সূর্যের সীমানায় পৌঁছে গেছে নাসার নভোযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’। মঙ্গলের গিরিখাতে জল শনাক্ত করেছে রাশিয়া ও ইউরোপিয়ান নভোযান ‘এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটার’। নাসা জানিয়েছে, ২০২৫ সালে চাঁদে যাচ্ছে প্রথম নারী নভোচারী জেসিকা ওয়াটকিনস। আর্টেমিস-৩ অভিযানে তিনি চাঁদে অবতরণ করবেন। এর আগে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের এপ্রিলে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। চন্দ্র, সূর্য ও মঙ্গল গ্রহের এই অভিযান নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ আবদাল আহমদ। আজ শেষ কিস্তি।
মঙ্গলে জলের সন্ধান:
ইউরোপিয়ান স্পেস অ্যাজেন্সি ও রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস-এর যৌথ উদ্যোগে ২০১৬ সালে মঙ্গল অভিযানে পাঠানো হয়েছিল ‘এক্সোমার্স’ ট্রেস গ্যাস অরবিটার’ নামে একটি নভোযান। এই নভোযান মঙ্গলের মাটির উপরিভাগে হাইড্রোজেন মাপতে পারে। মঙ্গল গ্রহকে ঘিরে প্রদক্ষিণরত এ নভোযান ১৭ ডিসেম্বর যে তথ্য পাঠিয়েছে তা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মঙ্গল গ্রহের ভ্যালেস মেরিনারিস নামে অঞ্চলে জল শনাক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানী আলেক্সি মালাখভ বলেছেন, আমরা ভ্যালেস মেরিনারিন্সের একটি কেন্দ্রীয় অংশে জলে পরিপূর্ণ দেখতে পেয়েছি, যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। ভ্যালেন্স মেরিনারিস অঞ্চল হলো মঙ্গল গ্রহের একটি গিরিখাত। এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ গিরিখাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মতো একটি গিরিখাত। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নাসার পাঠানো মহাকাশযান পারসিভিয়ারেন্স মঙ্গল গ্রহের মাটি স্পর্শ করে। ছয় চাকার এই রোবটযান দুই বছর মঙ্গল গ্রহ চষে বেড়াবে। প্রাচীন হ্রদ এলাকার মাটিপাথরের মধ্যে খনন কাজ চালিয়ে অণুজীবের অস্তিত্ব সন্ধান করবে। ইতোমধ্যে রোবটযানটি মঙ্গল গ্রহে সঙ্গে নেয়া ছোট হেলিকপ্টার চালিয়েছে। মঙ্গলজয়ের জন্য বিজ্ঞানীরা ১৯৬৪ সাল থেকেই অভিযান চালিয়ে আসছেন। এ পর্যন্ত নাসার ৪০টি অভিযান গেছে মঙ্গল গ্রহে। ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পারসিভিয়ারেন্স মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করেই একটি সেলফি তুলে পাঠায়। নাসা ২০৩৩ মালে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহে গিয়ে থাকতে গেলে মানুষের পক্ষে মঙ্গল গ্রহই সুবিধাজনক। এ জন্যই বিজ্ঞানীরা মঙ্গলজয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
প্রথম যে মহিলা চাঁদে নামবেন
আগেই উল্লেখ করেছি, কৃষ্ণাঙ্গ নারী জেসিকা ওয়াটকিনসই হচ্ছেন ভাগ্যবতী প্রথম মহিলা যিনি ২০২৫ সালে চাঁদের মাটিতে নামতে যাচ্ছেন। নাসা জানিয়েছে ইতোমধ্যে এই নভোচারীকে ব্যাপক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাওয়াও হবে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলার রেকর্ড। জেসিকা একজন ভূতত্ত্ববিদ। তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক করার পর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ও লস অ্যাঞ্জেলস থেকে সৌরবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। ২০১৭ সালে তিনি নভোচারী হিসেবে নাসায় যোগ দেন এবং সাফল্য দেখান। সব ঠিক থাকলে ২০২৫ সালে ‘মুন মিশন’ আর্টেমিস-৩-এ করে প্রথম মহিলা হিসেবে তিনিই চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করবেন। তার সঙ্গে যে পুরুষ নভোচারী চাঁদে নামবেন তিনি হবেন চাঁদে নামা ১৩তম নভোচারী।
নাসার দ্বিতীয় দফা মুন মিশনের নাম দেয়া হয়েছে ‘আর্টেমিস অভিযান’। এর আগে নাসার মুন মিশনের নাম ছিল অ্যাপোলো অভিযান। অ্যাপোলো-১১ থেকে অ্যাপোলো ১৭ পর্যন্ত ছয়টি মিশনে ১২ জন নভোচারী চাঁদে নেমেছিলেন। ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৭ ছিল চাঁদে অবতরণের সর্বশেষ ‘মুন মিশন’।
এবার চাঁদে যাওয়ার জন্য আর্টেমিস মিশনের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ বিলিয়ন ডলার। নতুন চন্দ্রাভিযানে নভোচারীরা অ্যাপোলোর মতো একটি ক্যাপসুলে করে চাঁদে নামবেন। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ওরিয়ন’। ‘এসএলএস’ নামে একটি রকেটে করে ‘ওরিয়ন’কে উৎক্ষেপণ করা হবে। ইতোমধ্যে আর্টেমিস মিশনের ১৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ নভোচারী দলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে জেসিকা ওয়াটকিনসসহ বেশ কয়েকজন নারী রয়েছেন। তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। আর্টেমিস-১ উড়বে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। নাসার স্পেস লঞ্চ সিস্টেম বা এসএলএস রকেটে প্রথম মনুষ্যবিহীন ওরিয়নকে উড়াবে। চাঁদের চার পাশে এটি ঘুরবে। নাসা তার সিস্টেম কাজ করছে কিনা এর মাধ্যমে পরীক্ষা করবে। ২০২৪ সালে প্রথম নভোচারী নিয়ে ‘মহাকাশযাত্রা’ করবে আর্টেমিস-২ নভোযান। পরের পর্যায়ে ২০২৫ সালে আর্টেমিস-৩-এ নভোচারীরা চাঁদের বুকে নামবেন। (সমাপ্ত...)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct