সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, তৃণমূলকে হাজারো গালমন্দ করে শিশিরপুত্রের আগমন ঘটেছিল পদ্মশিবিরে। সেটাও বছর দেড় আগেই। এই সময়ের মধ্যেই তিনি জিতে নিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মন। কিন্তু এখনও তিনি বিশ্বস্ত হয়ে উঠতে পারেননি, বিজেপির চালনাকারী শক্তি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের। অন্তত বঙ্গ বিজেপির একাংশের তেমনটাই দাবি। শুধু তাই নয়, তাঁদের আরও দাবি, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছেন শিশিরপুত্রের হাতেই বঙ্গ বিজেপির রাশ যাক। কিন্তু সেই পথে তীব্র আপত্তি রয়েছে খোদ সঙ্ঘের। তাঁরা চাইছেন দলের আদি কোনও নেতার হাতেই উঠুক সেই রাশ। দলের আদি নেতারাও সঙ্ঘের এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছেন। আর এই দ্বন্দ্বের জেরেই এখন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে কে আসবেন তা বাছাই করতে কার্যত হিমসিম খাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে সূত্রের দাবি, সুকান্ত মজ্যমদারের জায়গায় শিশিরপুত্র শুভেন্দু অধিকারীর আসার সম্ভাবনাই বেশি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল ছেড়ে অনেক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা পা বাড়িয়েছিলেন বিজেপির শিবিরের উদ্দেশ্যে। তাঁদের মধ্যে শুভেন্দু অধিকারীও ছিলেন। কিন্তু তার জেরে নির্বাচনের ফলাফলের ক্ষেত্রে খুব একটা বেশি প্রভাব পড়েনি। গোহারান হারতে হয়েছে বিজেপিকে। তাও সেটা বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়ার কাছে। খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বাংলার বুকে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেও খুব একটা সুবিধা পাইয়ে দিতে পারেননি বঙ্গ বিজেপিকে। এখন সেই বঙ্গ বিজেপির দায়িত্ব শুভেন্দুর হাতেই তুলে দিতে চাইছেন মোদি ও শাহ। কিন্তু তাতে আপত্তি র্যেছে সঙ্ঘের। কেননা একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনেক তৃণমূলের নেতাই পদ্মশিবিরে এসেছিলেন, নির্বাচনের পরে অনেকে ফিরেও গিয়েছেন। তাই সঙ্ঘের নেতারা চাইছেন না তৃণমূল থেকে আসা কোনও নেতা বঙ্গ বিজেপির মাথা হোন। বরঞ্চ তারা চাইছেন দলের আদি শিবিরের কোনও নেতার হাতে যাক বঙ্গ বিজেপির সভাপতির পদ। কিন্তু সেখানেও নির্দিষ্ট ভাবে কাউকে তুলে ধরতে পারেনি সঙ্ঘ।
সুকান্ত মজুমদার যে আর বঙ্গ বিজেপির সভাপতি থাকছেন না সেটা মোটামুটি বঙ্গ বিজেপির সব নেতাই মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর জায়গায় কে আসবেন তা নিয়েই জল্পনা চলছে। শুভেন্দু যে সেই পদের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তা বুঝতে পেরে দলের আদি নেতারা অনেকেই বসে যাচ্ছেন। অনেকে আবার চেষ্টা করছেন শুভেন্দুর পদপ্রাপ্তি ঠেকাতে। কেননা শুভেন্দুর হাতে বাংলায় দলের রাশ চলে গেলে কার্যত নব্য বিজেপি নেতাদের হাতেই গোটা দলের রাশ চলে যাবে। সেটা চাইছেন না আদি বিজেপির নেতারা। এরা এখন সকলেই চাইছেন সুকান্তকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে শুভেন্দু যেমন রাজ্যের বিরোধী দলনেতার ভূমিকা পালন করছেন তেমনই করুন। কিন্তু তারপরেও এই সমস্যার দ্রুত কোনও সমাধান মিলবে কিনা তা নিয়ে বিজেপির নেতারাই বহুবিভক্ত হয়ে গিয়েছেন। এখন আবার সুকান্তের জায়গায় রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর নাম ঘোরাফেরা করছে। কেননা দেবশ্রী সঙ্ঘের ঘরের মেয়ে। সেই সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও। এখন দেখার বিষয় দেবশ্রী কতখানি শুভেন্দুকে বেগ দিতে পারেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct