আব্বাস সিদ্দিকীর দলের হয়েই দাড়াতে পারেন বলে বলে ঘনিষ্ঠ মহল থেকে শোনা যাচ্ছে। এমনকি বিজেপির এক স্থানীয় নেতা তাঁকে প্রার্থী হওয়ার জন্য নাকি বলেছেন! নান্নু ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতার কথায়, নান্নু সাহেব একুশে ভাঙড়ের বিধায়ক হবেনই। সে যেকোন প্লাটফর্ম থেকে হোক না কেন! নান্নুর এই বেসুরো মনোভাবে অশস্তি বেড়েছে তৃণমূলের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct